হবিগঞ্জ ১২:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo চুনারুঘাটে ৩ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলার উদ্বোধন Logo আগুনে পুড়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো: শিক্ষকের চোঁখে মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি Logo চুনারুঘাটে পারফরম্যান্স বেজড গ্র্যান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশন স্কিমের পুরস্কার বিতরণ Logo ঢাকায় জাতীয় মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে চুনারুঘাটে জামায়াতে ইসলামীর প্রচার মিছিল Logo জন্মদিন: একটি আত্ম-অন্বেষণের উপলক্ষ-শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন Logo মশিউর রহমান খান জুমেলের পৃষ্ঠপোষকতায় চা-বাগানের সবুজের বুকে ‘বিউটিফুল চুনারুঘাট’ এর নামফলকের উদ্বোধন Logo চুনারুঘাটের এ.জেট.টি মডেল একাডেমির জমজ দুই বোনের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন Logo প্রাথমিকের স্কুলে পবিত্র আল-কোরআনের ভাস্কর্য Logo সুনামগঞ্জ-১ আসনে কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের নেতা আসাদ মুরাদ তালুকদার প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় Logo আজমিরীগঞ্জে ইঁদুরের বিষ খেয়ে যুবকের আত্মহত্যা

আগুনে পুড়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো: শিক্ষকের চোঁখে মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

  • আলোকিত ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় ০৫:৩৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

 

সারাদেশ যেন আজ বাকরুদ্ধ। নিথর, স্তব্ধ, কান্নাভেজা বাতাসে ভাসছে শিশুদের আহাজারি। উত্তরা মাইলস্টোন কলেজের ক্যাম্পাসে বিমান দুর্ঘটনায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঝরে গেছে কতগুলো নিষ্পাপ প্রাণ।

সেই সব শিশু—যাদের বাবা-মা সকালে আদর করে নিজ হাতে তৈরি করে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন—আর কেউ ফিরলো না। যে প্রাণগুলো হাসিমুখে ক্লাসে ঢোকার কথা ছিল, তারা আজ নিথর হয়ে শুয়ে আছে দগ্ধ শরীরে। এই অমানবিক ঘটনার অভিঘাতে আমি ভেতর থেকে কেঁপে উঠেছি। মানুষ হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে, আর একজন পিতা হিসেবে হৃদয়ের গভীর থেকে অনুভব করছি সেই অসহ্য যন্ত্রণা।

গতকাল যখন ক্লাসে ঢুকলাম, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের চোখে জল ধরে রাখতে পারিনি। মনে হলো, এরা যদি হতো সেই শিশুরা! হঠাৎ মনে হতে লাগলো, আমার শিক্ষার্থীরাও তো কারো রাজকন্যা, কারো রাজপুত্র। যারা সকালবেলা ব্যাগ গুছিয়ে, চুল বেঁধে, খাবার খেয়ে বাবার হাত ধরে স্কুলে আসে। এই দুঃসংবাদ শোনার পর থেকে চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে সেই ছোট্ট মুখগুলো। নিষ্পাপ, স্বপ্নভরা চোখ—যাদের জীবন এতটা নির্মমভাবে থেমে গেল!

এই ঘটনায় এক শিক্ষিকা, যিনি ৮০ শতাংশ শরীর পুড়িয়ে ফেলে দিয়েছিলেন শুধু শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে, তিনি শুধু একজন শিক্ষক নন—তিনি একজন মা। এমন ভালোবাসা কেবল একজন প্রকৃত শিক্ষকের পক্ষেই সম্ভব। তিনি তাঁর জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর আত্মত্যাগ চিরদিন আমাদের হৃদয়ে থাকবে, আমাদের শিক্ষকতার আদর্শ হয়ে থাকবে।

একই সঙ্গে বিমানটির পাইলট—যিনি নিজের জীবন দিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হয়তো চেষ্টা করেছেন শিশুদের দিকে যেন বিমানটি বিধ্বস্ত না হয়, তাদের যেন কিছু না হয়—তিনিও আমাদের চোখে একজন সত্যিকারের নায়ক। তাঁর এই আত্মত্যাগ আমাদের মাথা নত করে দিয়েছে।

আমি শিক্ষক, আমি পিতা হিসেবে এই শোক হৃদয়ের গভীরতম স্তরে অনুভব করছি। ক্লাসে দাঁড়ালে আমি শুধু একজন শিক্ষক নই, আমি একজন পিতা হিসেবেও আমার শিক্ষার্থীদের দেখি। তারা আমার সন্তানের মতো, তাদের হাসি, তাদের দৌড়ঝাঁপ, তাদের স্বপ্নই তো আমার জীবনের অনুপ্রেরণা। আজ যখন জানলাম—শিক্ষকের চোখের সামনে তার শিক্ষার্থী আগুনে পুড়ে যাচ্ছিল, আর কিছুই করতে পারেননি—তখন মনে হলো, আমিও তো এমন পরিস্থিতিতে থাকলে পাথর হয়ে যেতাম! আমি কল্পনা করতে পারছি না, একজন শিক্ষক বা পিতা হয়ে কীভাবে সহ্য করা যায় এমন দগ্ধ দৃশ্য, এমন বেদনাবিধুর মুহূর্ত! তাঁর ব্যথা অনুভব করি আমার হৃদয়ে, আমার সন্তানের চোখে।

এই দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষক ইউসুফ স্যারের নিজের সন্তানও প্রাণ হারিয়েছে। নিজের সন্তান হারিয়ে অন্য সন্তানদের পাশে দাঁড়ানোর মতো ধৈর্য আর শক্তি হয়তো খুব কম মানুষের থাকে। কিন্তু তাঁরা সেই মানবিকতার উচ্চতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। একজন পিতা হিসেবে আমি তাঁর শোকের গভীরতা উপলব্ধি করতে পারি। সন্তানের নিথর শরীর দেখে বাবার বুক ফেটে কান্না বের হয়ে আসা—এই দৃশ্য কোনো ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়।

গতকাল সন্ধ্যায় একের পর এক বন্ধুদের ফোন করেছি। কারণ, আমার বহু পরিচিত শিক্ষক বন্ধু মাইলস্টোন কলেজে কর্মরত। যখন দেখি বাংলা বিভাগের প্রভাষক আমার বন্ধু মোজাহিদুল ইসলামের ফোন বন্ধ—তখন দম বন্ধ হয়ে আসছিল। পরে বন্ধু মিজানুর রহমান রুবেলের কাছ থেকে জানতে পারি, সে এবং আরও অনেকে বেঁচে আছেন। কিন্তু ততক্ষণে আমার ভেতরটা কেমন যেন অচেনা আতঙ্কে ঢেকে গেছে। কিছু সময়ের জন্য স্বস্তি পেলেও চোখের সামনে শুধু ভেসে উঠছিলো সেই শিশুদের আগুনে পুড়ে যাওয়া মুখ, তাদের কান্না, তাদের চিৎকার, এবং তাদের নিঃশেষ হয়ে যাওয়া।

এতো নিষ্ঠুরতা, এতো অমানবিক পরিণতি—আমরা আর কত দেখবো? তদন্ত হবে, দায়ী কে তা নির্ধারিত হবে, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত আসবে। কিন্তু যেসব পিতা-মাতা আজ সন্তান হারিয়েছেন—তাদের কোল কি আর পূর্ণ হবে? যে মায়েরা সকালে স্কুলে পাঠিয়ে সন্তানকে দুপুরে আদর করে ঘুম পাড়ানোর কথা ভাবছিলেন, তারা কি কখনো ঘুমাতে পারবেন? এই ক্ষতি কোনো কিছুতেই পূরণ হওয়ার নয়।

আজ সকালে চা খেতে গিয়ে গরমের পরশে জিভে একটু জ্বালাপোড়া লাগতেই হঠাৎ চোখে পানি এসে গিয়েছিল। কেন জানি মনে পড়লো—যে শিশুরা আগুনে পুড়ে শরীরের হাড় অব্দি দগ্ধ হয়ে গেছে, তারা কী যন্ত্রণা ভোগ করেছিল! তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি, ওয়াশরুমে গিয়ে নিঃশব্দে কেঁদেছি। এ কান্না শুধু আমার না—এ কান্না আজ সারা বাংলাদেশের মানুষের।

এই মর্মান্তিক ঘটনা যেন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো—আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোথায় ঘাটতি ছিল, কীভাবে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটলো, এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কী করতে হবে। কিন্তু তার আগে আমাদের উচিত এই শিশুদের সম্মানে একনিষ্ঠ শ্রদ্ধা নিবেদন, যারা আর কখনো স্কুলব্যাগ কাঁধে চড়াবে না, হোমওয়ার্ক করবে না, মা-বাবার কোলে ঘুমাবে না।

তারা এখন শুধুই স্মৃতি। কিন্তু সেই স্মৃতিগুলো যেন আমাদের জাগিয়ে তোলে, আমাদের মানুষ করে তোলে—যাতে আর কোনো রাজপুত্র, কোনো রাজকন্যাকে এভাবে আগুনে পুড়ে জীবন হারাতে না হয়।

সাখাওয়াত হোসেন
শিক্ষক

 

আপলোডকারীর তথ্য

খন্দকার আলাউদ্দিন

হ্যালো, আমি খন্দকার আলাউদ্দিন, আপনাদের চার পাশের সংবাদ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।
জনপ্রিয় সংবাদ

চুনারুঘাটে ৩ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলার উদ্বোধন

আগুনে পুড়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো: শিক্ষকের চোঁখে মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

আপডেট সময় ০৫:৩৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

 

সারাদেশ যেন আজ বাকরুদ্ধ। নিথর, স্তব্ধ, কান্নাভেজা বাতাসে ভাসছে শিশুদের আহাজারি। উত্তরা মাইলস্টোন কলেজের ক্যাম্পাসে বিমান দুর্ঘটনায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঝরে গেছে কতগুলো নিষ্পাপ প্রাণ।

সেই সব শিশু—যাদের বাবা-মা সকালে আদর করে নিজ হাতে তৈরি করে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন—আর কেউ ফিরলো না। যে প্রাণগুলো হাসিমুখে ক্লাসে ঢোকার কথা ছিল, তারা আজ নিথর হয়ে শুয়ে আছে দগ্ধ শরীরে। এই অমানবিক ঘটনার অভিঘাতে আমি ভেতর থেকে কেঁপে উঠেছি। মানুষ হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে, আর একজন পিতা হিসেবে হৃদয়ের গভীর থেকে অনুভব করছি সেই অসহ্য যন্ত্রণা।

গতকাল যখন ক্লাসে ঢুকলাম, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের চোখে জল ধরে রাখতে পারিনি। মনে হলো, এরা যদি হতো সেই শিশুরা! হঠাৎ মনে হতে লাগলো, আমার শিক্ষার্থীরাও তো কারো রাজকন্যা, কারো রাজপুত্র। যারা সকালবেলা ব্যাগ গুছিয়ে, চুল বেঁধে, খাবার খেয়ে বাবার হাত ধরে স্কুলে আসে। এই দুঃসংবাদ শোনার পর থেকে চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে সেই ছোট্ট মুখগুলো। নিষ্পাপ, স্বপ্নভরা চোখ—যাদের জীবন এতটা নির্মমভাবে থেমে গেল!

এই ঘটনায় এক শিক্ষিকা, যিনি ৮০ শতাংশ শরীর পুড়িয়ে ফেলে দিয়েছিলেন শুধু শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে, তিনি শুধু একজন শিক্ষক নন—তিনি একজন মা। এমন ভালোবাসা কেবল একজন প্রকৃত শিক্ষকের পক্ষেই সম্ভব। তিনি তাঁর জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর আত্মত্যাগ চিরদিন আমাদের হৃদয়ে থাকবে, আমাদের শিক্ষকতার আদর্শ হয়ে থাকবে।

একই সঙ্গে বিমানটির পাইলট—যিনি নিজের জীবন দিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হয়তো চেষ্টা করেছেন শিশুদের দিকে যেন বিমানটি বিধ্বস্ত না হয়, তাদের যেন কিছু না হয়—তিনিও আমাদের চোখে একজন সত্যিকারের নায়ক। তাঁর এই আত্মত্যাগ আমাদের মাথা নত করে দিয়েছে।

আমি শিক্ষক, আমি পিতা হিসেবে এই শোক হৃদয়ের গভীরতম স্তরে অনুভব করছি। ক্লাসে দাঁড়ালে আমি শুধু একজন শিক্ষক নই, আমি একজন পিতা হিসেবেও আমার শিক্ষার্থীদের দেখি। তারা আমার সন্তানের মতো, তাদের হাসি, তাদের দৌড়ঝাঁপ, তাদের স্বপ্নই তো আমার জীবনের অনুপ্রেরণা। আজ যখন জানলাম—শিক্ষকের চোখের সামনে তার শিক্ষার্থী আগুনে পুড়ে যাচ্ছিল, আর কিছুই করতে পারেননি—তখন মনে হলো, আমিও তো এমন পরিস্থিতিতে থাকলে পাথর হয়ে যেতাম! আমি কল্পনা করতে পারছি না, একজন শিক্ষক বা পিতা হয়ে কীভাবে সহ্য করা যায় এমন দগ্ধ দৃশ্য, এমন বেদনাবিধুর মুহূর্ত! তাঁর ব্যথা অনুভব করি আমার হৃদয়ে, আমার সন্তানের চোখে।

এই দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষক ইউসুফ স্যারের নিজের সন্তানও প্রাণ হারিয়েছে। নিজের সন্তান হারিয়ে অন্য সন্তানদের পাশে দাঁড়ানোর মতো ধৈর্য আর শক্তি হয়তো খুব কম মানুষের থাকে। কিন্তু তাঁরা সেই মানবিকতার উচ্চতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। একজন পিতা হিসেবে আমি তাঁর শোকের গভীরতা উপলব্ধি করতে পারি। সন্তানের নিথর শরীর দেখে বাবার বুক ফেটে কান্না বের হয়ে আসা—এই দৃশ্য কোনো ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়।

গতকাল সন্ধ্যায় একের পর এক বন্ধুদের ফোন করেছি। কারণ, আমার বহু পরিচিত শিক্ষক বন্ধু মাইলস্টোন কলেজে কর্মরত। যখন দেখি বাংলা বিভাগের প্রভাষক আমার বন্ধু মোজাহিদুল ইসলামের ফোন বন্ধ—তখন দম বন্ধ হয়ে আসছিল। পরে বন্ধু মিজানুর রহমান রুবেলের কাছ থেকে জানতে পারি, সে এবং আরও অনেকে বেঁচে আছেন। কিন্তু ততক্ষণে আমার ভেতরটা কেমন যেন অচেনা আতঙ্কে ঢেকে গেছে। কিছু সময়ের জন্য স্বস্তি পেলেও চোখের সামনে শুধু ভেসে উঠছিলো সেই শিশুদের আগুনে পুড়ে যাওয়া মুখ, তাদের কান্না, তাদের চিৎকার, এবং তাদের নিঃশেষ হয়ে যাওয়া।

এতো নিষ্ঠুরতা, এতো অমানবিক পরিণতি—আমরা আর কত দেখবো? তদন্ত হবে, দায়ী কে তা নির্ধারিত হবে, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত আসবে। কিন্তু যেসব পিতা-মাতা আজ সন্তান হারিয়েছেন—তাদের কোল কি আর পূর্ণ হবে? যে মায়েরা সকালে স্কুলে পাঠিয়ে সন্তানকে দুপুরে আদর করে ঘুম পাড়ানোর কথা ভাবছিলেন, তারা কি কখনো ঘুমাতে পারবেন? এই ক্ষতি কোনো কিছুতেই পূরণ হওয়ার নয়।

আজ সকালে চা খেতে গিয়ে গরমের পরশে জিভে একটু জ্বালাপোড়া লাগতেই হঠাৎ চোখে পানি এসে গিয়েছিল। কেন জানি মনে পড়লো—যে শিশুরা আগুনে পুড়ে শরীরের হাড় অব্দি দগ্ধ হয়ে গেছে, তারা কী যন্ত্রণা ভোগ করেছিল! তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি, ওয়াশরুমে গিয়ে নিঃশব্দে কেঁদেছি। এ কান্না শুধু আমার না—এ কান্না আজ সারা বাংলাদেশের মানুষের।

এই মর্মান্তিক ঘটনা যেন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো—আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোথায় ঘাটতি ছিল, কীভাবে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটলো, এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কী করতে হবে। কিন্তু তার আগে আমাদের উচিত এই শিশুদের সম্মানে একনিষ্ঠ শ্রদ্ধা নিবেদন, যারা আর কখনো স্কুলব্যাগ কাঁধে চড়াবে না, হোমওয়ার্ক করবে না, মা-বাবার কোলে ঘুমাবে না।

তারা এখন শুধুই স্মৃতি। কিন্তু সেই স্মৃতিগুলো যেন আমাদের জাগিয়ে তোলে, আমাদের মানুষ করে তোলে—যাতে আর কোনো রাজপুত্র, কোনো রাজকন্যাকে এভাবে আগুনে পুড়ে জীবন হারাতে না হয়।

সাখাওয়াত হোসেন
শিক্ষক