বিশিষ্ট আইনজীবী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের উপদেষ্টা সদস্য মনোনীত হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত ৯টায় ১৬ জন উপদেষ্টা সদস্যদের মধ্যে তার নাম ঘোষণা করা হয়। একই সাথে তিনি সহ বাকি সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেছেন। তার এমন খুশির খবরে এলাকায় আন্নদ উল্লাস করছে নিজ এলকার সাধারন লোকজন।
রিজওয়ানা হাসান রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে ২৫ জানুয়ারি ১৯৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের নরপতি হাবিলীতে গ্রামে। তার পিতা সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মহিবুল হাসান ও মা সুরাইয়া হাসান।
বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা তিনি এবং পরিবারে সবার ছোট। পরবর্তীতে সহপাঠী আইনবিদ ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক-এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি তিন সন্তানের জননী। মেয়ে নেহলা, দুই ছেলে যাবির ও জিদান।
রিজওয়ানা হাসান ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে, প্রথমে লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হলেও আইনের প্রতি আগ্রহ থেকে পরে বিভাগ পরিবর্তন করে আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
১৯৯৩ সালে এলএলএম সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের বাইরে বেশ কয়েকটি ফেলোশিপ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইজেনহাওয়ার ফেলোশিপ করেন। নরপতি গ্রামের বাসিন্দা রিজওয়ানা হাসানের আপন চাচাত ভাই চুনারুঘাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ লিয়াকত হাসান জানান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আমার ছোট বোন, আমি গর্ববোধ করি আমার চাচাতো বোন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায়।
সে পরিবেশ নিয়ে কাজ করে তাই কর্মব্যস্ত থাকায় নিজ বাড়িতে বেশি একটা আসা হয়না। সর্বশেষ আমাদের নিজ বাড়িতে প্রায় দুবছর পর্বে এসেছিলো। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মীর সিরাজ বলেন, রিজুওয়ানা হাসান দীর্ঘদিন যাবত পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন।
এই লড়াইয়ে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের জীবনযাপনও বেশ কয়েকবার হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি একজন দুঃসাহসী নারী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি বলিষ্ঠ কণ্ঠ। এই সময়ে বাংলাদেশকে পূর্ণগঠনে নিঃসন্দেহে তিনি উত্তম ভূমিকা রাখতে পারবেন।
একই গ্রামের প্রতিবেশি চুনারুঘাট সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো: কাউছার বাহার জানান, সরকারের এতবড় দায়িত্ব পেয়েছেন আমার গ্রামের মহিবুল চাচার মেয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা আপা। খবরটা শুনে আমার খুবই ভালো লাগছে। আমরা নরপতি গ্রামের মানুষ গর্বিত।
তিনি ঢাকায় বসবাস করলে ও যখনই হবিগঞ্জে কোন অনুষ্ঠান হতো তখনই তিনি পিতার পৈতৃক ভিটা নরপতি চলে আসতেন। যখনই এলাকায় আসতেন তখনই আত্নীয় স্বজন সহ এলাকার গরীব দুঃখী মানুষের সাহায্য সহযোগীতা ও তাদের খোঁজ খবর নিতেন।
তিনি অত্যন্ত আন্তরিক এবং ভাল মনের মানুষ। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা তৈরির কারণে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিবেশ পুরস্কার”-এ ভূষিত হোন। তার পরিচালিত সংগঠন বেলা ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম ঘোষিত গ্লোবাল ৫০০ রোল অফ অনার্স পুরস্কারে ভূষিত হয়। এছাড়া প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পেয়েছেন ‘পরিবেশের নোবেল’ খ্যাত “গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ।
তার এসব নানামুখি কর্মকান্ডের কারণেই ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বখ্যাত টাইম সাময়িকী তাকে “হিরোজ অফ এনভায়রনমেন্ট” খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে নেপালভিত্তিক ক্রিয়েটিভ স্টেটমেন্টস এ্যান্ড সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপ প্রদত্ত “সিলেব্রেটিং ওমেনহুড এওয়ার্ড”প্রাপ্ত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাঁচজন নারীর একজন।
এছাড়াও তিনি ২০১২ সালে এশিয়ার নোবেল পুরস্কার হিসেবে বিবেচ্য ফিলিপাইনভিত্তিক রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ করেন। ২০২২ সালে তিনি আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার পান।
গত ২০ বছর ধরে যুগান্তকারী আইনি মামলার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিশীলতা পরিবর্তন করে পরিবেশগত ন্যায়বিচারের ওপর জনকেন্দ্রিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। জনস্বার্থ আইন সংস্থা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী হিসেবে বন উজাড়, দূষণ, অনিয়ন্ত্রিত জাহাজ ভাঙা এবং অবৈধ ভূমি উন্নয়নের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়েছেন এবং জিতেছেন।
২০০৯ সালে তিনি টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের ৪০ জন এনভায়রমেন্টার হিরোর একজন হিসেবে মনোনীত হন এবং ২০১২ সালে র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হন। শক্তিশালী মহলের প্রতিরোধ ও নিজের এবং পরিবারের প্রতি সহিংসতার হুমকি সত্ত্বেও বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের স্থানীয় প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে আদালতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এ বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে মূল উদ্দেশ্য কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, বৈষম্য দূর করা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করাই হবে উপদেষ্টা সরকারের মূল উদ্দেশ্য। তিনি আরও বলেন আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে যাহাতে পালন করতে পারি সেজন্য সকলের নিকট দোয়া ও সহযোগীতা কামনা করছি।