আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে ২ লাখ ইভিএম কিনতে চায় কমিশন । কমপক্ষে ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের লক্ষ্যে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একেকটি ইভিএম কিনতেই খরচ হবে ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। শুধুমাত্র নতুন ইভিএম কিনতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা।
নির্বাচন কমিশনের আলোচিত ইভিএম কেনার প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রোগ্রামিং কমিটির বিশেষ সভার সুপারিশ এবং পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদনের প্রেক্ষিতে এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মূল্যায়নে কিছু বিষয় বিবেচনার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
আজ রোববার (১৩ নভেম্বর) পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান ফাতেমা স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য দেখা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বৃদ্ধি ও টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্প মূল্যায়নে বেশকিছু বিষয় বিবেচনার জন্য বলা হয়েছে।
প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় অর্থবিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে অর্থায়নের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হব। প্রকল্প ব্যয় নিবিড় পর্যালোচনা করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট খাতগুলো সঠিক রেখে পুরো ব্যয় প্রয়োজনে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত ৪টি জিপ এবং ৫৩৪টি ডাবল কেবিন পিকআপ ক্রয়ের পরিবর্তে গাড়িগুলো ভাড়া করা যায় কি না তা বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ডিপিপির ক্রয় পরিকল্পনা অংশের ক্রয় পদ্ধতি এবং ধরণ কলামে অর্পিত ক্রয়কার্য এবং ডিপিএপের পরিবর্তে ওটিএম উল্লেখ করতে হবে।
ডিপিপিতে প্রস্তাবিত প্রশাসনিক ব্যয়, পেশাগত সেবা ও সম্মানি, মেরামত ও সংরক্ষণ, ভবন স্থাপনা, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামদি এবং ভূমি অধিগ্রহণ খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ যৌক্তিকভাবে পুনর্নির্ধারিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এগুলো সংশোধেন করে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার আগেই কমিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে। এরপরই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় নির্বাহী পরিষদের একনেক এডিপিভুক্ত হলে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হবে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে কমপক্ষে ১৫০টি আসনে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করতে চায় ইসি। এ লক্ষ্যে গত ১৯ অক্টোবর ইভিএম প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় নির্বাচন কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রকল্পের ডিপিপি থেকে জানা গেছে, প্রতিটি ইভিএমের মূল্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকার বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ভ্যাটসহ অন্যান্য শুল্ক। সবমিলিয়ে প্রতি সেট ইভিএমের দাম ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। প্রকল্পে ইভিএম কিনতেই যাবে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
প্রকল্পে ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ইসির ১০টি অঞ্চলে ওয়্যারহাউস নির্মাণ করা হবে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭৭ কোটি টাকা। ইভিএম পরিবহনের জন্য প্রতিটি থানা ও উপজেলা অফিসে একটি করে গাড়ি কেনার জন্য অর্থ ধরা হয়েছে। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় ইভিএম ব্যবস্থাপনার জন্য বিপুলসংখ্যক জনবল ও প্রশিক্ষণ ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটিতে ৫৩৪টি শুধু ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই খাতে ব্যয় হবে ২৬২ কোটি টাকা।
এছাড়া প্রকল্প প্রস্তাবে দেখা যায়, আগের কেনা দেড় লাখ ইভিএমের ভাড়া বাবদ ৩৬ কোটি টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি। নতুন করে ৩০ জেলায় ইভিএম সংরক্ষণ করতে গেলে প্রতি বছর গড়ে ৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলেও জানানো হয়েছে।