হবিগঞ্জ ০৬:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo মাধবপুরে আগুনে পুড়ে ছাই হলো মিলনের বেঁচে থাকার অবলম্বন Logo চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাচনে ১৭ প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র দাখিল Logo সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন Logo বিদ্যুৎপৃষ্ঠে নিহতের পরিবারের পাশে ব্যারিস্টার সুমন-এমপি Logo টেকনাফের ব্যাবসায়ী ৫শ’ পিছ ইয়াবাসহ চুনারুঘাটে গ্রেপ্তার Logo চুনারুঘাটে তীব্র দাবদাহে সুপেয় পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ Logo শেখ হাসিনার আধুনিক চিন্তা ধারায় বদলে গেল কৃষিখাত, ব্যারিস্টার সুমন Logo কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক তাদের কাম কি? মানুষের টাকা মেরে দেয়া, ব্যারিস্টার সুমন Logo বাহুবলে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন, জরিমানা ৫০ হাজার টাকা Logo বাহুবলে রাতের আধারে প্রবাসীর ১৮ টি ফসলি গাছ কর্তন, লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি

চাল থেকে সিন্ডিকেটের ‘কালো ছায়া’ নামছেই না

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:৫৫:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ মার্চ ২০২২
  • ২৬৬ বার পড়া হয়েছে

কৃষককে নায্যমূল্য দেয়ার উদ্দেশে আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু এই চক্রটি। ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা। যেন চাল থেকে সিন্ডিকেটের ‘কালো ছায়া’ নামছেই না। সুযোগ পেলেই দাম বাড়িয়ে দেয় একটি সিন্ডিকেট চক্র। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি।

জানা গেছে, কৃষকের উৎপাদিত ধানের নায্যমূল্য নিশ্চিত করতে দুই মাস ধরে চাল আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে আমদানিকৃত চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন আমিদানিকারকরা। গত এক সপ্তাহে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়েছে তারা।

চালের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে দুই মাস ধরে চাল আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন আমদানিকারকরা। আগে আমদানি করা চাল এখন বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। প্রচুর মজুদ থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানিকৃত ৫০ কেজির বস্তা চালের দাম ৩০০ টাকা বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা।

বাংলাদেশ মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কেএম লায়েক আলী বলেন, নতুন মৌসুমে ধান-চাল বাজারে এলেও সরবরাহ বাড়েনি। আমদানিকৃত ভারতীয় চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের বাজারে দামে প্রভাব পড়েছে। জ্বালানি তেলসহ ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।

সরকার চাল আমদানির জন্য আমদানিকারদের সর্বশেষ অনুমতি দেয় চলতি বছরের ২৫ আগস্ট। সে সময় ৪০০ আমদানিকারককে সাড়ে ১৬ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এসব চাল আমদানি শেষ করতে বলা হয়। ৩১ অক্টোবর থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়। আমদানি বন্ধের আগে প্রচুর চাল আমদানি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে চট্টগ্রাম জেলায় অন্তত এক হাজার ৮৮ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমনও ছিল। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এই ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হতে পারে। এর প্রভাব চাল বাজারে পড়েছে।

চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ থাকায় ভারতীয় চালের সরবরাহ স্বাভাবিকভাবেই কম। সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা।

চাক্তাই চাল বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী শান্ত দাশগুপ্ত বলেন, আমন মৌসুমের চাল আসার পর দাম কিছুটা কমার কথা। কিন্তু সরকার ধান-চাল সংগ্রহের জন্য চালের বাড়তি দাম নির্ধারণ করেছে। কৃষকদের ক্ষেত্রে কেজিতে এক টাকা বাড়ালেও মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহে কেজিতে তিন টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে খোলা বাজারে কৃষকের চালের সরবরাহ কমে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে। আবার আশুগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহের চাল ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা দেশের বাজারগুলো পর্যবেক্ষণ করে আড়তদারদের খবর দেন। তারা অবস্থা বুঝে দাম বাড়ান। আবার সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। আমন মৌসুমকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। গত ৮ নভেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমানারা খাতুন স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহ নীতিমালা অনুসারে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তার ধারাবাহিকতায় মিলারদের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে আমন ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য কেজিপ্রতি ২৭ টাকা, চালের মূল্য ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এই দামে সরকার তিন লাখ টন ধান ও পাঁচ লাখ টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। পাহাড়তলী চাল বাজারের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা মেসার্স কর্ণফুলী রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, চিকন চালের সরবরাহ কম। বৈশাখ মাস এলে দেশি চিকন চাল বাজারে আসে। ভারতীয় চালেরও সরবরাহ কম। এসব কারণে দাম বেড়েছে। আবার মাসের শুরুতে যখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন হয়, তখন চালের আড়তদাররা ইচ্ছা করে দাম বাড়ান। সব ধরনের চাল আগের চেয়ে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে আমাদের। এ জন্য আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছি।

এরই মধ্যে আমন মৌসুমের চালও বাজারে এসে গেছে। যেখানে চালের দাম কমে আসার কথা সেখানে উল্টো বেড়েছে। ফলে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গিয়ে নাগরিকদের বাড়তি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। এ জন্য পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমদানিকারক সিন্ডিকেটের কারসাজি, মোকাম মালিকদের সরবরাহ কমিয়ে দেয়া ও তেলের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন। গত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে চাল সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে চাল সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনিতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিজনিত কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চালের বাজার কিছুটা বাড়তি ছিল। কিন্তু নতুন মৌসুমের চাল সরবরাহ শুরু হলে বাজারে সংকট দেখানো হচ্ছে মোকামগুলো থেকে। যার কারণে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে ভারতীয় চালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

চালের সরবরাহ কমের কারণ জানতে চাইলে চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, সংকটের কথা অনেকে জানেন; কিন্তু এগুলো প্রমাণ করতে হলে দেশের আড়তগুলোতে খোঁজ নিতে হবে।

যদিও লায়েক আলী বলছেন, নতুন মৌসুমের ধান-চাল বাজারে এলেও সরবরাহ বাড়েনি। তবে তিনি আমদানিকৃত চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশি বাজারেও দাম বেড়েছে বলে স্বীকার করেছেন। চালের বাজারে জ্বালানি তেলসহ ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

খাতুনগঞ্জের চাক্তাই বাণিজ্যিক এলাকার বিভিন্ন আড়তে দেখা গেছে, স্বর্ণা সেদ্ধ চালের বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ১০০ টাকা, মিনিকেট সেদ্ধ মানভেদে ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা, পাইজাম সেদ্ধ চাল ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা, কাজলতা সেদ্ধ ২০০ টাকা বেড়ে দুই হাজার ৭০০ টাকা, জিরাশাইল সেদ্ধ ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ১০০ টাকা। আতপ চালের মধ্যে মিনিকেট বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৭০০ টাকা, বেতি সেদ্ধ ২০০ টাকা বেড়ে মানভেদে দুই হাজার ৩০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা, ইরি আতপ ১৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বস্তাপ্রতি এক হাজার ৯৫০ টাকা, কাটারি আতপ ৩০০ টাকা বেড়ে তিন হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে পাঁচ-ছয় টাকা।

সূত্র: নয়া শতাব্দী

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

খন্দকার আলাউদ্দিন

হ্যালো, আমি খন্দকার আলাউদ্দিন, আপনাদের চারিপাশের সংবাদ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।

মাধবপুরে আগুনে পুড়ে ছাই হলো মিলনের বেঁচে থাকার অবলম্বন

চাল থেকে সিন্ডিকেটের ‘কালো ছায়া’ নামছেই না

আপডেট সময় ০৫:৫৫:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ মার্চ ২০২২

কৃষককে নায্যমূল্য দেয়ার উদ্দেশে আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু এই চক্রটি। ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা। যেন চাল থেকে সিন্ডিকেটের ‘কালো ছায়া’ নামছেই না। সুযোগ পেলেই দাম বাড়িয়ে দেয় একটি সিন্ডিকেট চক্র। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি।

জানা গেছে, কৃষকের উৎপাদিত ধানের নায্যমূল্য নিশ্চিত করতে দুই মাস ধরে চাল আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে আমদানিকৃত চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন আমিদানিকারকরা। গত এক সপ্তাহে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়েছে তারা।

চালের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে দুই মাস ধরে চাল আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন আমদানিকারকরা। আগে আমদানি করা চাল এখন বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। প্রচুর মজুদ থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানিকৃত ৫০ কেজির বস্তা চালের দাম ৩০০ টাকা বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা।

বাংলাদেশ মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কেএম লায়েক আলী বলেন, নতুন মৌসুমে ধান-চাল বাজারে এলেও সরবরাহ বাড়েনি। আমদানিকৃত ভারতীয় চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের বাজারে দামে প্রভাব পড়েছে। জ্বালানি তেলসহ ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।

সরকার চাল আমদানির জন্য আমদানিকারদের সর্বশেষ অনুমতি দেয় চলতি বছরের ২৫ আগস্ট। সে সময় ৪০০ আমদানিকারককে সাড়ে ১৬ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এসব চাল আমদানি শেষ করতে বলা হয়। ৩১ অক্টোবর থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়। আমদানি বন্ধের আগে প্রচুর চাল আমদানি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে চট্টগ্রাম জেলায় অন্তত এক হাজার ৮৮ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমনও ছিল। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এই ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হতে পারে। এর প্রভাব চাল বাজারে পড়েছে।

চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ থাকায় ভারতীয় চালের সরবরাহ স্বাভাবিকভাবেই কম। সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা।

চাক্তাই চাল বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী শান্ত দাশগুপ্ত বলেন, আমন মৌসুমের চাল আসার পর দাম কিছুটা কমার কথা। কিন্তু সরকার ধান-চাল সংগ্রহের জন্য চালের বাড়তি দাম নির্ধারণ করেছে। কৃষকদের ক্ষেত্রে কেজিতে এক টাকা বাড়ালেও মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহে কেজিতে তিন টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে খোলা বাজারে কৃষকের চালের সরবরাহ কমে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে। আবার আশুগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহের চাল ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা দেশের বাজারগুলো পর্যবেক্ষণ করে আড়তদারদের খবর দেন। তারা অবস্থা বুঝে দাম বাড়ান। আবার সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। আমন মৌসুমকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। গত ৮ নভেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমানারা খাতুন স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহ নীতিমালা অনুসারে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তার ধারাবাহিকতায় মিলারদের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে আমন ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য কেজিপ্রতি ২৭ টাকা, চালের মূল্য ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এই দামে সরকার তিন লাখ টন ধান ও পাঁচ লাখ টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। পাহাড়তলী চাল বাজারের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা মেসার্স কর্ণফুলী রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, চিকন চালের সরবরাহ কম। বৈশাখ মাস এলে দেশি চিকন চাল বাজারে আসে। ভারতীয় চালেরও সরবরাহ কম। এসব কারণে দাম বেড়েছে। আবার মাসের শুরুতে যখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন হয়, তখন চালের আড়তদাররা ইচ্ছা করে দাম বাড়ান। সব ধরনের চাল আগের চেয়ে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে আমাদের। এ জন্য আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছি।

এরই মধ্যে আমন মৌসুমের চালও বাজারে এসে গেছে। যেখানে চালের দাম কমে আসার কথা সেখানে উল্টো বেড়েছে। ফলে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গিয়ে নাগরিকদের বাড়তি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। এ জন্য পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমদানিকারক সিন্ডিকেটের কারসাজি, মোকাম মালিকদের সরবরাহ কমিয়ে দেয়া ও তেলের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন। গত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে চাল সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে চাল সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনিতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিজনিত কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চালের বাজার কিছুটা বাড়তি ছিল। কিন্তু নতুন মৌসুমের চাল সরবরাহ শুরু হলে বাজারে সংকট দেখানো হচ্ছে মোকামগুলো থেকে। যার কারণে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে ভারতীয় চালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

চালের সরবরাহ কমের কারণ জানতে চাইলে চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, সংকটের কথা অনেকে জানেন; কিন্তু এগুলো প্রমাণ করতে হলে দেশের আড়তগুলোতে খোঁজ নিতে হবে।

যদিও লায়েক আলী বলছেন, নতুন মৌসুমের ধান-চাল বাজারে এলেও সরবরাহ বাড়েনি। তবে তিনি আমদানিকৃত চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশি বাজারেও দাম বেড়েছে বলে স্বীকার করেছেন। চালের বাজারে জ্বালানি তেলসহ ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

খাতুনগঞ্জের চাক্তাই বাণিজ্যিক এলাকার বিভিন্ন আড়তে দেখা গেছে, স্বর্ণা সেদ্ধ চালের বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ১০০ টাকা, মিনিকেট সেদ্ধ মানভেদে ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা, পাইজাম সেদ্ধ চাল ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা, কাজলতা সেদ্ধ ২০০ টাকা বেড়ে দুই হাজার ৭০০ টাকা, জিরাশাইল সেদ্ধ ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ১০০ টাকা। আতপ চালের মধ্যে মিনিকেট বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৭০০ টাকা, বেতি সেদ্ধ ২০০ টাকা বেড়ে মানভেদে দুই হাজার ৩০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা, ইরি আতপ ১৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বস্তাপ্রতি এক হাজার ৯৫০ টাকা, কাটারি আতপ ৩০০ টাকা বেড়ে তিন হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে পাঁচ-ছয় টাকা।

সূত্র: নয়া শতাব্দী