বর্তমানে কমছে না বিদ্যুতের লোডশেডিং। তবে কবে নাগাদ কমবে, তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউই। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে উৎপাদন বন্ধ ৩০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। ফলে চাহিদার চেয়ে অন্তত দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপন্ন হচ্ছে দেশে। যার অনিবার্য ফলাফল চলমান লোডশেডিং। এমন অবস্থায় খোদ রাজধানীর অনেক এলাকায় সকাল-দুপুর তো বটেই, মধ্যরাতেও থাকছে না বিদ্যুৎ।
প্রসঙ্গত, জুলাইয়ের মাঝামাঝি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে শুরু হয় লোডশেডিং। কথা ছিল, দিনে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা থাকবে না বিদ্যুৎ। আশা করা হয়েছিল, অক্টোবরে আগের মতো স্বাভাবিক হবে বিদ্যুৎ সরবরাহ। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন। গেলো ৪ অক্টোবর ব্ল্যাক আউটের পর এখনও স্বাভাবিক হয়নি বিদ্যুৎ পরিস্থিতি।
ঢাকার একটি ফিলিং স্টেশনে গাড়িতে গ্যাস নিতে আসা এক তরুণ বললেন, শুনেছিলাম অক্টোবর থেকে লোডশেডিং বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তো বন্ধ হলো না। আমরা তো ভুক্তভোগী। গ্যাস পাম্পে বসে আছি, ঘণ্টাদুয়েক ধরে বিদ্যুৎ নেই।
রাজধানীর আরেক বাসিন্দা বলেন, আগের চেয়ে বিদ্যুৎ বেশি যাচ্ছে। দিনে ৩-৪ বার কিংবা তারও বেশি বিদ্যুৎ যাচ্ছে।
ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি আরও খারাপ। গ্রামে-গঞ্জে কোথাও কোথাও দিনের অর্ধেক সময়ই থাকছে না বিদ্যুৎ। হঠাৎ করে এমন অসহনীয় দুর্ভোগে কষ্ট বাড়ছে মানুষের।
প্রশ্ন হলো, কেন হঠাৎ এতো লোডশেডিং? বিদ্যুৎ বিভাগের ভাষ্য, গড়ে প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। কারণ, জ্বালানির তীব্র সংকট। গ্যাস দিয়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করার কথা থাকলেও তা নেমে এসেছে ৫ হাজারের নিচে। আর জ্বালানি তেল দিয়ে পরিকল্পনার অর্ধেক অর্থাৎ মাত্র তিন হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনেই হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, গ্যাসের অভাবে আমাদের কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো প্রয়োজনীয় জ্বালানির অভাবে কম লোডে চলছে বা বন্ধ রয়েছে। তাই লোডশেডিং হচ্ছে।
এদিকে, জ্বালানি সংকটের পাশাপাশি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ আর কারিগরি কারণে ৩০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ। এছাড়া আংশিক বন্ধ কয়েকটি কেন্দ্র। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনছে না সরকার। তাই ধারণা, শিগগিরই কাটছে না সংকট। ভোগান্তি থেকে বাঁচতে আপাতত শীতের অপেক্ষা করতে হবে দেশবাসীকে।
মোহাম্মদ হোসেন আরও বলেন, প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। আর তাতে পুরানো অবস্থায় ফিরে এসেছি। যদি হিটিং লোডটা কিছুটা কমে, আমরা উৎপাদন বাড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
চলমান সংকটের কারণে গ্রাহকদের কাছে আবারও দুঃখপ্রকাশ করে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, পরিস্থিতির উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে সরকার।