একাদশ শেষ করে দ্বাদশের ছাত্র তারিফ। কেলগেরী শহরের ডিফেন বেকার হাই স্কুলের মেধাবী এই তরুণ মেধা, মননশীলতা, নেতৃত্ব গুণ আর কমিউনিটি সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য সিটি’স রাইজিং স্টার ‘টপ টুয়েন্টি আন্ডার টোয়েন্টি’ এওয়ার্ড পেলেন।
ছবিঃ আলবার্টা প্রভিন্সের লেফটেন্যান্ট গভর্নর সালমা লাকানির সাথে পিতামাতা সহ তারিফ মাহমুদ।
কেলগেরী শহরের বৃহত্তম কমিউনিটি সেন্টার রকি রিজ শ্যান হোমস কমিউনিটি হলে সিটি ক্রাউনস অথরিটি, এভিনিউ কর্তৃপক্ষ ও ওয়াইএমসিএ তত্ত্বাবধানে সরকারি, বেসরকারি ও শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে আজ ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় এক জাঁকজমকপূর্ণ অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সে আজ টপ টুয়েন্টি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন।
তারিফ মাহমুদ প্রথম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুণ হিসেবে এই সম্মানজনক এওয়ার্ড পেলেন। লেফটেন্যান্ট গভর্নর সালমা লাকানি, সাবেক মেয়র ও এনডিপি নেতা নাহিদ ন্যান্সি, ডেপুটি মেয়র সহ উপস্থিত সুধীজন এওয়ার্ড প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
ছবিঃ লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সাথে টপ টুয়েন্টি আন্ডার টুয়েন্টি রাইজিং স্টারস অ্যান্ড চেঞ্জ মেকারস
বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র হিসেবে বরাবরের মতো সব সময়ই সে অনার রোল অর্জন করে। ব্যতিক্রম তাঁর সৃষ্টিশীলতা ও নেতৃত্ব গুণ। অভিবাসী পরিবারের সন্তান হিসেবে তার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা, তাঁকে স্বেচ্ছাসেবী হতে অনুপ্রেরণা যোগায়।
৮ম শ্রেণি থেকে জড়িয়ে যায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে। কেলগেরী পাবলিক লাইব্রেরি, এমপিসি ফাউন্ডেশন, কিংকুড়া কমিউনিটি এসোসিয়েশন, ক্যান্সার ফাউন্ডেশন, পজিটিভ ম্যাচ রেচকিউ ফাউন্ডেশন, সানফ্লাওয়ার এডুকেশন সহ বিভিন্ন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের নানামূখী কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত করে।
সিটি অব কেলগেরী পরিচালিত পাবলিক লাইব্রেরি মেইক ইট মেসি, সায়েন্স, রিডিং ও কোডিং এক্সপার্ট হিসেবে তাঁকে থিংক ট্যাংকের সদস্য মনোনিত করে। এমপিসি ফাউন্ডেশন ফিচারড ভলান্টিয়ার হিসেবে তাঁকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনে প্রকাশ করে। মেধা আর স্বেচ্ছাসেবার স্বীকৃতি হিসেবে নির্বাচিত হয়, হরেসিও কানাডিয়ান স্কলার।
এসব অর্জন তাঁর কর্ম স্পৃহাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ৮ম শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় ‘The 21st of February : An Inspirational Day for Our Generation’ এবং দশম শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় ‘A Man of Inspiration and Welfare’ নামক দুটি গবেষণা প্রবন্ধে বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ, মমত্ববোধ ও পারিবারিক বন্ধনের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়।
কোভিড কালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ছুটির কারণে তরুণ স্কুল শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে পিছিয়ে পড়া ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতি তাঁকে উদ্বিগ্ন করে। ‘অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা শিক্ষার অন্তরায় হতে পারে না’ – এ ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে সহপাঠীদের নিয়ে গড়ে তুলে অলাভজনক উন্নয়ন সংস্থা এডুকেশন কালেকটিভ ওয়াইওয়াইসি।
এ সংগঠনের পয়তাল্লিশ জন অবৈতনিক শিক্ষক শহর জুড়ে পাবলিক লাইব্রেরীর সাথে সমন্বয় করে বিনামূল্যে অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শিক্ষা সহায়তা প্রদান করে।
চিকিৎসা বিজ্ঞান ও গবেষণা তাঁর আগ্রহের বিষয়। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়,ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টা ও কেলগেরি সহ সব কয়টি খ্যাত নামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সে ইতিমধ্যে এডভান্স ভর্তির অফার পেয়েছে।
ইতিমধ্যে বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া তাঁকে ফুল ব্রাইটস স্কলার হিসেবে বৃত্তির অফার দিয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে এ গৌরব জনক এওয়ার্ডের আওতায় সে চার বছর বিনামূল্যে থাকা খাওয়া ও সকল শিক্ষা খরচের সুযোগ সুবিধা পাবেন। বাংলাদেশী টাকায় এ বৃত্তির অর্থের পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা।
তারিফ মাহমুদ হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মাদারগড়া গ্রামের সন্তান। তাঁর পিতা কানাডা প্রবাসী মাহমুদ হাসান একজন সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক, লেখক ও কলামিস্ট।
মাতা জাহিদা আফরিন একজন চাকুরীজীবি। তাঁর পিতামহ মরহুম মোঃ রজব আলী ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক এবং মাতামহ সবুতারা বেগম উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে দীর্ঘদিন সরকার মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এখন আমেরিকায় অবসর জীবন যাপন করছেন। তাঁর পরিবার ও নিকট আত্মীয়দের অনেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অভিবাসী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।