মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগে দেশের প্রতিটি থানায় একটি করে গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কর্তৃক বাহুবল থানায় গৃহহীন বশিনা এলাকার সিমু আক্তার(৩৭ ) কে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে বাহুবল থানা পুলিশ। সিমু আক্তার উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের আব্দুল মতিনের মেয়ে। সিমুর পিত্রালয় বশিনা গ্রামেই দৃষ্টিনন্দন এই ঘর নির্মাণ করে পুলিশ। এতে রয়েছে রান্নাঘর, ও বৈদ্যুতিক সংযোগও। তবে তার টয়লেট নির্মান করে দিবেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: শামীম আহমেদ। উপকারভোগী -সিমু আক্তার বলেন, আমি খুব অসহায় একজন নারী, আমার দুইটি কন্যা সন্তান। তারা ছোট থাকাকালীন আমার স্বামী প্রায় ১৪ বছর পুর্বে আমাকে ফেলে চলে যায়। আমি আমার আত্নীয় স্বজনদের বাড়ি বাড়ি থেকে আমার দুইটি কন্যা সন্তানকে অনেক কষ্ট করে লালনপালন করেছি।ছিলনা মাথা গোঁজার ঠাঁই, এই অসময়ে পুলিশ অভিভাবকের মতো আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, অবশেষে বাহুবল থানার মাধ্যমে আমি একটি পাকা ঘর পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, ঈদের ১ দিন পুর্বে নতুন ঘরে থাকতে পারব কখনোই কল্পনা করতে পারিনা । আজ আমি নতুন ঘরে দুই সন্তানকে নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারব এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী, পুলিশ প্রধান ড. বেনজির আহমদ, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি ও বাহুবল সার্কেল মো: আবুল খয়ের এবং ওসি মোঃ রাকিবুল ইসলাম খানসহ সকল পুলিশ সদস্যদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন । রবিবার (১ মে) বিকেল সাড়ে ৪ টায় বশিনা এলাকায় সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কর্তৃক বাহুবল থানায় গৃহহীন পরিবারের জন্য নির্মিত ঘরের চাবি হস্তান্তর ও শতাধিক দুঃস্থ ও সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলির সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ । তিনি বলেন, আজকের এই গৃহহীনদের ঘর ও ঈদবস্ত্র বিতরণ সবই নিঃস্বার্থে করা হচ্ছে। পুলিশ সবসময় জনগণের পাশে থেকে কাজ করছে, পুলিশের মূল কাজ হল আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ বিষয়ক তদন্ত করা, সমাজ ও মানুষের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, তিনি পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, বিনা স্বার্থে বিনা চিন্তায় মানুষের সেবা দিতে হবে, জনসাধারণের কথা রিসিভ করতে হবে, মানুষ বিনা কারণে থানায় যায় না বিপদে পরেই থানায় যায়, মানুষ যে দ্রুত গতিতে থানায় যাবে, আবার থানা পুলিশের সেবাও দ্রুত গতিতে মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি বাহুবলের ওসি ও অফিসারদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোন নির্যাতনকারী যদি নিরীহ ব্যক্তিকে আঘাত করে রক্তাক্ত করে রক্তের দাগ শুকানোর আগেই যেন নির্যাতিতকে গ্রেফতার করতে হবে, মামলা হওয়ার পরে দাঁড়িপাল্লা নিয়ে বসলে হবে না, বাদী পক্ষের পাল্লা ভারী না বিবাদী পক্ষের পাল্লা ভারী, তাহলে যে পক্ষের পাল্লা ভারী আমি সেদিকে চলে গেলাম সেটা কোন আইনে লিখা নাই, আইনের পাল্লা হল সব সময় ভারী, নৈতিকতা হল সব সময় ভারী, হিতাহিত জ্ঞান হল ভারী, মানবতা হল ভারী, পুলিশ মানবতার জন্য কাজ করবে, নিঃস্বার্থভাবে কাজ করবে, বিনা স্বার্থে কাজ করবে, পুলিশ সবসময় জনগণের পাশে থেকে কাজ করছে, কেউ অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বাহুবল সার্কেল মো: আবুল খয়ের এর সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট রেঞ্জ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম, সুপার জেদান আল মুসা, হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন) শৈলেন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) মাহমুদুল হাসান, হবিগঞ্জ সদর সার্কেল মাহফুজা আক্তার শিমুল, বানিয়াচং সার্কেল পলাশ রঞ্জন দে, বাহুবল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) রাকিবুল ইসলাম খান, ইন্সপেক্টর ( তদন্ত) প্রজিত কুমার দাশ, পুটিজুরী ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোবারক হোসেন, শ্রমিক নেতা মো: আসকার আলী, বাহুবল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী, মিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: শামীম আহমেদসহ রাজনৈতিক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং জেলা পুলিশের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে ডিআইজি মফিজ উদ্দিন ও হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ নির্মিত ঘরের আঙ্গিনায় বৃক্ষরোপণ করেন এবং ভবিষ্যতে জীবিকা নির্বাহের জন্য কিছু হাঁস-মুরগী ও ঈদ উপহার তুলে দেন। তাছাড়াও ডিআইজি শতাধিক দুঃস্থ ও সুবিধাবঞ্চিতদের হাতে ঈদ উপহার তুলে দেন। প্রসঙ্গত : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষে ঘোষণা করেছিলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পরিবর্তনের অগ্রনায়ক হিসেবে খ্যাত পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ এর উদ্যোগে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। এ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশের ৫১৯টি থানায় ৫২০টি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন প্রতিটি ঘর পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে হবিগঞ্জ জেলার ৯টি থানায় ৯টি গৃহহীন পরিবারকে ৯ টি ঘর উপহার দেয়া হয়। এর আগে গত ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন হতে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে গৃহহীন পরিবারের জন্য নির্মিত গৃহ হস্তান্তরের শুভ উদ্বোধন করেন।
সংবাদ শিরোনাম ::
রক্তের দাগ শুকানোর আগেই নির্যাতনকারীকে গ্রেফতার করতে হবে- বাহুবলে ডিআইজি মফিজ
- নুর উদ্দিন সুমন, হবিগঞ্জ :
- আপডেট সময় ১২:৪২:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ মে ২০২২
- ১৯৪ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ