হবিগঞ্জ ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo দৈনিক আমাদের দেশ পাঠক ফোরামের পক্ষে নির্বাসিত সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান কে সংবর্ধনা Logo সাংবাদিকতায় যদি সফলতা চান, তাহলে দিন শেষে ভাবেন-সিনিয়র সাংবাদিক আলমগীর হোসেন Logo গণবিপ্লবের মাধ্যমে আমরা মুক্ত হয়েছি- নির্বাসিত সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান Logo সহকারি শিক্ষিকা সেলিনা আক্তার মাধবপুর উপজেলা শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা নির্বাচিত Logo ডাক্তারের ছেলে শ্রেণির ছাত্র জিয়াদ নিখোঁজ Logo একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ও হবিগঞ্জ-৪ এর রাজনৈতিক ঐতিহ্য Logo চুনারুঘাটে সাংবাদিক নোমান কে প্রাণনাশের হুমকি, থানায় জিডি Logo চুনারুঘাটে প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি ও হত্যা মামলার আসামি আব্দুল হক কুটি র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার Logo ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার সময়ে প্রতিটি খুন-গুমের বিচার বাংলার মাটিতে হবে-মামুনুল হক Logo দেশকে অস্থির করার জন্য স্বৈরাচারের দোসরা নানামুখী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, সৈয়দ মোঃ শাহজাহান

সুতাং নদীতে শিল্প কারখানার দূষিত বর্জ্যে পানি দূষিত হয়ে অস্তিত্ব-সংকটে

সুতাং নদী হবিগঞ্জ জেলার পুরাতন একটি নদী। এক সময় এই নদীর পানি দিয়ে মানুষ ফসলের কাজে ব্যবহার করত। বর্তমানে নদীর পানি দেখতে নীল রঙের মত। যে সুতাং নদী এক সময়ের আশীর্বাদ ছিল। আর এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত দখল-দূষণের কারণে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এতে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আবার নদীর পানি শরীরে লাগলে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় নদীপাড়ের মানুষের জীবন হুমকির মুখে।

শিগগিরই নদীদূষণ বন্ধ না হলে তিন উপজেলার তিন শতাধিক গ্রামের লোকজনের স্বাভাবিক জীবনযাপন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী নদীটি। ফলে জৌলুশ হারাচ্ছে সুতাং নদী। নদীর বিষাক্ত পানির দুর্গন্ধে আশপাশের তিনটি উপজেলার বাসিন্দাদের জীবন নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে।

সুতাং নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর লাখাই উপজেলার কালনী নদীতে পড়েছে।
রাজ্য: ত্রিপুরা
দৈর্ঘ্য: ৮২ কিলোমিটার (৫১ মাইল)

অতীতে নদী থেকে সুস্বাদু মাছ সংগ্রহ করে জেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। পাশাপাশি নদীর পানি আশপাশের জমিতে কৃষিকাজে ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে বিভিন্ন শিল্পকারখানার দূষিত বর্জ্যে নদীর পানি দূষিত হয়ে মাছের অস্তিত্ব-সংকটে পড়েছে।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উচাইল গ্রামের বাসিন্দা ৭০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুর রহিম জানান, একসময়ে সুতাং নদীতে সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত বর্তমানে শিল্পবর্জ্যের কারণে এখন পানি দূষিত হয়ে মাছ নেই। বর্জ্যের বিষাক্ত গ্যাসে মাছ মরে যাচ্ছে। নদীর পানি শরীরে লাগলে বিভিন্ন ধরনের রোগ-জীবাণু ছড়ায়। দূষিত পানির গন্ধে এলাকায় বসবাস করার দুরূহ হয়ে পড়ছে।

স্থানীয় সাধুর বাজার এলাকার ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, পানি এতটাই দূষিত হয়েছে যে নদীর পানি ধানের জমিতে দিলে চারা মরে যায়। এখানকার গরু, ছাগল নদীতে নামানো হলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মরে যায়।

স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক গুলনাহার বেগম জানান, নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। আমরা স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় নাখ-মুখ ঢেকে আসতে হয়। গন্ধে এলাকায় থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ দ্রুত এর সমাধান করবে।

স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা হারিসুল হক জানান, সুতাং নদী একসময় মাছে ভরপুর ছিল। নদী থেকে মাছ ধরে এলাকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু বর্তমানে বিষাক্ত বর্জ্যে পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বারবার প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হলেও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে যাবে।

স্থানীয় ভাদগরি গ্রামের মফিজুল হক জানান, সুতাং নদীর পানি বিষাক্ত হওয়ার কারণে আমরা নদী পার হয়ে আসা-যাওয়া করায় ডাক্তারের কাছে প্রতিনিয়ত সিরিয়াল ধরতে হয়। পানি শরীরে লাগলেই বিভিন্ন স্থানে পচন আর খোস ফোটে। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিষয়টি নজরে আনার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি।

হবিগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, এক দশক থেকে হবিগঞ্জে শিল্পদূষণ শুরু হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন নদী দূষণের চরম আকার ধারণ করেছে। শতাধিক কলকারখানার বর্জ্যে নদী ও জলাশয়ে নিক্ষেপের ফলে দিন দিন নদীদূষণ বেড়েই চলছে। বিশেষ করে সুতাং নদী এখন বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, দূষণের কারণে সুতাং নদী ঘেরা লোকজন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এলাকার পরিবেশ ও মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে এই নদীদূষণ রক্ষা করা না হলে সাধারণ লোকজন উত্তরণের পথ খুঁজে পাবে না।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মোতাচ্ছিরুল ইসলাম জানান, এলাকায় বসবাসে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। শিল্পবর্জ্যের কারণে দিন দিন পানি তার স্বাস্থ্য হারিয়েছে। এতে মানুষের নানা রোগবালাই হচ্ছে। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে বিষয়টি বারবার প্রশাসনের নজরে আনার চেষ্টা করেছি।

তিনি আরও বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই এলাকার পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। আমি প্রশাসনসহ পরিবেশ সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুতাং নদীটিকে বাঁচাতে হবে।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, নদী দূষণকারীদের মার্চ মাস পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি কলকারখানার দূষিত বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

খন্দকার আলাউদ্দিন

হ্যালো, আমি খন্দকার আলাউদ্দিন, আপনাদের চারিপাশের সংবাদ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।
জনপ্রিয় সংবাদ

দৈনিক আমাদের দেশ পাঠক ফোরামের পক্ষে নির্বাসিত সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান কে সংবর্ধনা

সুতাং নদীতে শিল্প কারখানার দূষিত বর্জ্যে পানি দূষিত হয়ে অস্তিত্ব-সংকটে

আপডেট সময় ০৫:১৬:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ মার্চ ২০২২

সুতাং নদী হবিগঞ্জ জেলার পুরাতন একটি নদী। এক সময় এই নদীর পানি দিয়ে মানুষ ফসলের কাজে ব্যবহার করত। বর্তমানে নদীর পানি দেখতে নীল রঙের মত। যে সুতাং নদী এক সময়ের আশীর্বাদ ছিল। আর এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত দখল-দূষণের কারণে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এতে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আবার নদীর পানি শরীরে লাগলে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় নদীপাড়ের মানুষের জীবন হুমকির মুখে।

শিগগিরই নদীদূষণ বন্ধ না হলে তিন উপজেলার তিন শতাধিক গ্রামের লোকজনের স্বাভাবিক জীবনযাপন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী নদীটি। ফলে জৌলুশ হারাচ্ছে সুতাং নদী। নদীর বিষাক্ত পানির দুর্গন্ধে আশপাশের তিনটি উপজেলার বাসিন্দাদের জীবন নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে।

সুতাং নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর লাখাই উপজেলার কালনী নদীতে পড়েছে।
রাজ্য: ত্রিপুরা
দৈর্ঘ্য: ৮২ কিলোমিটার (৫১ মাইল)

অতীতে নদী থেকে সুস্বাদু মাছ সংগ্রহ করে জেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। পাশাপাশি নদীর পানি আশপাশের জমিতে কৃষিকাজে ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে বিভিন্ন শিল্পকারখানার দূষিত বর্জ্যে নদীর পানি দূষিত হয়ে মাছের অস্তিত্ব-সংকটে পড়েছে।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উচাইল গ্রামের বাসিন্দা ৭০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুর রহিম জানান, একসময়ে সুতাং নদীতে সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত বর্তমানে শিল্পবর্জ্যের কারণে এখন পানি দূষিত হয়ে মাছ নেই। বর্জ্যের বিষাক্ত গ্যাসে মাছ মরে যাচ্ছে। নদীর পানি শরীরে লাগলে বিভিন্ন ধরনের রোগ-জীবাণু ছড়ায়। দূষিত পানির গন্ধে এলাকায় বসবাস করার দুরূহ হয়ে পড়ছে।

স্থানীয় সাধুর বাজার এলাকার ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, পানি এতটাই দূষিত হয়েছে যে নদীর পানি ধানের জমিতে দিলে চারা মরে যায়। এখানকার গরু, ছাগল নদীতে নামানো হলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মরে যায়।

স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক গুলনাহার বেগম জানান, নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। আমরা স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় নাখ-মুখ ঢেকে আসতে হয়। গন্ধে এলাকায় থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ দ্রুত এর সমাধান করবে।

স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা হারিসুল হক জানান, সুতাং নদী একসময় মাছে ভরপুর ছিল। নদী থেকে মাছ ধরে এলাকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু বর্তমানে বিষাক্ত বর্জ্যে পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বারবার প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হলেও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে যাবে।

স্থানীয় ভাদগরি গ্রামের মফিজুল হক জানান, সুতাং নদীর পানি বিষাক্ত হওয়ার কারণে আমরা নদী পার হয়ে আসা-যাওয়া করায় ডাক্তারের কাছে প্রতিনিয়ত সিরিয়াল ধরতে হয়। পানি শরীরে লাগলেই বিভিন্ন স্থানে পচন আর খোস ফোটে। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিষয়টি নজরে আনার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি।

হবিগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, এক দশক থেকে হবিগঞ্জে শিল্পদূষণ শুরু হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন নদী দূষণের চরম আকার ধারণ করেছে। শতাধিক কলকারখানার বর্জ্যে নদী ও জলাশয়ে নিক্ষেপের ফলে দিন দিন নদীদূষণ বেড়েই চলছে। বিশেষ করে সুতাং নদী এখন বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, দূষণের কারণে সুতাং নদী ঘেরা লোকজন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এলাকার পরিবেশ ও মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে এই নদীদূষণ রক্ষা করা না হলে সাধারণ লোকজন উত্তরণের পথ খুঁজে পাবে না।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মোতাচ্ছিরুল ইসলাম জানান, এলাকায় বসবাসে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। শিল্পবর্জ্যের কারণে দিন দিন পানি তার স্বাস্থ্য হারিয়েছে। এতে মানুষের নানা রোগবালাই হচ্ছে। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে বিষয়টি বারবার প্রশাসনের নজরে আনার চেষ্টা করেছি।

তিনি আরও বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই এলাকার পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। আমি প্রশাসনসহ পরিবেশ সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুতাং নদীটিকে বাঁচাতে হবে।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, নদী দূষণকারীদের মার্চ মাস পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি কলকারখানার দূষিত বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।