হবিগঞ্জ ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo মাধবপুরে আগুনে পুড়ে ছাই হলো মিলনের বেঁচে থাকার অবলম্বন Logo চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাচনে ১৭ প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র দাখিল Logo সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন Logo বিদ্যুৎপৃষ্ঠে নিহতের পরিবারের পাশে ব্যারিস্টার সুমন-এমপি Logo টেকনাফের ব্যাবসায়ী ৫শ’ পিছ ইয়াবাসহ চুনারুঘাটে গ্রেপ্তার Logo চুনারুঘাটে তীব্র দাবদাহে সুপেয় পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ Logo শেখ হাসিনার আধুনিক চিন্তা ধারায় বদলে গেল কৃষিখাত, ব্যারিস্টার সুমন Logo কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক তাদের কাম কি? মানুষের টাকা মেরে দেয়া, ব্যারিস্টার সুমন Logo বাহুবলে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন, জরিমানা ৫০ হাজার টাকা Logo বাহুবলে রাতের আধারে প্রবাসীর ১৮ টি ফসলি গাছ কর্তন, লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি

সুপ্রিমকোর্টে বাংলা ভাষার ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১০:৫৯:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ২০২ বার পড়া হয়েছে

আলমগীর হোসেনঃ

প্রথাগতভাবে যুগ যুগ ইংরেজি ভাষায় মামলার রায় লেখা হলেও হাইকোর্টের কয়েকজন বিচারপতি নিয়মিত বাংলা ভাষায় রায়-আদেশ দিচ্ছেন। আবার বেশ কয়েকজন বিচারপতি ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায়ও রায়-আদেশ দিচ্ছেন।তবে বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টে বাংলা ভাষার ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে।

এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষায় কতগুলো রায় ও আদেশ দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। বর্তমানে উচ্চ আদালতে বাংলায়ও আবেদন করা যাচ্ছে। এতে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষ স্বস্তিবোধ করছেন।

আদালতে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, কোন ভাষায় রায় বা আদেশ দেওয়া হবে তা বিচারকের এখতিয়ার। তবে উচ্চ আদালতের বেশির ভাগ কার্যক্রমে বাংলা ভাষা চালুর জন্য মানসিকতায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রচলন আইনের ৩(১) ধারায় বলা হয়েছে-বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যতীত আদালতের সওয়াল-জবাব (প্রশ্নোত্তর), আদালতের রায়, সরকারি অফিস, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নথি ও চিঠিপত্র এবং অন্য আইনানুগ কার‌্যাবলি অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে। সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন বিষয় এবং বেতার ও টেলিভিশনে বাংলা ভাষার বিকৃত উচ্চারণ ও দূষণ রোধে হাইকোর্টের রুলসহ দুটি নির্দেশনাও রয়েছে। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এবং ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নির্দেশনা দুটি দেওয়া হয়। একটিতে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এবং অন্যটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ এসব নির্দেশনা দেন।

তবে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বাংলা পুরোপুরি উচ্চ আদালতের ভাষা হয়ে উঠতে পারেনি। তবে সেই পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। দিনদিন বাংলা ভাষার কদর বাড়ছে। অনেক বিচারপতি নিয়মিত বাংলায় রায় ও আদেশ দিচ্ছেন। যারা বাংলায় রায় দিচ্ছেন, তারা মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার টানেই দিচ্ছেন। বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে সাত এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৮৬ জন বিচারপতি আছেন। দুজন বিচারপতি পৃথকভাবে ৪০ হাজারের ওপরে বাংলায় রায় ও আদেশ দিয়েছেন।

এ বছর ফেব্রুয়ারিতেও আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ থেকে বাংলায় রায় দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলায় ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। সেই রায়ের ১৬ হাজার ৫৫২ পৃষ্ঠা বাংলায় লিখে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী আলোচনায় এসেছেন। ওই রায়ের অনুলিপি সংরক্ষণের জন্য বাংলা একাডেমিতে হস্তান্তর করেছে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন।

হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বেশির ভাগ রায়, আদেশ ও নির্দেশ বাংলায় দিচ্ছেন। ২০ হাজারের বেশি রায় বা আদেশ তারা বাংলায় দিয়েছেন। বর্তমানে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আপিল বিভাগে কর্মরত। ২০২০ সালে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ বিভিন্ন মামলায় ১ হাজার ১৭৫টি রায় ও ৬৩৭টি আদেশ বাংলায় দেন।

একই বেঞ্চ গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি আলোচিত গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলার রায়ও বাংলায় দিয়েছেন। যোগদানের পর থেকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন নিয়মিত বাংলায় রায় ও আদেশ দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২০ হাজারের বেশি মামলার রায় ও আদেশ বাংলায় দিয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে ২৫০ থেকে ৩০০ মামলায় তিনি বাংলায় আদেশ দিচ্ছেন। আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালও নিয়মিত বাংলায় রায় লিখছেন।

সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে উচ্চ আদালতের কয়েকজন বিচারক বাংলায় রায় লেখার উদ্যোগ নেন। ২০০৭ সাল থেকে হাইকোর্ট বিভাগে দেওয়ানি, ফৌজদারি ও রিট মামলায় কয়েকটি রায় বাংলায় দেওয়া হয়।

২০০৭ থেকে ২০১১ সালে অবসরে যাওয়ার পূর্বপর্যন্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বাংলায় প্রায় ২০০ রায় লিখেছেন। এর আগে বাংলায় রায় লিখেছেন বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমান, বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, বিচারপতি হামিদুল হক, বিচারপতি এআরএস আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি একে বদরুল হক, বিচারপতি ফজলুল করিম, বিচারপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, বিচারপতি মো. আবদুল কুদ্দুস, বিচারপতি এসএম জিয়াউল করিম, বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদিন, বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন প্রমুখ।

এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ঔপনিবেশিক আমল থেকে আদালতের কার্যক্রম ইংরেজি ভাষাতে পরিচালিত হয়ে আসছে। এ কারণে ইংরেজি ভাষায় রায় ও আদেশ প্রদানে অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে। এছাড়া আইন বিষয়ে পর্যাপ্ত বাংলা পরিভাষা ও পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। ফলে উচ্চ আদালতে শতভাগ বাংলা ভাষার প্রচলনের অসুবিধা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আদালতসহ রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন করে একুশের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন জানান, একসময় আদালতের সবকিছুই ইংরেজি ভাষায় পরিচালিত হতো। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি নেই। দিনদিন বাংলা ভাষার কদর বাড়ছে। অনেক বিচারপতি নিয়মিত বাংলায় রায় ও আদেশ দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, বিচারপ্রার্থীদের কথা চিন্তা করে আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার আরও বাড়ানো উচিত।

উচ্চ আদালতের সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রচলনের পক্ষে মত দিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ইংরেজিতে রায় লেখা বা আবেদন করা বাধ্যতামূলক নয়। ইচ্ছা করলে বাংলায়ও রায় লেখা যায়। কয়েকজন বিচারপতি বাংলায় রায় লিখছেন। তবে সংখ্যায় তারা খুবই কম। তিনি আরও বলেন, আইনের বইগুলো ইংরেজি ভাষায় লেখা। অবশ্য এখন বাংলায়ও আইনের বই লেখা হচ্ছে। এজন্য সরকারকে মহাপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। এটা রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়।

সুপ্রিমকোর্টের মুখপাত্র সাইফুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিচারপ্রার্থীরা যাতে রায় বুঝতে ও জানতে পারেন, সেজন্য সুপ্রিমকোর্টে ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যার যুক্ত করা হয়েছে। এ সফটওয়্যারের সাহায্যে ইংরেজিতে দেওয়া রায় খুব সহজেই বাংলায় অনুবাদ করা যাবে। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সফটওয়্যারটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

এদিকে প্রায় ১০ হাজার আইনজীবীর মধ্যে মাত্র দুজন উচ্চ আদালতে বাংলায় মামলা দায়ের ও শুনানি করছেন। আদালতের রায় বা আদেশের কপি ইংরেজিতে পেলেও অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম ও আবু ইয়াহিয়া দুলাল বাংলায় সবকিছু করার চেষ্টা করছেন।

 

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

খন্দকার আলাউদ্দিন

হ্যালো, আমি খন্দকার আলাউদ্দিন, আপনাদের চারিপাশের সংবাদ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।

মাধবপুরে আগুনে পুড়ে ছাই হলো মিলনের বেঁচে থাকার অবলম্বন

সুপ্রিমকোর্টে বাংলা ভাষার ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে

আপডেট সময় ১০:৫৯:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

আলমগীর হোসেনঃ

প্রথাগতভাবে যুগ যুগ ইংরেজি ভাষায় মামলার রায় লেখা হলেও হাইকোর্টের কয়েকজন বিচারপতি নিয়মিত বাংলা ভাষায় রায়-আদেশ দিচ্ছেন। আবার বেশ কয়েকজন বিচারপতি ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায়ও রায়-আদেশ দিচ্ছেন।তবে বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টে বাংলা ভাষার ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে।

এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষায় কতগুলো রায় ও আদেশ দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। বর্তমানে উচ্চ আদালতে বাংলায়ও আবেদন করা যাচ্ছে। এতে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষ স্বস্তিবোধ করছেন।

আদালতে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, কোন ভাষায় রায় বা আদেশ দেওয়া হবে তা বিচারকের এখতিয়ার। তবে উচ্চ আদালতের বেশির ভাগ কার্যক্রমে বাংলা ভাষা চালুর জন্য মানসিকতায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রচলন আইনের ৩(১) ধারায় বলা হয়েছে-বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যতীত আদালতের সওয়াল-জবাব (প্রশ্নোত্তর), আদালতের রায়, সরকারি অফিস, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নথি ও চিঠিপত্র এবং অন্য আইনানুগ কার‌্যাবলি অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে। সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন বিষয় এবং বেতার ও টেলিভিশনে বাংলা ভাষার বিকৃত উচ্চারণ ও দূষণ রোধে হাইকোর্টের রুলসহ দুটি নির্দেশনাও রয়েছে। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এবং ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নির্দেশনা দুটি দেওয়া হয়। একটিতে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এবং অন্যটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ এসব নির্দেশনা দেন।

তবে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বাংলা পুরোপুরি উচ্চ আদালতের ভাষা হয়ে উঠতে পারেনি। তবে সেই পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। দিনদিন বাংলা ভাষার কদর বাড়ছে। অনেক বিচারপতি নিয়মিত বাংলায় রায় ও আদেশ দিচ্ছেন। যারা বাংলায় রায় দিচ্ছেন, তারা মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার টানেই দিচ্ছেন। বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে সাত এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৮৬ জন বিচারপতি আছেন। দুজন বিচারপতি পৃথকভাবে ৪০ হাজারের ওপরে বাংলায় রায় ও আদেশ দিয়েছেন।

এ বছর ফেব্রুয়ারিতেও আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ থেকে বাংলায় রায় দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলায় ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। সেই রায়ের ১৬ হাজার ৫৫২ পৃষ্ঠা বাংলায় লিখে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী আলোচনায় এসেছেন। ওই রায়ের অনুলিপি সংরক্ষণের জন্য বাংলা একাডেমিতে হস্তান্তর করেছে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন।

হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বেশির ভাগ রায়, আদেশ ও নির্দেশ বাংলায় দিচ্ছেন। ২০ হাজারের বেশি রায় বা আদেশ তারা বাংলায় দিয়েছেন। বর্তমানে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আপিল বিভাগে কর্মরত। ২০২০ সালে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ বিভিন্ন মামলায় ১ হাজার ১৭৫টি রায় ও ৬৩৭টি আদেশ বাংলায় দেন।

একই বেঞ্চ গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি আলোচিত গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলার রায়ও বাংলায় দিয়েছেন। যোগদানের পর থেকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন নিয়মিত বাংলায় রায় ও আদেশ দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২০ হাজারের বেশি মামলার রায় ও আদেশ বাংলায় দিয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে ২৫০ থেকে ৩০০ মামলায় তিনি বাংলায় আদেশ দিচ্ছেন। আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালও নিয়মিত বাংলায় রায় লিখছেন।

সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে উচ্চ আদালতের কয়েকজন বিচারক বাংলায় রায় লেখার উদ্যোগ নেন। ২০০৭ সাল থেকে হাইকোর্ট বিভাগে দেওয়ানি, ফৌজদারি ও রিট মামলায় কয়েকটি রায় বাংলায় দেওয়া হয়।

২০০৭ থেকে ২০১১ সালে অবসরে যাওয়ার পূর্বপর্যন্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বাংলায় প্রায় ২০০ রায় লিখেছেন। এর আগে বাংলায় রায় লিখেছেন বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমান, বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, বিচারপতি হামিদুল হক, বিচারপতি এআরএস আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি একে বদরুল হক, বিচারপতি ফজলুল করিম, বিচারপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, বিচারপতি মো. আবদুল কুদ্দুস, বিচারপতি এসএম জিয়াউল করিম, বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদিন, বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন প্রমুখ।

এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ঔপনিবেশিক আমল থেকে আদালতের কার্যক্রম ইংরেজি ভাষাতে পরিচালিত হয়ে আসছে। এ কারণে ইংরেজি ভাষায় রায় ও আদেশ প্রদানে অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে। এছাড়া আইন বিষয়ে পর্যাপ্ত বাংলা পরিভাষা ও পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। ফলে উচ্চ আদালতে শতভাগ বাংলা ভাষার প্রচলনের অসুবিধা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আদালতসহ রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন করে একুশের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন জানান, একসময় আদালতের সবকিছুই ইংরেজি ভাষায় পরিচালিত হতো। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি নেই। দিনদিন বাংলা ভাষার কদর বাড়ছে। অনেক বিচারপতি নিয়মিত বাংলায় রায় ও আদেশ দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, বিচারপ্রার্থীদের কথা চিন্তা করে আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার আরও বাড়ানো উচিত।

উচ্চ আদালতের সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রচলনের পক্ষে মত দিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ইংরেজিতে রায় লেখা বা আবেদন করা বাধ্যতামূলক নয়। ইচ্ছা করলে বাংলায়ও রায় লেখা যায়। কয়েকজন বিচারপতি বাংলায় রায় লিখছেন। তবে সংখ্যায় তারা খুবই কম। তিনি আরও বলেন, আইনের বইগুলো ইংরেজি ভাষায় লেখা। অবশ্য এখন বাংলায়ও আইনের বই লেখা হচ্ছে। এজন্য সরকারকে মহাপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। এটা রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়।

সুপ্রিমকোর্টের মুখপাত্র সাইফুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিচারপ্রার্থীরা যাতে রায় বুঝতে ও জানতে পারেন, সেজন্য সুপ্রিমকোর্টে ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যার যুক্ত করা হয়েছে। এ সফটওয়্যারের সাহায্যে ইংরেজিতে দেওয়া রায় খুব সহজেই বাংলায় অনুবাদ করা যাবে। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সফটওয়্যারটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

এদিকে প্রায় ১০ হাজার আইনজীবীর মধ্যে মাত্র দুজন উচ্চ আদালতে বাংলায় মামলা দায়ের ও শুনানি করছেন। আদালতের রায় বা আদেশের কপি ইংরেজিতে পেলেও অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম ও আবু ইয়াহিয়া দুলাল বাংলায় সবকিছু করার চেষ্টা করছেন।