ভারতের পাহাড় থেকে নেমে এসেছে ধলাই নদ। এ নদের জিরোপয়েন্ট এলাকা। ওপারে ভারতের পাহাড়। এপারে নদের বুকজুড়ে বিছানা বিছিয়েছে সফেদ পাথর। ছোট আর বড় বড় পাথর; যত দূর চোখ যায়, দেখা মেলে সফেদ পাথর। এ সফেদ পাথরের আকর্ষণে সেখানে ছুটছেন পর্যটকরা।
বলছি সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের ধলাই নদের জিরোপয়েন্ট এলাকার কথা। ঘাট এলাকা থেকে ধলাই নদের স্বচ্ছ নীলজল পাড়ি দিয়ে যেতে হয় সেখানে। এ জন্য রয়েছে ইঞ্জিন নৌকার ব্যবস্থাও। শহর থেকে বেশি দূরত্বের নয়; আবার যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো, যে কারণে সব ঋতুতে এখানে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে।
এ বছর শুষ্ক মৌসুমে ভিড় একটু বেশিই। পর্যটকরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুম হওয়াতে সিলেটের গোয়াইনঘাটের বিছানাকান্দিতে পানি নেই, যে কারণে ভোলাগঞ্জ জিরোপয়েন্টের দিকে ছুটছেন তারা। এই স্থানে পানি কম থাকায় সৌন্দর্য আরও বেড়েছে বলে মন্তব্য তাদের।
সফেদ পাথরের কারণে এই এলাকা পরিচিতি পেয়েছে ‘সাদাপাথর’ নামে। ওপারের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা ধলাই নদের স্বচ্ছ জলে সফেদ পাথর ঝলমল করে। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটার। নদের পাশেই রয়েছে ভারত সীমান্তের কাঁটাতার। কাঁটাতারের ওপারের সড়ক দিয়ে বাংলাদেশে পাথর নিয়ে আসা ট্রাকের সারিও দেখা মেলে সেখান থেকে। হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে
সম্প্রতি মানবিক স্বেচ্ছাসেবী সংঘটন স্বচ্ছতা গ্রুপ তাদের সদস্যদের নিয়ে সিলেট বেড়াতে এসে হযরত শাহজালাল(রহঃ) মাজার শেষে সাদা পাথরের দেশ ভ্রমন করে । পূর্ব প্রস্তুুতি ও তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনায় ভোলাগঞ্জ ‘সাদাপাথর’ ছিল সারা দিন সাদাপাথর ঘুরে দেখেন তারা।
স্বচ্ছতা পরিবারের অন্যতম সদস্য উপজেলা পোষ্ট মাষ্টার আঃ আহাদ সুমন বলেন , ‘‘আমি দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছি। আমাদের সিলেটে এমন সুন্দর সুন্দর স্থানগুলো পড়ে আছে। এক কথায় এই এলাকাটা অসাধারণ।’’
সাদাপাথরে না এলে সিলেটে আসার অপূর্ণতা থেকে যেত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সাদাপাথর এলাকায় কথা হয় কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক রিপন আহমদের সঙ্গে। তিনি জানান, পানি-পাথরের এমন খেলা উপভোগ করতে তিনি ওই এলাকায় এসেছেন। এর আগে তিনি জাফলং, বিছানাকান্দি গিয়েছিলেন। বিছানাকান্দিতে পানি নেই; এজন্য ভালো লাগেনি। পরে সিলেটে থাকা এক বন্ধুর কাছ থেকে শুনে তিনি সাদাপাথর দেখতে এসেছেন। খুব ভালো লাগছে।
কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, সত্যিই মনোরম এ সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ তারা। তবে, রাতে থাকার ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার আগে ফিরতে হবে জেনে কিছুটা মন খারাপ তাদের। পর্যটকদের সুবির্ধাতে সেখানে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি তাদের।
সাদাপাথর এলাকায় বেড়াতে যাওয়া দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে বিশেষ বিশেষ দিবসে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ এবং বিজিবির টিমও মোতায়েন থাকে।
কোম্পানীগঞ্জ থানায় পুলিশের বিশেষ শাখায় দায়িত্বরত( এসআই) আঃ আলীম এর সাথে দেখা হয় ভোলাগঞ্জ খেয়াঘাটে তিনি জানান, সাদা পাথরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রচুর পর্যটক এসেছেন। তাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকায় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে, ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে নেমে আসা ধলাই নদীর সঙ্গে প্রতিবছর বর্ষাকালে নেমে আসে প্রচুর পাথর। ধলাই নদীর তলদেশেও রয়েছে পাথরের বিপুল মজুদ।
দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জের উৎসমুখ সাদাপাথরে সবসময় ভারত থেকে স্বচ্ছ পানি নেমে আসে। এ পানি নীল ও ঠান্ডা। যা পর্যটকদের বিমোহিত করে। এ দৃশ্য দেখতে সেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটক ভিড় করেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।