হবিগঞ্জ ০৬:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ঢাকায় জাতীয় মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে চুনারুঘাটে জামায়াতে ইসলামীর প্রচার মিছিল Logo জন্মদিন: একটি আত্ম-অন্বেষণের উপলক্ষ-শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন Logo মশিউর রহমান খান জুমেলের পৃষ্ঠপোষকতায় চা-বাগানের সবুজের বুকে ‘বিউটিফুল চুনারুঘাট’ এর নামফলকের উদ্বোধন Logo চুনারুঘাটের এ.জেট.টি মডেল একাডেমির জমজ দুই বোনের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন Logo প্রাথমিকের স্কুলে পবিত্র আল-কোরআনের ভাস্কর্য Logo সুনামগঞ্জ-১ আসনে কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের নেতা আসাদ মুরাদ তালুকদার প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় Logo আজমিরীগঞ্জে ইঁদুরের বিষ খেয়ে যুবকের আত্মহত্যা Logo চুনারুঘাটে বিএনপির দুই প্রয়াত নেতা রাজন ও জলিলের করব জিয়ারত করলেন অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম Logo মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিএনপি’র পতাকা তলে থেকেই মানুষের জন্য কাজ করতে চাই-সৈয়দ মোঃ ফয়সল Logo সিলেট রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ কোর্ট ইন্সপেক্টর হলেন হবিগঞ্জের শেখ নাজমুল হক

জন্মদিন: একটি আত্ম-অন্বেষণের উপলক্ষ-শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন

আমাদের সমাজে জন্মদিনকে ঘিরে থাকে নানা রকম আনুষ্ঠানিকতা, শুভেচ্ছা, উৎসব কিংবা আত্মপ্রচারমূলক আয়োজন করা হয়। কিন্তু এর বাইরেও রয়েছে এক গভীর উপলব্ধির দিক—নিজেকে জানার, নিজের অস্তিত্বের ভিত্তি অন্বেষণের, এবং এই জীবনের দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করার একটি উপযুক্ত সময়।

জন্মদিন তাই কেবল কেক কাটা কিংবা সামাজিক উদযাপনের দিন নয়, বরং একান্তভাবে নিজেকে প্রশ্ন করার দিন—আমি কে? কীভাবে আমি গড়ে উঠেছি? আমার চারপাশ ও আমার সত্ত্বার মধ্যে সম্পর্কটা কী?

আমাদের জন্ম কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি প্রকৃতি, পরিবার, সমাজ এবং সৃষ্টিকর্তার সম্মিলিত এক সৃষ্টি। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, মানব শরীর গঠিত হয়েছে পৃথিবীর মৌল উপাদান থেকে—অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন, মিনারেলস ও জল। আমরা যেসব খাবার গ্রহণ করি, তা থেকেই তৈরি হয় আমাদের রক্ত, হাড়, মস্তিষ্ক ও কোষ। অর্থাৎ, আমাদের দেহ পৃথিবীরই অংশ—ধার করা উপাদানে গঠিত।

শুধু দেহ নয়, আমাদের মন, ভাষা ও চিন্তাশক্তিও এসেছে অন্যের কাছ থেকে। শিশুকালে আমরা নিজে থেকে কোনো কিছু জানি না—মা–বাবা, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব, সমাজ ও প্রকৃতি আমাদের শেখায়। আমাদের ভাষা, আচরণ, মূল্যবোধ, চিন্তার ধারা—সবই শিক্ষা ও অনুকরণের ফসল। অর্থাৎ, আমাদের ব্যক্তি সত্ত্বার গঠনও আসলে এক সামাজিক নির্মাণ। এভাবে চিন্তা করলে নিজের বলে কিছুই থাকে না—সবই শেখা, প্রাপ্ত, ধার করা।

জীবনের প্রতিটি স্তরে আমরা কারও না কারও ঋণী। আমাদের অস্তিত্ব গড়ে ওঠে অনেকের অবদানে—কেউ ভালোবাসা দিয়ে, কেউ ত্যাগ স্বীকার করে, কেউ পথ দেখিয়ে, কেউ বিপদে পাশে দাঁড়িয়ে। জন্মের পর থেকে বেড়ে ওঠা, শিক্ষা লাভ, চিন্তার বিকাশ, মূল্যবোধ গঠন—সবই হয়েছে বহু মানুষের অংশগ্রহণে। কারও অবদান বড়, কারও ছোট—তবু প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ।

সুতরাং জন্মদিনে সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। জন্মের জন্য যেমন সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা, তেমনি বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপে যাঁরা অবদান রেখেছেন তাঁদের প্রতিও গভীর কৃতজ্ঞতা। এটা এক ধরনের আত্মজিজ্ঞাসা—আমি কী পেয়েছি, কে দিয়েছে, আমি কী ফিরিয়ে দিতে পারি? এই উপলব্ধি আমাদের করে তোলে নম্র, মানবিক এবং দায়িত্বশীল।

এই উপলব্ধি থেকেই জন্মদিন এক আত্মিক উপলক্ষ হয়ে উঠতে পারে। এই দিনটিতে আমরা বাহ্যিক উৎসবের বাইরে গিয়ে যদি অন্তরকে প্রশ্ন করি, যদি ভাবি—এই জীবন দিয়ে কী করবো, কীভাবে আরও মানুষের উপকারে আসবো, কীভাবে সমাজে একটি ছোট আলোর দীপ্তি হতে পারি—তাহলেই জন্মদিনের প্রকৃত তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া যায়।

এই উপলব্ধি নিয়েই আমার জন্মদিনের ভাবনা। যেন এই দিনটি কেবল একটি স্মরণ নয়, হয়ে ওঠে নিজেকে নতুনভাবে গড়ার প্রেরণা।

গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের অমর বাণী “Know thyself”—অর্থাৎ “নিজেকে জানো”—আমাদের শেখায়, সত্যিকার জ্ঞান ও আত্মউন্নতির শুরু হয় আত্মপরিচয় থেকে। জন্মদিনে আত্মবিশ্লেষণ, উপলব্ধি ও কৃতজ্ঞতার এই চর্চাই আমাদের সেই আত্মজ্ঞান ও আত্মউন্নতির পথে এক ধাপ এগিয়ে দেয়। আমি কে, কোথা থেকে এসেছি, কী পেয়েছি এবং কী দিতে চাই—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মধ্যেই নিহিত আছে জন্মদিনের প্রকৃত তাৎপর্য।

সাখাওয়াত হোসেন
শিক্ষক

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

খন্দকার আলাউদ্দিন

হ্যালো, আমি খন্দকার আলাউদ্দিন, আপনাদের চার পাশের সংবাদ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।

ঢাকায় জাতীয় মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে চুনারুঘাটে জামায়াতে ইসলামীর প্রচার মিছিল

জন্মদিন: একটি আত্ম-অন্বেষণের উপলক্ষ-শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন

আপডেট সময় ০৬:৩৪:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

আমাদের সমাজে জন্মদিনকে ঘিরে থাকে নানা রকম আনুষ্ঠানিকতা, শুভেচ্ছা, উৎসব কিংবা আত্মপ্রচারমূলক আয়োজন করা হয়। কিন্তু এর বাইরেও রয়েছে এক গভীর উপলব্ধির দিক—নিজেকে জানার, নিজের অস্তিত্বের ভিত্তি অন্বেষণের, এবং এই জীবনের দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করার একটি উপযুক্ত সময়।

জন্মদিন তাই কেবল কেক কাটা কিংবা সামাজিক উদযাপনের দিন নয়, বরং একান্তভাবে নিজেকে প্রশ্ন করার দিন—আমি কে? কীভাবে আমি গড়ে উঠেছি? আমার চারপাশ ও আমার সত্ত্বার মধ্যে সম্পর্কটা কী?

আমাদের জন্ম কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি প্রকৃতি, পরিবার, সমাজ এবং সৃষ্টিকর্তার সম্মিলিত এক সৃষ্টি। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, মানব শরীর গঠিত হয়েছে পৃথিবীর মৌল উপাদান থেকে—অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন, মিনারেলস ও জল। আমরা যেসব খাবার গ্রহণ করি, তা থেকেই তৈরি হয় আমাদের রক্ত, হাড়, মস্তিষ্ক ও কোষ। অর্থাৎ, আমাদের দেহ পৃথিবীরই অংশ—ধার করা উপাদানে গঠিত।

শুধু দেহ নয়, আমাদের মন, ভাষা ও চিন্তাশক্তিও এসেছে অন্যের কাছ থেকে। শিশুকালে আমরা নিজে থেকে কোনো কিছু জানি না—মা–বাবা, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব, সমাজ ও প্রকৃতি আমাদের শেখায়। আমাদের ভাষা, আচরণ, মূল্যবোধ, চিন্তার ধারা—সবই শিক্ষা ও অনুকরণের ফসল। অর্থাৎ, আমাদের ব্যক্তি সত্ত্বার গঠনও আসলে এক সামাজিক নির্মাণ। এভাবে চিন্তা করলে নিজের বলে কিছুই থাকে না—সবই শেখা, প্রাপ্ত, ধার করা।

জীবনের প্রতিটি স্তরে আমরা কারও না কারও ঋণী। আমাদের অস্তিত্ব গড়ে ওঠে অনেকের অবদানে—কেউ ভালোবাসা দিয়ে, কেউ ত্যাগ স্বীকার করে, কেউ পথ দেখিয়ে, কেউ বিপদে পাশে দাঁড়িয়ে। জন্মের পর থেকে বেড়ে ওঠা, শিক্ষা লাভ, চিন্তার বিকাশ, মূল্যবোধ গঠন—সবই হয়েছে বহু মানুষের অংশগ্রহণে। কারও অবদান বড়, কারও ছোট—তবু প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ।

সুতরাং জন্মদিনে সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। জন্মের জন্য যেমন সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা, তেমনি বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপে যাঁরা অবদান রেখেছেন তাঁদের প্রতিও গভীর কৃতজ্ঞতা। এটা এক ধরনের আত্মজিজ্ঞাসা—আমি কী পেয়েছি, কে দিয়েছে, আমি কী ফিরিয়ে দিতে পারি? এই উপলব্ধি আমাদের করে তোলে নম্র, মানবিক এবং দায়িত্বশীল।

এই উপলব্ধি থেকেই জন্মদিন এক আত্মিক উপলক্ষ হয়ে উঠতে পারে। এই দিনটিতে আমরা বাহ্যিক উৎসবের বাইরে গিয়ে যদি অন্তরকে প্রশ্ন করি, যদি ভাবি—এই জীবন দিয়ে কী করবো, কীভাবে আরও মানুষের উপকারে আসবো, কীভাবে সমাজে একটি ছোট আলোর দীপ্তি হতে পারি—তাহলেই জন্মদিনের প্রকৃত তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া যায়।

এই উপলব্ধি নিয়েই আমার জন্মদিনের ভাবনা। যেন এই দিনটি কেবল একটি স্মরণ নয়, হয়ে ওঠে নিজেকে নতুনভাবে গড়ার প্রেরণা।

গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের অমর বাণী “Know thyself”—অর্থাৎ “নিজেকে জানো”—আমাদের শেখায়, সত্যিকার জ্ঞান ও আত্মউন্নতির শুরু হয় আত্মপরিচয় থেকে। জন্মদিনে আত্মবিশ্লেষণ, উপলব্ধি ও কৃতজ্ঞতার এই চর্চাই আমাদের সেই আত্মজ্ঞান ও আত্মউন্নতির পথে এক ধাপ এগিয়ে দেয়। আমি কে, কোথা থেকে এসেছি, কী পেয়েছি এবং কী দিতে চাই—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মধ্যেই নিহিত আছে জন্মদিনের প্রকৃত তাৎপর্য।

সাখাওয়াত হোসেন
শিক্ষক