হবিগঞ্জ ০৫:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo আগামীকাল শায়েস্তাগঞ্জে খোয়াই এয়ার ট্রাভেলসের হজ্জ প্রশিক্ষণ কর্মশালা Logo চুনারুঘাটে ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খুন Logo মাধবপুরে এনজিও নিশান গ্রাহকের ২শ’ কোটি টাকা নিয়ে ৩ পরিচালক উধাও ! Logo চুনারুঘাটে জোরপূর্বক রাস্তা নিমার্ণের অভিযোগে আদালত ১৪৪ ধারা জারি Logo মাধবপুরে বর্ণিল আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে বাঙ্গালির সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ Logo মাধবপুরে বর্ণিল আয়োজনে বিএনপি’র বর্ষ বরণ Logo নববর্ষ বরণে চুনারুঘাট সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের থাকছে পিঠা উৎসব সহ নানা আয়োজন Logo চুনারুঘাটে রাজার বাজার সরকারি স্কুলের শিক্ষককে যুবদল নেতার হুমকি, থানায় অভিযোগ Logo শারীরিক শিক্ষাঃ প্রয়োজনীয়তা ও মূল্যায়ন-সিনিয়র শিক্ষক সাইফুর রহমান Logo সহকারি অধ্যাপক ডাঃ হিরন্ময় দাশ লন্ডন থেকে এম,আর,সি,পি ডিগ্রি অর্জন
গ্রাহকরা এখন দিশেহারা, কবে পাবেন টাকা জানেন না তারা।

মাধবপুরে এনজিও নিশান গ্রাহকের ২শ’ কোটি টাকা নিয়ে ৩ পরিচালক উধাও !

মোছাম্মদ হেলেনা বেগম, জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার নাঈম মিয়ার বাজার বর্তমানে স্বামীর চাকুরীর সুবাদে মাধবপুর পৌর শহরে বসবাস। প্রতি লাখে মাসে ২ হাজার টাকা মুনাফার খবর শুনে তেলিয়াপাড়া নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটিকে ১০ লাখ টাকা জমা করেছিলেন।
টাকা জমা রাখার প্রমাণ হিসেবে তাকে ৩শ টাকার নন জুডিশিয়াল ষ্টাম্প কর্জ দলিল সম্পাদন করে দেন নিশান। চুক্তিনামা অনুযায়ী মাসে মাসে মুনাফা পেতেন হেলেনা।
বিজয়নগর উপজেলার সাতবর্গ গ্রামের দ্বীপক রায় প্রতি লাখে মাসে ২ হাজার টাকা মুনাফার খবর শুনে তেলিয়াপাড়া নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটিকে ৪ লাখ টাকা জমা করেছিলেন।
একই কায়দায় টাকা জমা রাখার প্রমাণ হিসেবে তাকে ৩শ টাকার নন জুডিশিয়াল ষ্টাম্প কর্জ দলিল সম্পাদন করে দেন নিশান। প্রতি লাখে ২ হাজার কারো বেলায় আড়াই হাজার টাকা লাভের খবর শুনে হেলেনা ও দ্বীপকের মত প্রায় ছোট বড় ৩ হাজার বিভিন্ন পেশার লোকজন প্রায় দুই শত কোটি টাকার ওপড়ে জমা করেন।
৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর ডিসেম্বর মাস থেকে বিপত্তি দেখা দেয়। হঠাৎ করে নিশানে টাকার সংকট দেখা দেয়। নিশানে পালিয়ে যাচ্ছে খবর চাউর হলে হাজারো গ্রাহক টাকা ফেরত পেতে তেলিয়াপাড়া নিশান প্রধান কার্যালয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। অবরোদ্ধ করে রাখে নিশানের লোকজনকে।
২দিন অবরোদ্ধ থাকার পরে স্থানীয় ইউ/পি চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন চৌধুরী ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ বিন কাশেম, নিশানের মালিক পক্ষ ও আমানতকারিদের নিয়ে মিটিং’এ বসেন। ওই সভায় নিশানের পরিচালকরা আমানতকারিদের আশ্বাস দিয়েছিল মার্চ-এপ্রিল মাসে তারা গ্রাহকের জমা টাকা ফেরত দিবেন। কিন্তু এর মধ্যে নিশানের পরিচালক
সায়েম, সালমান, আমেনা বেগম পালিয়ে গেছে।
এখন শুধু নিশানের চেয়ারম্যান বেলাল মিয়া অফিসে আছেন। তবে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেনা। তাকে একা রেখে স্ত্রী সন্তান সবাই চলে গেছে।
নিশানের পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন-সারাদেশে তাদের ২৮ শাখা ছিল। প্রায় দেড় লাখ সমিতি সদস্য ছিল। কয়েক কোটি টাকা ঋন বিতরন করা হয়েছে। কিন্তু গত ডিসেম্বর মাস থেকে গোলযোগের কারনে সব গুলো শাখা সমিতি বন্ধ হয়ে গেছে। মাঠে কয়েক কোটি টাকা সমিতির সদস্যরা ফেরত দিচ্ছেনা।
এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় নিশানের গাছ বাগান, জমি, দালানকোঠা সহ অনেক সম্পদ রয়েছে। আমাদের ইচ্ছে ছিল তেলিয়াপাড়া নিশান কার্যালয় চালু থাকলে সম্পদ বিক্রি করে ধীরেধীরে মানুষের টাকা ফেরত দেব। কিন্তু বিশৃঙ্খলার কারনে এখন সহায় সম্পদ বিক্রি করা যাচ্ছেনা।
তবু আমরা চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের টাকা ফেরত দেওয়া। টাকা পরিবর্তে নিশানের সম্পদ কেউ কেউ নিজেদের দখলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এদিকে যতই দিন যাচ্ছে গ্রাহকরা টাকা জমা করে হতাশায ভুগছেন। অনেক গরীর মানুষ জমি ও সহায় সম্পদ বিক্রি টাকা জমা করেছিলেন। কিন্তু টাকা জমা করে এখন দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন।
আমানতকারিরা জানান-প্রায় ২ বছর ধরে নিশান মানুষের কাছ থেকে টাকা জমা নিয়েছে। বিনিময়ে প্রতি মাসে মুনাফা দিয়ে আসছে। এই প্রলোভনে পড়ে ধনী গরীব সবাই নিশানে টাকা জমা করেছে। কিন্তু শেষ বেলা এমন পরিস্থিতি হবে জানলে আমরা নিশানে টাকা কখনো জমা রাখতাম না।আজ টাকা জমা করে বিপদ কিনে এনেছি।
নুরুল ইসলাম নামে একজন আমানতকারি জানান,কোম্পানিতে জমি বিক্রি করে মুনাফার আশায় নিশানে টাকা জমা করেছিলেন।এখন তার মত শত শত লোক নিজের টাকা নিশানে জমা করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে।
এ ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ইসমাঈল হোসেন রাহি বলেন আমি নতুন যোগদান করেছি। এরই মধ্যে কয়েকবার নিশানের কার্যালয়ে গিয়ে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এবং তারা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে তারজন্য ৪টি পার্সপোট পুলিশ দিয়ে জব্দ করিয়েছি।
মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ বিন কাশেম বলেন-আমরা স্থানীয় প্রশাসন আমানত কারিদের টাকা ফেরত দিতে নিশানকে নির্দেশ দিয়েছি। তারপরও তারা টাকা ফেরত না দিলে আমানতকারিরা নিশানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। যাতে তারা টাকা ফেরত পান।
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

খন্দকার আলাউদ্দিন

হ্যালো, আমি খন্দকার আলাউদ্দিন, আপনাদের চার পাশের সংবাদ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।
জনপ্রিয় সংবাদ

আগামীকাল শায়েস্তাগঞ্জে খোয়াই এয়ার ট্রাভেলসের হজ্জ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

গ্রাহকরা এখন দিশেহারা, কবে পাবেন টাকা জানেন না তারা।

মাধবপুরে এনজিও নিশান গ্রাহকের ২শ’ কোটি টাকা নিয়ে ৩ পরিচালক উধাও !

আপডেট সময় ১১:১৭:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
মোছাম্মদ হেলেনা বেগম, জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার নাঈম মিয়ার বাজার বর্তমানে স্বামীর চাকুরীর সুবাদে মাধবপুর পৌর শহরে বসবাস। প্রতি লাখে মাসে ২ হাজার টাকা মুনাফার খবর শুনে তেলিয়াপাড়া নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটিকে ১০ লাখ টাকা জমা করেছিলেন।
টাকা জমা রাখার প্রমাণ হিসেবে তাকে ৩শ টাকার নন জুডিশিয়াল ষ্টাম্প কর্জ দলিল সম্পাদন করে দেন নিশান। চুক্তিনামা অনুযায়ী মাসে মাসে মুনাফা পেতেন হেলেনা।
বিজয়নগর উপজেলার সাতবর্গ গ্রামের দ্বীপক রায় প্রতি লাখে মাসে ২ হাজার টাকা মুনাফার খবর শুনে তেলিয়াপাড়া নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটিকে ৪ লাখ টাকা জমা করেছিলেন।
একই কায়দায় টাকা জমা রাখার প্রমাণ হিসেবে তাকে ৩শ টাকার নন জুডিশিয়াল ষ্টাম্প কর্জ দলিল সম্পাদন করে দেন নিশান। প্রতি লাখে ২ হাজার কারো বেলায় আড়াই হাজার টাকা লাভের খবর শুনে হেলেনা ও দ্বীপকের মত প্রায় ছোট বড় ৩ হাজার বিভিন্ন পেশার লোকজন প্রায় দুই শত কোটি টাকার ওপড়ে জমা করেন।
৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর ডিসেম্বর মাস থেকে বিপত্তি দেখা দেয়। হঠাৎ করে নিশানে টাকার সংকট দেখা দেয়। নিশানে পালিয়ে যাচ্ছে খবর চাউর হলে হাজারো গ্রাহক টাকা ফেরত পেতে তেলিয়াপাড়া নিশান প্রধান কার্যালয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। অবরোদ্ধ করে রাখে নিশানের লোকজনকে।
২দিন অবরোদ্ধ থাকার পরে স্থানীয় ইউ/পি চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন চৌধুরী ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ বিন কাশেম, নিশানের মালিক পক্ষ ও আমানতকারিদের নিয়ে মিটিং’এ বসেন। ওই সভায় নিশানের পরিচালকরা আমানতকারিদের আশ্বাস দিয়েছিল মার্চ-এপ্রিল মাসে তারা গ্রাহকের জমা টাকা ফেরত দিবেন। কিন্তু এর মধ্যে নিশানের পরিচালক
সায়েম, সালমান, আমেনা বেগম পালিয়ে গেছে।
এখন শুধু নিশানের চেয়ারম্যান বেলাল মিয়া অফিসে আছেন। তবে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেনা। তাকে একা রেখে স্ত্রী সন্তান সবাই চলে গেছে।
নিশানের পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন-সারাদেশে তাদের ২৮ শাখা ছিল। প্রায় দেড় লাখ সমিতি সদস্য ছিল। কয়েক কোটি টাকা ঋন বিতরন করা হয়েছে। কিন্তু গত ডিসেম্বর মাস থেকে গোলযোগের কারনে সব গুলো শাখা সমিতি বন্ধ হয়ে গেছে। মাঠে কয়েক কোটি টাকা সমিতির সদস্যরা ফেরত দিচ্ছেনা।
এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় নিশানের গাছ বাগান, জমি, দালানকোঠা সহ অনেক সম্পদ রয়েছে। আমাদের ইচ্ছে ছিল তেলিয়াপাড়া নিশান কার্যালয় চালু থাকলে সম্পদ বিক্রি করে ধীরেধীরে মানুষের টাকা ফেরত দেব। কিন্তু বিশৃঙ্খলার কারনে এখন সহায় সম্পদ বিক্রি করা যাচ্ছেনা।
তবু আমরা চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের টাকা ফেরত দেওয়া। টাকা পরিবর্তে নিশানের সম্পদ কেউ কেউ নিজেদের দখলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এদিকে যতই দিন যাচ্ছে গ্রাহকরা টাকা জমা করে হতাশায ভুগছেন। অনেক গরীর মানুষ জমি ও সহায় সম্পদ বিক্রি টাকা জমা করেছিলেন। কিন্তু টাকা জমা করে এখন দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন।
আমানতকারিরা জানান-প্রায় ২ বছর ধরে নিশান মানুষের কাছ থেকে টাকা জমা নিয়েছে। বিনিময়ে প্রতি মাসে মুনাফা দিয়ে আসছে। এই প্রলোভনে পড়ে ধনী গরীব সবাই নিশানে টাকা জমা করেছে। কিন্তু শেষ বেলা এমন পরিস্থিতি হবে জানলে আমরা নিশানে টাকা কখনো জমা রাখতাম না।আজ টাকা জমা করে বিপদ কিনে এনেছি।
নুরুল ইসলাম নামে একজন আমানতকারি জানান,কোম্পানিতে জমি বিক্রি করে মুনাফার আশায় নিশানে টাকা জমা করেছিলেন।এখন তার মত শত শত লোক নিজের টাকা নিশানে জমা করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে।
এ ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ইসমাঈল হোসেন রাহি বলেন আমি নতুন যোগদান করেছি। এরই মধ্যে কয়েকবার নিশানের কার্যালয়ে গিয়ে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এবং তারা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে তারজন্য ৪টি পার্সপোট পুলিশ দিয়ে জব্দ করিয়েছি।
মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ বিন কাশেম বলেন-আমরা স্থানীয় প্রশাসন আমানত কারিদের টাকা ফেরত দিতে নিশানকে নির্দেশ দিয়েছি। তারপরও তারা টাকা ফেরত না দিলে আমানতকারিরা নিশানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। যাতে তারা টাকা ফেরত পান।