হবিগঞ্জ শহরের চাঁদের হাসি হাসপাতালের গাইনী ডাক্তার হালিমা নাজনীন মিলির ভুল চিকিৎসায় এক গৃহবধুর জীবন বিপন্ন করার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল (২৯ নভেম্বর) বুধবার হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমল-১ আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন গৃহবধু মোছাঃ নাছিমা খাতুনের স্বামী চুনারুঘাট উপজেলার দেওরগাছ ইউনিয়নের কাচুয়া গ্রামের সৈয়দ সাইফুর রহমান শিবলু।
মামলায় ডাক্তার হালিমা নাজনীন মিলিসহ হাসপাতালের ম্যানেজার মোঃ আব্দুল কদ্দুছকে আসামী করা হয়। ডাক্তার হালিমা নাজনীন মিলি ডাঃ সোলাইমান মিয়ার স্ত্রী।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পিবিআই প্রেরণ করেছেন। মামলার বিবরণে জানাযায়, বাদী সৈয়দ সাইফুর রহমান শিবলুর স্ত্রী নাছিমা খাতুন গর্ভাবস্থায় প্রসব ব্যর্থা শুরু হলে চিকিৎসা করার জন্য গত ২১ সেপ্টম্বর চাঁদের হাসি হাসপাতালের ম্যানেজার মোঃ কুদ্দুছ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করিলে, তিনি দ্রুত চাঁদের হাসি হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন।
অতঃপর চাঁদের হাসিতে যাওয়ার পর হাসপাতালের ম্যানেজার কদ্দুছের পরামর্শ অনুযায়ী নাছিমাকে ভর্তি করা হয়।
ভর্তির পূর্বে গর্ভবতী মোছাঃ নাসিমা খাতুনের স্বামী সৈয়দ সাইফুর রহমান শিবলু চাঁদের হাসির ম্যানেজার মোঃ কুদ্দুস মিয়াকে একাধিকবার অবগত করেন তাহার স্ত্রীর সিজারের অপারেশন যেন ডাঃ ফেরদৌসি আরাকে দিয়ে করানো হয়।
অথচ চাঁদের হাসির ম্যানেজার মোঃ কুদ্দুছ মিয়া ডাঃ ফেরদৌসি আরার সহিত কোন রকম যোগাযোগ না করিয়া ভর্তির পরপরই মোছাঃ নাসিমা খাতুন কে ৫০৯ নাম্বার কেবিন ৫ম তলা হইতে সরাসরি ২য় তলার অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান।
অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে মোছাঃ নাসিমা খাতুনের স্বামী সৈয়দ সাইফুর রহমান শিবলুর অজান্তে স্যালাইন, ইনজেকশন পুশ করিয়ে নাসিমা খাতুনের গর্ভের পানি (যাহা বাচ্ছাকে সংরক্ষণ করে) ভাঙ্গার কাজ শুরু করেন।
অপারেশন থিয়েটারে ২ ঘন্টা রাখার পর এক পর্যায়ে পানি ভাঙ্গা শেষ হলে ওটি র ডাক্তার দেবাশীষ সৈয়দ সাইফুর রহমান শিবলুকে জানান, ডাক্তার ফেরদৌসি আরা আসিবেন না। আপনার স্ত্রীর অপারেশন করাতে হলে এক্ষুনি ডাক্তার হালিমা নাজনীন মিলির মাধ্যমে করাতে হবে।
তখন কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওটির ডাক্তার এবং নার্সগন সৈয়দ সাইফুর রহমান শিবলুর উপর ক্ষেপিয়া যান। তাখন তিনি ভয়ে হালিমা নাজনীন মিলির মাধ্যমে সিজার করাতে রাজি হন।
রাজি হবার পর হালিমা নাজনীন মিলি বলেন আপনার স্ত্রীর অবস্থা তেমন ভালো নয়, অপারেশনে রিস্ক রয়েছে। আমাকে দিয়ে অপারেশন করাতে হলে অতিরিক্ত চার্জ প্রদান করিতে হইবে।
অতঃপর স্ত্রীর আত্মচিৎকার শুনিয়া স্বামী সৈয়দ সাইফুর রহমান শিবলু রাজি হইয়া ডাক্তার হালিমা নাজনীন মিলির মাধ্যমে সিজারের অপারেশন করাতে বলেন। অতঃপর সিজার সম্পন্ন হয়।
নাসিমাকে কেবিনে দেওয়ার পরপরই সমস্থ শরীরে পানি চলে আসে। ডাক্তারের সহিত যোগাযোগ করিলে তিনি এটা কোন বিষয় না। তখন শিবলু বলেন ম্যাডাম আমাদের ভয় হইতেছে, এক পর্যায়ে হালিমা নাজনীন মিলি রাগান্বিত হইয়া বলে উঠেন ডাক্তার তোরা নাকি আমি..? তারপর নামিমার স্বামী সৈয়দ সাইফুর রহমান শিবলু ভয়ে পুনরায় কেবিনে চলে যান।
সিজারের ৩ দিন পর ২৪ সেপ্টেম্বর নাছিমাকে ডিসচার্জ দিলে তার বাবার বাসা শহরের মোহনপুরে নিয়ে আসা হয়। ডাক্তারের কথামতো ৪দিন পর নাছিমার সেলাই কাটানোর জন্যে চাঁদের হাসিতে নিয়ে গেলে ডাক্তার হালিমা নাজনীন মিলি বলেন আপনার স্ত্রীর সেলাইতে ইনফেকশন হইয়াছে, জরুরি ভিত্তিতে আবার ভর্তি করান।
ডাক্তারের পরামর্শক্রমে এপ্রেক্ষিতে আবারও নাছিমাকে চাঁদের হাসি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর সেখানে ডাক্তার মিলির পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করানো হয় এবং তার পেটের সেলাই খুলে আবার সেলাই করানো হয়।
নাছিমার ২য় বার অপারেশন করার পরও প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে দুর্বল হয়ে যান। তখন তাকে এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। এইভাবে ২৮/১০/২৩ হইতে ১২/১১/২৩ পর্যন্ত (১৫দিন) বিভিন্নরকম ইনজেকশন প্রয়োগ করেন.. যার মূল্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
ভর্তি থাকা অবস্থায় গত ০৮/১১/২৩ ইংরেজি নাসিমাকে প্রায় সুস্থ বলিয়া ডাক্তার হালিমা নাজনীন মিলি ২য় বার অয়াপারেশন করে পুনরায় সেলাই দেন। তারপর ১২/১১/২৩ তারিখে বাসায় চলে আসতে বলেন।
অতঃপর বাসায় নিয়ে আসা হয়। বাসায় নিয়ে আসার ৫ দিন পর নাসিমার সেলাইয়ের স্থান হইতে রক্তক্ষরণ হইতে থাকিলে তার স্বামী সৈয়দ সাইফুর রহমান শিবলু দ্রুত চাঁদের হাসি হাসপাতালে না নিয়া দ্যা ল্যাব এইড হাসপাতাল (হবিগঞ্জ) নিয়ে গিয়ে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসকে ঘোষকে দেখালে তিনি নাছিমাকে দ্রুত সিলেটে রেফার করেন।
নাছিমা চাঁদের হাসি হাসপাতালে ভর্তি থাকাবস্থায় হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম হাসাপাতালে গিয়ে তাকে দেখে আসেন। সিলেট ইবনেসিা হাসপাতালের ভর্তি করানোর পর কর্মরত চিকিৎসক প্রফেসর ডাঃ জমিলা খাতুনের তত্ত্ববধানে নাছিমাকে ৩দিন চিকিৎসা করানো হয়।
পরবর্তীতে ডাঃ জমিলা খাতুন তাকে সার্জারী বিভাগে রেফার করেন। সার্জারী বিভাগের প্রফেসর ডাঃ জামাল আহমেদ চৌধুরী নাছিমাকে ৩দিন পর্যবেক্ষণে রাখেন এবং রোগী নাছিমার স্বজনদের জানান পূর্বের ক্রটিপূর্ণ পর পর ২/৩ বার অপারেশনের কারনে এই জঠিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
সিটিস্ক্যান হউল এভডোমেন পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে নিয়ে জানান.. পূর্বে ভিতরে ইনফেকশন রেখেই সেলাই দেওয়া হইয়াছে, যার ধরুন আপনার স্ত্রীর ক্ষত স্থানে আবারো অপারেশন করা লাগবে।
পরবর্তীতে ডাঃ জামাল আহমেদ চৌধুরী তাকে ২৫/১০/২৩ ইংরেজিতে আবারও অপারেশন করেন। এতে নাছিমা কিছুটা সুস্থ হন। নাসিমা আপাতত ইবনেসিনার ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।
কয়েকবার অপারেশনসহ নাছিমার পরিবার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ডাক্তার হালিমা নাজনীন মিলির ভুল চিকিৎসায় শিবলুর স্ত্রী নাছিমার জীবন বিপন্ন করায় ডাক্তার হালিমা নাজনীন মিলির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ববস্থা নেওয়ার দাবিতে আদালতের স্মরণাপন্ন হন সৈয়দ সাইফুর রহমান শিবলু।