চুনারুঘাটে ২০শে মে ঐতিহাসিক মল্লুকে চলো, আন্দোলন এবং চা শ্রমিক দিবসের ১০১ বছর পূর্তি উপলক্ষে চা শ্রমিক সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ২টায় উপজেলার চান্দপুর চা-বাগান নাচঘরে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে চা শ্রমিক দিবস এ ভার্চুয়ালের মাধ্যমে প্রধান অথিতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী।
এতে বিশেষ অথিতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন-চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল কাদির লস্কর, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব লুৎফুর রহমান মহালদার, ৩নং দেওরগাছ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সদস্য মহিতুর রহমান রুমন ফরাজী, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য নৃপেল পাল, লস্করপুর ভ্যালী কার্যকরি পরিষদের সভাপতি রবিন্দ্র গৌড়, চা-শ্রমিক নেতা কাঞ্চন পাত্র, স্বপন সাওতাল, চান্দপুর বাগান সভাপতি সাধন সাওতাল, চাকলা চাবাগান সভঅপতি বাবুল লাল সরকার, ইউপি সদস্য রোমা উড়াং, সিবুজন বাকতি, সাবেক মেম্বার লক্ষী চরণ বাকতী সহ ২৩ চা-বাগানের নেতৃবৃন্দ এবং চুনারুঘাট-মাধবপুর চা-বাগান এলাকার বিভিন্ন চা বাগানের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেল পাল জানান-মুল্লুকে চলো ” চা শ্রমিকের রক্তে লেখা ইতিহাস ও ঐতিহাসিক ২০ মে চা-শ্রমিক দিবসকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও চা শ্রমিকদের ভুমির অধিকার বাস্তবায়ন চাই। ২০মে শ্রমিকের শোষণ,বাঞ্চনা, নিপীড়ন , নির্যাতন অধিকারহীন ও দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হবার ঐতিহাসিক দিন।
১৮৫৪ সালে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে চায়ের আবাদ শুরু হয়। ব্রিটিশ কোম্পানী একের পর এক চা বাগান প্রতিষ্টা করলে প্রয়োজন হয় শ্রমিক সংগ্রহের। ভারতের আসাম, নাগাল্যান্ড, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, উড়িষ্যা, মাদ্রাজ, বিহার প্রভৃতি অঞ্চলের নিম্ন বর্ণের হাজার হাজার মানুষকে মিথ্যা স্বপ্ন ও উন্নত জীবনের আশ্বাস দিয়ে এখানে নিয়ে আসা হয়। এ সকল মানুষেরা এখানে এসেছিল একটু উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসে চিত্রপট দেখে সম্পূর্নই ভিন্ন। কোম্পানী মালিকরা এসকল শ্রমিকদের গহিন জঙ্গল কেটে বাগান তৈরী করার কাজে নিয়োজিত করে নাম মাত্র মুজুরিতে। সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে একবেলা খাবারো জোটতো না অনেক সময়। যার ফলে অনাহারে অর্ধহারে জীবন পার করতো শ্রমিকেরা। একদিকে খাবার সংকট, বাসস্থানের সংকট, অন্যদিকে বাগান মালিকদের নির্যাতন নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতে থাকে চা-বাগানে নিয়োজিত শ্রমিকদের জীবন। ১৯২১ সালের ৩ মার্চ নিজ মুল্লূকে ফিরে যাবার জন্য সিলেট ও তার আসে পাসে প্রায় ৩০ হাজার চা শ্রমিক ঐক্য বদ্ধ হয়ে বাগান ছেড়ে নিজ মুল্লূকে ফিরে যাওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করে। তাদের দাবি ছিল ইংরেজদের অধীনে কাজ করবে না ও তাদের নিজেদের ভূমিতে ফিরে যাবে। চা শ্রমিকেরা বুঝতে পারে চা বাগানের মালিকেরা তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে বন্দী করে রাখছে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য। তাই শ্রমিকেরা তাদের পূর্বের জীবনে ফিরে যেতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কোনরূপ চিন্তাভাবনা না করেই মাথা গোঁজার ঠাই ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় কি খাবে, কিভাবে যাবে এসব চিন্তা একটি বারের জন্য তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরাতে পারেনি। বলতে থাকে বার বার মরার থেকে একবারেই মরবো তবুও নিজ ভুমির দিকে এগিয়ে যাব। ১৯২১ সালের ২০ মে শ্রমিকরা গিয়ে পৌঁছে চাঁদপুর জাহাজ ঘাটে। অন্য দিকে বাগান মালিকরা তৎকালীন সরকারের সহযোগীতায় চা – শ্রমিকদের প্রতিরোধ করতে চাঁদপুর মেঘনাঘাটে গুর্খা সৈন্য মোতায়েন করে। ঘাটে জাহাজ যখন ভিড়লো শ্রমিকেরা তখন পাগল হয়ে জাহাজে উঠতে গেলে গুর্খা সৈন্যরা বাধা দিতে থাকে এবং তাদের বিদ্রোহ দমন করার জন্য নির্বিচারে গুলি চালায় এতে শত শত শ্রমিক মৃত্যুবরন করে সেই সাথে শ্রমিকের রক্তে লাল হতে থাকে মেঘনা নদীর জল সকল শ্রমিকদের দাবি ২০ মে চা শ্রমিক দিবস ও ভূমি অধিকার বাছবায়নের জন্য মাননীয় রাষ্ট্র নায়ক বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি ।