মাধবপুর উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের পাটুলী গ্রামে চুরি, ছিনতাই ও মাদকাসক্তির কারণে জনজীবন চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়েছে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি ও যানবাহন পর্যন্ত কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না চোর ও অপরাধীদের হাত থেকে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, এলাকাবাসী দিনরাত কাটাচ্ছেন আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায়।
এমনকি আসন্ন ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করেও গ্রামবাসীর মধ্যে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে। অপরাধের লাগামছাড়া বিস্তারের কারণে অনেকেই কোরবানির পশু কেনা বা বাড়িতে রাখার সাহস পাচ্ছেন না।
গরু চুরির আশঙ্কায় মানুষ ঈদের মতো ধর্মীয় আনন্দেও আতঙ্কে রয়েছেন। গত ২ জুন রাতে পাটুলী গ্রামের তিনটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা ঘটে।
• পাটুলি হযরত শাহজালাল জামে মসজিদ থেকে চুরি হয় একটি আইপিএস
• পাটুলি চকদারবাড়ি জামে মসজিদ থেকে চুরি হয় মাইকের মেশিন
• পাটুলি ফোরকানিয়া মক্তব থেকেও চুরি হয় একটি মাইক
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই উঠে আসছে একের পর এক চুরি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ। গত ১০ দিনের মধ্যে অন্তত ১০টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ভুক্তভোগীদের তালিকা অনুযায়ী চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনার বিবরণ:
১. ছন্দু মিয়া – মোটর চুরি ২. উজ্জ্বল মিয়া – মোটর চুরি ৩. সোহা মিয়া – নগদ ৩০ হাজার টাকা চুরি ৪. আলম মিয়া – মোবাইল ফোন চুরি ৫. ইসমাইল মিয়া – দুটি মোবাইল ও ১,০০০ টাকা চুরি ৬. সেলিম মিয়া – সেলাই মেশিন চুরি (মূল্য: ৫৮,০০০ টাকা) ৭. লন্ডন প্রবাসী মুহাম্মদ আলামিন ভূঁইয়া – মোটর চুরি ৮. সুমন মিয়া – সিএনজি চুরি ৯. পাটুলি শাহজালাল মসজিদ – আইপিএস চুরি ১০. পাটুলি চকদারবাড়ি মসজিদ – মাইক চুরি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পাটুলীর একটি শ্রেণির যুবক বর্তমানে মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা রাতের আঁধারে সংঘবদ্ধ হয়ে এসব অপরাধ সংঘটিত করছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এমন চুরির ঘটনা শুধু আইনশৃঙ্খলার অবনতিই নয়, বরং ধর্মীয় অনুভূতিতেও চরম আঘাত।
এই পরিস্থিতিতে পাটুলীর মানুষ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। অভিভাবকরা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, প্রবীণরা শঙ্কিত, তরুণরা হতাশ।
এ প্রসঙ্গে লন্ডন প্রবাসী পাটুলী হযরত শাহজালাল জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আলামিন ভূঁইয়া বলেন, “পবিত্র মসজিদ ও মক্তবও আজ নিরাপদ নয়—এটা সমাজের জন্য বড় অশনিসংকেত। মাদক ও চুরি বন্ধে প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।” প্রশাসনের দ্রুত সহযোগিতা কামনা করি।
এ প্রসঙ্গে ইতালি প্রবাসী ও পাটুলী চকদারবাড়ী জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি জনাব সাজ্জাদ হোসেন চকদার বলেন, “বর্তমানে পাটুলী গ্রামে যে চুরি, ছিনতাই ও মাদকের বিস্তার ঘটছে—তা শুধু ব্যক্তি নয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ পুরো সমাজ ব্যবস্থার জন্য একটি গভীর হুমকি।
পবিত্র মসজিদ পর্যন্ত আজ অপরাধীদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ, অবিলম্বে এই পরিস্থিতি রুখতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
এলাকাবাসীর দাবিসমূহ:
• প্রতিটি চুরির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত
• মাদক কারবারিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা
• ধর্মীয় ও জনসাধারণের স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
• গ্রামে রাত্রীকালীন পুলিশি টহল চালু করা
• সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও নিরাপত্তা জোরদার
গ্রামবাসীর মতে, এখনই যদি প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তারা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অবিলম্বে চুরি-ছিনতাই ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান।