চুনারুঘাটে ফের অবৈধ মাটি উত্তোলন ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
১ বছরে উপজেলা প্রশাসনের মোবাইল কোট :২৫ মামলায় ১০ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা আদায় ও কারাদণ্ড ১৩
মোঃজামাল হোসেন লিটন,চুনারুঘাট ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত। গত ১ বছরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ২৫টি মামলা দায়ের করেছে। যেখানে অর্থদন্ড প্রাপ্ত ব্যক্তি ২৫জন এবং কারাদন্ড প্রাপ্ত ব্যক্তি ১৩ জন। অর্থদন্ড দেয়া মামলাগুলো থেকে জরিমানা আদায় হয়েছে ১০লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। গত এক বছরে চার তৃতীয়াংশ সময় ছিল করোনা আতঙ্ক এর মধ্যেও মাটি ও বালুখেকোরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খোয়াই নদী ক্ষত-বিক্ষত করে দু’পাড় বাঁধ সংলংগ্ন এলাকায় প্রভাবশালী মহল প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম এলে বালুর নাম করে মাটি পাচার করে আসছিল । কিন্তু থেমে ছিলনা উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্ধার্থ ভৌমিক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিল্টন চন্দ্র পাল । জনকল্যাণে রাত দিন মাঠে থেকেছেন তারা। অবৈধবালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি করোণা আক্রান্তদের খোঁজখবর নেওয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ সহ বহুবিধ জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ডে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন তারা। উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে গত ২০২০ সালের ১ জানুয়ারী হতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৫ টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে বিভিন্ন ধারায় জড়িমানা ও মামলা গুলো দেওয়া হয়। যতগুলো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে তার মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্ধার্থ ভৌমিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৬টি মামলায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড ও ৬ জন আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেন এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিল্টন চন্দ্র পাল ৭লক্ষ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও ৭ জনকে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন । এদিকে মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রয়ারী) দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের চলমান অভিযানে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিল্টন চন্দ্র পাল বাগবাড়ি এলাকার নদী তীরবর্তী স্থান হতে অনুমতিবিহীন ভাবে মাটি কর্তন করায় খালেক মিয়া (২৩) নামের এক ব্যক্তিকে মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা হয়। খালেক ওই এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মিল্টন চন্দ্র পাল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি খোয়াই নদীর প্রতিরক্ষা বাধ বর্ষা মৌসুমে ভেঙ্গেঁ পানিতে কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার একর ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে রাত দিন অবিরাম ট্রাক্টর লাইন ধরে নদীর বাধ কেটে রাস্তা করে প্রতিরক্ষা বাধের ভেতর থেকে মাঠি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও ডোবা কোথাও গভীর পুকুর ও কোথাও খাল খনন করা হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে নদী যেন তার গতিপথ হারিয়ে ফেলেছে। ভারত থেকে প্রবাহিত খোয়াই নদী চুনারুঘাট হয়ে হবিগঞ্জের কালনী নদীর মোহনায় নিমজ্জিত হয়েছে। প্রতিবছর বাধ ভাঙ্গাঁ ছিল তার শ্বলাভজীত বৈশিষ্ট্য। যখন বর্ষায় ভারত থেকে আসা পানি খোয়াই নদীর গর্ভে পড়ে প্রতিরক্ষা বাধ ভাঙ্গনে হুমকি হয়ে দাড়ায় প্রতিরক্ষা বাধের দুর্বল স্থান গুলোতে পাথর সিমেন্ট দিয়ে তৈরী ব্লক ও বালি বুঝাই ব্যাগ ফেলে আত্বরক্ষা করেন। অথচ শুষ্ক মৌসুমে নদীর প্রতিরক্ষা বাধ কেটে মাঠি নেয়ার মহৌসব যেন বিবেকবান মানুষকে স্তব্ধ করে দেয়। বছরের পর বছর এভাবে বাঁধ কেটে মাটি বিক্রির কারনে এক সময়কার খ্যাত কৃষকের আখ, গম, আলু, ডাল সহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত নেই বললেই চলে। খোয়াই নদীর বাঁধের ভেতরে উন্নত প্রযুক্তির আখ চাষের জন্য চুনারুঘাট আখ গবেষনাও বন্ধের পথে। মাটির গাড়ি ওঠানামা করার জন্য প্রতিরক্ষা বাঁধ কেটে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা। ফলে প্রতিরক্ষা বাঁধের দুই তীরে শতাধিক স্পট মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, অবৈধভাবে যারা বালু ও মাটি উত্তোল করছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ চক্রে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা এবং আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।