সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
ভালো থাকুক মায়ের ভাষা’ স্লোগান নিয়ে বিভিন্ন পেশার ১০ জন দৌড়বিদ ৫২ কিলোমিটার পথ দৌঁড়ে সিলেট থেকে সুনামগঞ্জে এসে পৌঁছেছেন। এখানে আসার পর সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়রসহ বিশিষ্টজনরা তাদের অভ্যর্থনা জানান। প্রথমবারের মতো এই আয়োজনে দৌড়বিদদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবীরা বাইসাইকেলে অংশ নেন। ভাষা শহীদদের সম্মান জানানোর এই আয়োজন দেখতে সুনামগঞ্জ পৌরসভা প্রাঙ্গণে অনেকেই ভিড় করেন।
কর্মসূচি শুরু হয় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে। ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সুনামগঞ্জ অভিমুখে দৌড় শুরু হয় সিলেট শহরতলির মোল্লারগাঁও এলাকা থেকে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন স্মরণে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ৫২ কিলোমিটার পথ নির্ধারণ করা ছিল আগে থেকেই। তরুণ দৌড়বিদ আমিনুল হক মাসুক, রোটারিয়ান সুমন মুনশি, মিজানুর রহমান, মো. রায়হান আলম তুহিন, শরীফ সোহাগ, মামুনুর রশিদ, এবাদ উল্লাহ, হিফজুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম জানু ও হাসান মাসুদ হিল্লোলের সমন্বয়ে দলটি দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জে প্রবেশ করে। পথে পথে যাত্রা বিরতিতে চলে ‘ভালো থাকুক মায়ের ভাষা’ প্রচারণা।
দৌড়বিদ মো. শরীফ আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের সম্মানে এই ৫২ কিলোমিটার দৌড়ের আয়োজন করেছি। প্রয়োজনের তাগিদে আমরা যত ভাষাই শিখি না কেন, মাতৃভাষাটা যেন সমৃদ্ধ ও সবার ঊর্ধে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মায়ের ভাষাকে যেন আমরা ভুলে না যাই।
দৌড়বিদ মো. রায়হান আলম তুহিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ভালো থাকুক মায়ের ভাষা’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ৫২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছি আমরা। বায়ান্নর চেতনা সবার মাঝে পৌঁছে দিতে এই উদ্যোগটি ২১ ফেব্রুয়ারি নিয়েছি। প্রতিটি মাতৃভাষা পৃথিবীতে শ্রদ্ধাভরে বেঁচে থাকুক এই চাওয়া আমাদের।
দৌড়বিদ এবাদ উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অনেক পর্যটন কেন্দ্রে দেখি ইংরেজি নাম ব্যবহার করা হয়। দোকানপাটের নাম ইংরেজিতে করা হয়। এসব দেখে অনেক কষ্ট লাগে। আমাদের মাতৃভাষায় যা প্রকাশ করতে পারি, তা অন্য ভাষায় করা সম্ভব নয়। আমরা ইংরেজি, জাপানিস ভাষায় পারদর্শী হতে পারি। তবে ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে যে ভাষায় কথা বলা শিখেছি, সে ভাষায় কথা বলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে এই তরুণদের দেখতে দুপুর থেকে সুনামগঞ্জ পৌরসভা চত্বরে ভিড় করেন সংস্কৃতিকর্মীসহ শহরের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেন, মাতৃভাষাকে সম্মান জানিয়ে তরুণদের এই আয়োজন আনন্দিত করেছে আমাদের।
জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাদের এই উদ্যোগে আমি অভিভূত হয়েছি। যে কাজটি আমরা কেউ করতে পারিনি, সেকাজটি ১০টি ছেলে করে দেখাল। আমরা একুশ চিনি, কিন্তু বায়ান্ন অনেকেই চিনি না। ওরা একুশ বায়ান্ন দুটোকে একত্র করে আমাদের সামনে তুলে ধরল।
জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই দিনটি আমাদের জন্য গৌরবের। বায়ান্নর জন্যেই আজকে সারা বিশ্ব বাংলা ভাষাকে চিনে। আমাদের মায়ের ভাষা সুরক্ষিত থাকুক।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, মায়ের ভাষা ব্যবহারের প্রচলন হলেই ভাষা শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। বায়ান্নকে আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করার জন্য ৫২ কিলোমিটার দৌড়ে তরুণারা সুনামগঞ্জ এসেছেন।
তথ্য ঃ ঢাকা পোস্ট