হবিগঞ্জ ০২:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ২২ দিন অন্ধকারে থাকার পর ব্যারিস্টার সুমনের সহযোগিতায় বিদ্যুৎ সংযোগ পেল ৩৪ টি পরিবার Logo মাধবপুরে আগুনে পুড়ে ছাই হলো মিলনের বেঁচে থাকার অবলম্বন Logo চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাচনে ১৭ প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র দাখিল Logo সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন Logo বিদ্যুৎপৃষ্ঠে নিহতের পরিবারের পাশে ব্যারিস্টার সুমন-এমপি Logo টেকনাফের ব্যাবসায়ী ৫শ’ পিছ ইয়াবাসহ চুনারুঘাটে গ্রেপ্তার Logo চুনারুঘাটে তীব্র দাবদাহে সুপেয় পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ Logo শেখ হাসিনার আধুনিক চিন্তা ধারায় বদলে গেল কৃষিখাত, ব্যারিস্টার সুমন Logo কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক তাদের কাম কি? মানুষের টাকা মেরে দেয়া, ব্যারিস্টার সুমন Logo বাহুবলে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন, জরিমানা ৫০ হাজার টাকা

ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশনটি ছিল একজন জমিদারের জন্য একটি রেলওয়ে স্টেশন স্থাপন

  • আলোকিত ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় ১২:২৫:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ মে ২০২২
  • ৩৩৯ বার পড়া হয়েছে

ঐতিহাসিক প্রাচীন ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলরুটে ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশনটি নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায় অবস্থিত। এ স্টেশনটিই বাংলাদেশের প্রথম দ্বিতল বা দোতলা রেলওয়ে স্টেশন।

জানা যায়, ১৮৯২ সালে ইংল্যান্ডে গঠিত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি এদেশে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নেয়। পরবর্তীতে অন্যান্য স্টেশনের মতো ১৯১০ সালে ঘোড়াশাল রেলওয়ে স্টেশন স্থাপন করা হলেও ফ্ল্যাগ স্টেশনটি ১৯১৪ সালে স্থাপন করা হয়।
ঘোড়াশালের তৎকালীন জমিদার হাজি মোহাম্মদ আবু সাঈদ (সাজদা মিয়া) জমিদারির পাশাপাশি ব্রিটিশ সরকারের মনোনীত একজন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। সেই সুবাদে ঘোড়াশাল থেকে রেলপথে তাকে ঢাকায় গিয়ে অফিস করতে হতো। পার্শ্ববর্তী কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া এবং চরসিন্দুরের লোকজনকেও নদী পথে এসে ঘোড়াশালের এ স্টেশনটি রেলপথে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করতে হতো। কিন্তু শীতলক্ষ্যা নদীর পার থেকে স্টেশনটির দূরত্ব ছিল প্রায় দুই কিলোমিটার। নদীপথে এসে পায়ে হেঁটে যাত্রীদের স্টেশনে আসা যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। সেইদিক বিবেচনা করে শীতলক্ষ্যা নদীর পারে আরেকটি রেলওয়ে স্টেশন স্থাপনের জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে লিখিত আবেদন জানান জমিদার সাজদা মিয়া। তার এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯১৪ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি নির্মাণ করে ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশন।
এ ব্যাপারে ঘোড়াশাল দক্ষিণ চরপাড়ার কোরবান আলী জানান, তখন স্টেশনের এ ঘরটি চারদিকে মুলিবাঁশ ও উপরে ছিল টিনের চালা। নিচে টিকেট বিক্রি করার জন্য ছিল টিকেট ঘর, আর উপরে ছিল বিশ্রামাগার। রেলগাড়িতে থাকতো জমিদার সাহেবের জন্য নির্ধারিত একটি কামরা। ফ্ল্যাগ স্টেশনের পুরাতন স্থাপত্যটি এরশাদ সরকারের আমলে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হলেও জমিদার আহমেদুল কবির মনু মিয়ার বাধার কারণে তা পারেনি।
ঘোড়াশাল টেকপাড়া গ্রামের আব্দুল হাই খান জানান, সাজদা মিয়া ছিলেন ঘোড়াশাল অঞ্চলের সবচেয়ে বড় জমিদার। স্টেশনটি তার জন্যই হয়েছে। যেদিন ঢাকা যেতেন, সংবাদটি আগেই রেলওয়ে কোম্পানিকে জানানো হতো। ট্রেন থামিয়ে রেলওয়ে কোম্পানির লোক বাড়িতে এসে বলতেন জমিদার সাহেবের জন্য ট্রেন থামিয়ে রাখা হয়েছে। তখন তিনি পালকিতে চড়ে স্টেশনে যেতেন। পালকির আগে পিছে থাকতেন ৩ জন করে ৬ জন ঋষি, আঞ্চলিক ভাষায় যাদেরকে বলা হয় “মাওরা”। সাহেবকে স্টেশনে আনা-নেওয়ার জন্য তাদেরকে প্রস্তত রাখা হতো। মূলত জমিদার সাজদা মিয়ার জন্যই ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশনটি করা হয়েছে।
ঘোড়াশাল গ্রামের হযরত আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে জমিদার সাজদা মিয়ার ছিল খুবই সুসম্পর্ক। আর এ জন্যই মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে আরেকটি ফ্ল্যাগ স্টেশনটি স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। যেদিন অফিসের কাজে ঢাকা যেতো, চট্টগ্রাম থেকেই জমিদার সাহেবের জন্য একটি কামরা বরাদ্দ থাকতো। জমিদার ছাড়া আর কেউ এই কামরাটিতে উঠতো না।
ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ রেলওয়ে স্টেশনটির ঐতিহ্যকে ধরে রাখার দাবি স্থানীয়দের। পাশাপাশি ১ শত ৮ বছরের পুরোনো এ ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে এটিকে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে পর্যটন এলাকায় রূপান্তরিত করতে সরকারের কাছে সর্ব মহলের দাবি। প্রতিদিন বিশেষ করে যেকোনো ছুটির দিনে নরসিংদী জেলা ছাড়াও পার্শ্ববতী গাজীপুর, ঢাকা,মানিকগঞ্জ, মুন্সিগন্জ,নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা আসেন অবসর সময় কাটাতে। এখানে দুটি রেলওয়ে সেতুও রয়েছে এবং আসা যাওয়ার রাস্তাগুলোর সৌন্দর্য বর্ধণ করা হয়েছে। রয়েছে প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য, যা দেখলে যে কারোর মন জুড়াবে।

খবর এবং ছবি সুত্রঃ নাসিম আজাদ, পলাশ, নরসিংদী ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকম

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

খন্দকার আলাউদ্দিন

হ্যালো, আমি খন্দকার আলাউদ্দিন, আপনাদের চারিপাশের সংবাদ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।
জনপ্রিয় সংবাদ

২২ দিন অন্ধকারে থাকার পর ব্যারিস্টার সুমনের সহযোগিতায় বিদ্যুৎ সংযোগ পেল ৩৪ টি পরিবার

ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশনটি ছিল একজন জমিদারের জন্য একটি রেলওয়ে স্টেশন স্থাপন

আপডেট সময় ১২:২৫:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ মে ২০২২

ঐতিহাসিক প্রাচীন ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলরুটে ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশনটি নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায় অবস্থিত। এ স্টেশনটিই বাংলাদেশের প্রথম দ্বিতল বা দোতলা রেলওয়ে স্টেশন।

জানা যায়, ১৮৯২ সালে ইংল্যান্ডে গঠিত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি এদেশে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নেয়। পরবর্তীতে অন্যান্য স্টেশনের মতো ১৯১০ সালে ঘোড়াশাল রেলওয়ে স্টেশন স্থাপন করা হলেও ফ্ল্যাগ স্টেশনটি ১৯১৪ সালে স্থাপন করা হয়।
ঘোড়াশালের তৎকালীন জমিদার হাজি মোহাম্মদ আবু সাঈদ (সাজদা মিয়া) জমিদারির পাশাপাশি ব্রিটিশ সরকারের মনোনীত একজন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। সেই সুবাদে ঘোড়াশাল থেকে রেলপথে তাকে ঢাকায় গিয়ে অফিস করতে হতো। পার্শ্ববর্তী কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া এবং চরসিন্দুরের লোকজনকেও নদী পথে এসে ঘোড়াশালের এ স্টেশনটি রেলপথে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করতে হতো। কিন্তু শীতলক্ষ্যা নদীর পার থেকে স্টেশনটির দূরত্ব ছিল প্রায় দুই কিলোমিটার। নদীপথে এসে পায়ে হেঁটে যাত্রীদের স্টেশনে আসা যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। সেইদিক বিবেচনা করে শীতলক্ষ্যা নদীর পারে আরেকটি রেলওয়ে স্টেশন স্থাপনের জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে লিখিত আবেদন জানান জমিদার সাজদা মিয়া। তার এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯১৪ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি নির্মাণ করে ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশন।
এ ব্যাপারে ঘোড়াশাল দক্ষিণ চরপাড়ার কোরবান আলী জানান, তখন স্টেশনের এ ঘরটি চারদিকে মুলিবাঁশ ও উপরে ছিল টিনের চালা। নিচে টিকেট বিক্রি করার জন্য ছিল টিকেট ঘর, আর উপরে ছিল বিশ্রামাগার। রেলগাড়িতে থাকতো জমিদার সাহেবের জন্য নির্ধারিত একটি কামরা। ফ্ল্যাগ স্টেশনের পুরাতন স্থাপত্যটি এরশাদ সরকারের আমলে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হলেও জমিদার আহমেদুল কবির মনু মিয়ার বাধার কারণে তা পারেনি।
ঘোড়াশাল টেকপাড়া গ্রামের আব্দুল হাই খান জানান, সাজদা মিয়া ছিলেন ঘোড়াশাল অঞ্চলের সবচেয়ে বড় জমিদার। স্টেশনটি তার জন্যই হয়েছে। যেদিন ঢাকা যেতেন, সংবাদটি আগেই রেলওয়ে কোম্পানিকে জানানো হতো। ট্রেন থামিয়ে রেলওয়ে কোম্পানির লোক বাড়িতে এসে বলতেন জমিদার সাহেবের জন্য ট্রেন থামিয়ে রাখা হয়েছে। তখন তিনি পালকিতে চড়ে স্টেশনে যেতেন। পালকির আগে পিছে থাকতেন ৩ জন করে ৬ জন ঋষি, আঞ্চলিক ভাষায় যাদেরকে বলা হয় “মাওরা”। সাহেবকে স্টেশনে আনা-নেওয়ার জন্য তাদেরকে প্রস্তত রাখা হতো। মূলত জমিদার সাজদা মিয়ার জন্যই ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশনটি করা হয়েছে।
ঘোড়াশাল গ্রামের হযরত আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে জমিদার সাজদা মিয়ার ছিল খুবই সুসম্পর্ক। আর এ জন্যই মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে আরেকটি ফ্ল্যাগ স্টেশনটি স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। যেদিন অফিসের কাজে ঢাকা যেতো, চট্টগ্রাম থেকেই জমিদার সাহেবের জন্য একটি কামরা বরাদ্দ থাকতো। জমিদার ছাড়া আর কেউ এই কামরাটিতে উঠতো না।
ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ রেলওয়ে স্টেশনটির ঐতিহ্যকে ধরে রাখার দাবি স্থানীয়দের। পাশাপাশি ১ শত ৮ বছরের পুরোনো এ ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে এটিকে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে পর্যটন এলাকায় রূপান্তরিত করতে সরকারের কাছে সর্ব মহলের দাবি। প্রতিদিন বিশেষ করে যেকোনো ছুটির দিনে নরসিংদী জেলা ছাড়াও পার্শ্ববতী গাজীপুর, ঢাকা,মানিকগঞ্জ, মুন্সিগন্জ,নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা আসেন অবসর সময় কাটাতে। এখানে দুটি রেলওয়ে সেতুও রয়েছে এবং আসা যাওয়ার রাস্তাগুলোর সৌন্দর্য বর্ধণ করা হয়েছে। রয়েছে প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য, যা দেখলে যে কারোর মন জুড়াবে।

খবর এবং ছবি সুত্রঃ নাসিম আজাদ, পলাশ, নরসিংদী ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকম