বর্তমান সরকার পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ জোরালো ভূমিকা রাখলেও মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ব্যবহার ও বাণিজ্য চলছে আগের মতই।
উপজেলায় কোনো পলিথিন কারখানা না থাকলেও, বাইরে থেকে এনে দিনের পর দিন খুচরা বিক্রয় করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। প্রশাসনিক নজরদারির ঘাটতির সুযোগে এই অবৈধ ব্যবসা যেন অলিখিতভাবে বৈধতা পেয়েছে।
উপজেলার মাধবপুর সদর, মনতলা, ধর্মঘর, নোয়াপাড়া, জগদীশপুর, তেলিয়াপাড়া, ছাতিয়াইনসহ প্রায় প্রতিটি বাজারে মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ও মাছ-মাংস বিক্রেতারা নির্বিঘ্নে পাতলা পলিথিন ব্যবহার করছেন।
বিক্রেতাদের অনেকে বলেন, বিকল্প ব্যাগের দাম বেশি এবং অধিকাংশ ক্রেতা এখনো পলিথিনেই পণ্য নিতে অভ্যস্ত, তাই বাধ্য হয়েই তারা ব্যবহার করছেন।
২০০২ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, পলিথিন ব্যাগ বিক্রি, প্রদর্শন, মজুদ ও বাণিজ্যিক বিতরণ নিষিদ্ধ। আইন অমান্য করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। বাজারজাত করলেও রয়েছে ৬ মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা।
আইন আছে, বাস্তবায়ন দুর্বলঃ
সরকার গত বছর থেকে ধাপে ধাপে পলিথিন নিষিদ্ধকরণ কার্যক্রম চালু করে-প্রথমে সুপারশপ, পরে কাঁচাবাজারেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সেইসঙ্গে নিষিদ্ধ করা হয় পলিপ্রোপাইলিন জাতীয় শপিং ব্যাগ উৎপাদন, মজুদ, পরিবহন ও ব্যবহার।
তবে বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই মাধবপুরের বাজারে। একজন মুদি দোকানদার বলেন, “পলিথিন না দিলে অনেক সময় ক্রেতারা বিরক্ত হন। বাইরে থেকে কিছু লোক মাসে এক-দুইবার বড় ব্যাগে পলিথিন দিয়ে যায়। আমরা শুধু কিনে নিই, কোথা থেকে আসে জানি না।”
জনসচেতনতার অভাব স্পষ্টঃ
বাজারে আসা অনেক ক্রেতা বলেন, এখন আর বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে আসার অভ্যাস নেই। কারণ দোকানিরাই পলিথিনে পণ্য প্যাকেট করে হাতে ধরিয়ে দেন। এক সময় মাছ কিনতে ঝুড়ি, চাল-ডাল নিতে পাটের বস্তা কিংবা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার হতো—এখন তা পুরোপুরি বিলুপ্ত।
পরিবেশকর্মী রাহেলা বেগম বলেন, “সরকার আইন করেছে ঠিকই, কিন্তু বাস্তবায়ন দুর্বল। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেও দেখা যায় নর্দমায় জমে আছে ব্যবহৃত পলিথিন, যা পানি নিষ্কাশনে বাঁধা দিচ্ছে। এর ফলে ডেঙ্গুর মতো রোগও বাড়ছে।”
অভিযান আছে, ধারাবাহিকতা নেইঃ
মাধবপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হলেও তা একদিনের জন্য। অভিযানের পর কিছুদিন পলিথিন ব্যবহার কমে গেলেও আবার পুরোনো চিত্র ফিরে আসে।
পরিবেশবিদ আবিদ মালিক মনে করেন, “শুধু মোবাইল কোর্ট যথেষ্ট নয়; দরকার সচেতনতা বাড়ানো, সহজলভ্য পরিবেশবান্ধব বিকল্প নিশ্চিত করা এবং বাজার পর্যায়ে কঠোর নজরদারি। না হলে অবৈধ পলিথিন বাণিজ্য রোধ করা সম্ভব হবে না।”
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগঃ
বাপা হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, “পলিথিন ব্যবহারের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। এটি পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করে, বর্ষায় জলাবদ্ধতা তৈরি করে এবং জলজ প্রাণীর ক্ষতি করে। প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের সকলকেই সচেতন হতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।”
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে গনমাধ্যমে বলেন, “অবৈধ পলিথিন ব্যবসা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং জনগণের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবহারেও উৎসাহ জোগাতে হবে।”
প্রশাসনের বক্তব্যঃ
মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, “পলিথিন বন্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। যেহেতু এসব বাইরে থেকে আসে, তাই পুরো চক্র শনাক্তে কিছুটা সময় লাগছে। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।”