চুনারুঘাট উপজেলাজুড়ে ফসলি জমির উর্বর মাটি স্টক করে পুড়ানো হচ্ছে ইটভাটায়। ফলে উৎপাদন ক্ষমতা হারাচ্ছে তিন ফসলা চাষযোগ্য জমি। এছাড়াও উপজেলাজুড়ে সরকারি লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেচ প্রকল্প এলাকায় আউস, আমন, বুরো চাষযোগ্য ফসলি জমি দখল করে পুরাতন ইট ভাটার সাথে নতুনভাবে বানানো হচ্ছে আরো ইটভাটা। অপরিকল্পিত চুলায় জ্বলছে নিয়মিত আগুন।
সবুজ শ্যামল পাহাড়বেষ্টিত হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের পরিবেশ, ফসল, বৃক্ষ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। তথ্য নিয়ে জানা যায়, প্রভাব খাটিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠছে বেশ কয়েকটি ইটভাটা। এসব ভাটার প্রায় সবক’টিই গড়ে তোলা হয়েছে ঊর্বর ফসলি জমির বুকে। একইসঙ্গে সেখানে ইট তৈরির জন্য কেটে নেওয়া হচ্ছে জমির উপরিভাগের ঊর্বর মাটি। এতে উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষিজমি, নিধন হচ্ছে বৃক্ষ, চরমভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে রোগবালাই।
সবুজে ঘেরা ছোটখাটো হাওর, টিলা, পাহার, বন, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফরেস্ট রেমা-কালেঙ্গার মতো বনাঞ্চল, বিস্তীর্ণ চা বাগানবেষ্টিত চুনারুঘাটের পরিবেশ এখন ভয়াবহ হুমকির মুখে। এ উপজেলায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস। প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে কৃষি ও বনের ওপর।
নামে-বেনামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিহীন ইটভাটার আগুনে পুড়ছে চারপাশের সবুজ পরিবেশ। সরকারি নিয়মনীতি ও প্রচলিত বিধিবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় ফসলি জমি ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে এসব ভাটা। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে গ্রাম ও বনাঞ্চলের কাঠ।
সরকারি নীতিমালায় নিষেধ থাকলেও আবাদি জমি ও বসতবাড়ির কাছেই এসব ইটভাটার অবস্থান। একাধিক মালিক তাদের ইটভাটার এক কিলোমিটারের মধ্যে বসতবাড়ি, বাগান ও ফসলি জমি থাকার কথা স্বীকার করেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। চলছে কার্যক্রম। অথচ তা দেখার কেউ নেই।
এ সকল ভাটার আশেপাশে অবস্থিত জমির মালিক বলেন, আবাদি জমির মধ্যে ইটভাটা নির্মাণ করা নাকি বেআইনি, আবার এ সকল জমি তারা লিজ নিয়ে ব্যবহার করছে। তাহলে এগুলো কোন আইনে চলছে? ইটভাটার মালিক ও পরিচালক আব্দুস সালাম মিয়া জানান, তাদের সব কাগজ আছে। আইন মেনেই ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। কাগজে কোনো সমস্যা নেই।
এ বিষয় হবিগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, বেশ কয়েকটি ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নেয়নি, তাই সেগুলো অবৈধ। এসব ভাটার বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ভাটার অবস্থান হতে হবে লোকালয় ও এলজিইডির পাকা সড়ক থেকে ন্যুনতম আধা কিলোমিটার দূরে।
প্রস্তাবিত জায়গাটি আবাদি কিনা সে ব্যাপারে কৃষি বিভাগের প্রত্যয়নপত্র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং প্রশাসনের অনাপত্তি, ট্রেড লাইসেন্স, আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ আবেদনপত্র হাতে পেলে তদন্ত করে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। স্থানীয়রা বলছেন, অনুমোদন আর নথি ছাড়াই অনেক ইটভাটা চলছে; যা প্রমাণ করে ভাটার মালিকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সমঝোতা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তিন ফসলি জমি নষ্ট করে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে কৃষির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আবাদি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করায় কৃষি বিভাগ থেকে কোনো প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়নি।