সদ্য প্রয়াত বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমানের স্মরনে নাগরিক শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১১ মার্চ) বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে সুনামগঞ্জ সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ (বালুর মাঠে) সুনামগঞ্জ পৌরসভার আয়োজনে দেশের বরেণ্য সাংবাদিক সুনামগঞ্জের কৃতি সন্তান পীর হাবিবুর রহমানের নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে দেশের রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সাংবাদিক ব্যাক্তিবর্গ সহ নানান শ্রেণী পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
শোকসভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতাপাঠ করা হয়।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্তের সভাপতিত্বে শোক সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, পীর হাবিব একজন লড়াকু সৈনিক তিনি সুনামগঞ্জ জেলাকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার সাথে পরিচয় ২০১০ সালে। তিনি আমাকে সুনামগঞ্জের লোক হিসেবে অনেক সহযোগিতা করেছেন। তার প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে আ.লীগের যোগ দেয়ার পর নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেন।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেন, যখনি পীর হাবিব লিখতো আমার সম্পর্কে লিখত। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত লেখা লিখেছে তার চেয়ে আমার সম্পর্কেও কম লিখে নাই। অনেক কিছুই লিখেছে। আমি যে ভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম হাবিবও আমার বোন শেখ হাসিনার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল। আমি লম্বা মানুষ বোকা, বঙ্গবন্ধু আমার চেয়ে দুই ইঞ্চি লম্বা ছিলেন তিনিও বোকা ছিলেন তবে গরীবের অধিকার আদায়ে সব সময় সচেষ্ট ছিলেন। যদি বঙ্গবন্ধু বোকা না হতেন তা হলে ঘাতকের হাতে এ ভাবে ১৯৭৫ সালে তাকে জীবন দিতে হত না। তিনি মানুষকে অন্ধের মত বিশ্বাস করতেন আর সেটাই তার জন্য কাল হয়েছে। তিনি সব সময় মানুষের সাথে বোকার মত আচরণ করতেন মানুষকে খুব বেশি ভালবাসতেন।
শামীম ওসমানের বড় ভাই নাসিম বিয়ের রাতেই আমার কাছে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আন্দোলন করার জন্য কেউ তাকে স্বীকার করে না।
আমার সবার কথা মনে থাকে সুনামগঞ্জ-সিলেট থেকে অনেক মানুষ যেত। সবার কথা আমার মনে আছে। আব্দুজ জহুর, মতিউর রহমান, সুলতান মনসুর, শাহ আজিজ এরা আমার কাছে যেত।
যুদ্ধে আমার কোনও অবদান নেই। আমি মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে ছিলাম শুধু মা বোনের ইজ্জত রক্ষার জন্য। আমি আমার মায়ের সন্তান।
আজ কাল বিয়ে করে যৌবন কালে মাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বৃদ্ধাশ্রমে। এ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
আমি আজ হাবিবের জন্য দোয়া করতে এসেছি আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমি জীবনে যদি কোনও ভাল কাজ করে থাকি তা হলে সেই কাজের উছিলায় যেন হাবীবকে আল্লাহ জান্নাত দান করেন।
জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, প্রয়াত পীর হাবিবের জন্মের সাথে বাংলাদেশ মিল আছে উনি স্বাধীন বাংলাদেশের কলম যোদ্ধা। অনেকেই বলেন সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ থাকতে হয় আমি এ কথা মানি না। পক্ষ থাকতে হবে সেটা বাংলাদেশের পক্ষে । পীর হাবিব কারো সাথে কখনই আপোষ করেন নি। তিনি সাস্প্রদায়িকতা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন। সে দুই হাত খুলে লিখতও। অনেকের হাতে কলম আছে কিন্তু সবাই লিখতে পারে না। কিন্তু পীর হাবিবের লেখনির মাধ্যমে আগুনের ফুলিঙ্গ বের হত।
খুব কম লোক রয়েছে যারা সমালোচনা সহ্য করতে পারে।
পীর হাবিবের সাংবাদিকতায় বিভিন্নতা রয়েছে তিনি গল্পের ঢং এ লিখতেন। উনি গল্পের ঢং এ লিখতেন বলেই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেত।
রাজনৈতিক দলের ছায়ায় গুন্ডামি যায় না। আমার সাথে রাতে ফোনে অনেক কথা হত তিনি বলতেন আর কত দিন দেশে জঙ্গিবাদ থাকবে অপশক্তির লোকরা আর কত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিবে। পীর হাবিব ছিল একজন দেশ প্রেমিক সাংবাদিক সে সব সময় চাইত বাংলাদেশ যাতে সুস্থ রাজনীতি ফিরে আসে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমার তেমন কোনও যোগাযোগ ছিল না। তার সাথে আমার পরিচয় হয় ২০০৯ সালে। তিনি একটি টেলিভিশনে টকশো করতেন সেখান থেকে আমার পরিচয় হয়। তবে তার লেখার সাথে অনেক পূর্বেই পরিচয় ছিল। সে একজন ভাল নীতিবান মানুষ। তার সুনামগঞ্জের পৈত্রিক বাড়ি দেখলেই বোঝা যায়।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, পীর হাবিব সাধারণ মানুষের পক্ষে লিখেছেন, আমি চলে গেলে তেমন কিছু হবে না। কিন্তু পীর হাবিব মারা যাওয়ায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। বাংলাদেশের মানচিত্রের আকাশে শকুন ঘুরছে তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। কিন্তু লেখকরা চলে যাচ্ছেন কে লিখবে শেখ হাসিনার কথা। পীর ভাই যেমন লিখেছে তেমনি আমরাও যেন সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতে পারি। পীর হাবিব শুধু সুনামগঞ্জের না সারা পৃথিবীর।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন,সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ -১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, রাকসুর সাবেক ভিপি রাগিব আহসান মুন্না, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, ডিবিসি’র সম্পাদক প্রণব সাহা, জেলা প্রশাসক মো.জাহাঙ্গীর হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, যুক্তরাজ্য আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান ফারুক,সাবেক ফুটবলার কায়সার হামিদ প্রমুখ।
পরিবারের পক্ষে থেকে পীর হাবিবুর রহমানের বড় ভাই অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান পীর, ছোট ভাই সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, মেয়ে রাইসা নাজ চন্দ্রস্মিতা কৃতজ্ঞতা মূলক বক্তব্য রাখেন।
প্রয়াত পীর হাবিবুর রহমানের ছেলে আহনাফ ফাহমিন অন্তর বলেন, আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনারা যে আমার বাবাকে এ ভাবে ভালবাসেন তা আমিও কখনই বুঝতে পারি নাই। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই আমার বাবা যদি কোনও ভুল করে থাকেন তা হলে মাফ করে দিবেন।
এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ নাগরিক শোকসভায় উপস্থিত ছিলেন।