জাহাঙ্গীর আলম: হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে খোয়াই নদীর দুই পাড়ের দৃশ্য দেখলে মনে হয় স্থানগুলো যেন মাটি বিক্রির পাইকারি হাট। প্রতিবছর শীত মৌসুম আসলেই খোয়াই নদী থেকে মাটি কাটার প্রতিযোগিতায় নামে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। খোয়াই নদীর দুই পাশের বাঁধ কেটে বিকট শব্দে ওঠানামা করছে শত শত ট্রাক্টর। রাত দিন মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা।
ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিরাক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। ধুলা-বালুর কারণে দুর্ভোগের শিকার আশপাশে বসবাস করা শত শত পরিবার। বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।
ভারত থেকে প্রবাহিত খরস্রোতা খোয়াই নদীকে এক সময় বলা হতো হবিগঞ্জের দুঃখ। প্রতিবছরই বন্যায় প্লাবিত হতো এই জেলা। পরে নদীর দুই পাড়ের জনপদকে বন্যার তীব্রতা থেকে রক্ষা করতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খোয়াই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খোয়াই নদীর দুই পাড়ের অন্তত ৩০টি স্থান থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। মাটি পরিবহনের জন্য নদীর পাড়ে ট্রাক, ট্রাক্টর এমনকি এক্সকেভেটর মেশিন প্রবেশ করাতে প্রতিরক্ষা বাঁধ কেটে রাস্তা তৈরি করছে। এতে বাঁধ হুমকিতে পড়েছে। এবারের বন্যায় পৌর শহরসহ আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হতে পারে বলে আশষ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন ঘুরে ও এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খোয়াই নদীর দু’পাড়ে এক সময় গম, আখ, আলু, ডালসহ বিভিন্ন ফসল ফলাত এলাকার কৃষক। কিন্তু এখন এমন দৃশ্য আর নেই। আমকান্দি, কাচুয়া, রাজারবাজর, ধনশ্রী, কাজিরখিল, বাঘবাড়ী এলাকা শ্যালু মেশিন, ট্রাক, ট্রাক্টরের শব্দে প্রকম্পিত হয়। নদীর মাটি বিক্রি হচ্ছে সড়ক বা বাড়িঘর নির্মাণের কাজে, ইটভাটায় ইট তৈরির কাজে। নদীর পাড় থেকে দীর্ঘদিন ধরে মাটি কাটার ফলে মূল নদীর সাথে পাড় মিশে গেছে। প্রতিরক্ষা বাঁধ কাটা ও বাঁধের ওপর দিয়ে ট্রাক, ট্রাক্টর অবাধে চলাচল করার কারণে বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে এভাবে নিয়মহীনভাবে মাটি কাটা চলছে। এভাবে মাটি কাটা হচ্ছে, অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বিকার। মাটি কাটা প্রতিরোধে তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, খোয়াই নদীতে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেয়া আছে। মাটি কাটার কোনো অনুমোদন নেই। ইজারা বহির্ভূত কোনো স্থান থেকে বালু উত্তোলন করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাটি কাটারত কোনো প্রশ্নই আসে না। মটি কাটা বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।