রজবুন্নেছার বয়স (৫৫) বছর। বাড়ি জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দক্ষিণ দেওরগাছ গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা তবারক আলীর স্ত্রী। দক্ষিণ দেওরগাছ গ্রামে অন্যের জমিতে একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন রজবুন্নেছা। জীবিকার জন্য বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করেও তিনি কোনো কাজ পানন। একদিন সাতছড়ি উদ্যানে ঘুরতে এসে তার চোখে পড়ে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের মালামালের দিকে। পর্যটকদের ফেলে যাওয়া খালি বোতল ও বিস্কুট, চানাচুর ও চিপসের প্যাকেট উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে জমে আবজর্নার সৃষ্টি করেছে। সেই থেকে প্রতিদিন তিনি উদ্যানের বিভিন্ন স্থান ঘুরে প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত মালামালগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে ভাঙারি দোকানে বিক্রি করছেন। এতে তার দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় হচ্ছে। প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত মালামাল বিক্রি করে রজবুন্নেছার জীবিকার পথ হয়েছে। সেই সঙ্গে সাতছড়ি উদ্যানের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা পাচ্ছে।
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। প্রতিদিন এ উদ্যানে ভ্রমণ এসে পর্যটকরা নানা প্রজাতির উদ্ভিত ও বন্যপ্রাণী অবলোকন করেন। ভ্রমণকালে প্রায় পর্যটক চিপস, চানাচুর ও বিস্কুট খেয়ে খালি প্যাকেট উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে ফেলে দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, কোমল পানীয় পান করে খালি বোতল ফেলা হচ্ছে এদিক সেদিক। এতে সাতছড়ি উদ্যানের প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকিতে পড়ছে।
এদিকে জাতীয় উদ্যানের পরিবেশ রক্ষায় নজর দিয়েছেন রজবুন্নেছা নামে এক নারী। জীবিকা নির্বাহে তিনি প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত মালামাল সংগ্রহ করে ভাঙারি দোকানে বিক্রি করেন। এখান থেকে উপার্জনের অর্থে চলে তার পরিবার।
সম্প্রতি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে কথা হয় রজবুন্নেছার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করছে। অনেক কষ্টে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। এক ছেলে বিয়ে করেছে। তবে ছেলেরা স্বচ্ছল না। তাদের আয় রোজগার তেমন একটা নেই। জমিজমা না থাকায় আমাকে অন্য লোকদের জমিতে ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে বসবাস করতে হচ্ছে। ভাতার কার্ডের জন্য অনেকবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েছি তবে তাতে লাভ হয়নি। সরকারের আশ্রয়ণেও মাথা গোজার ঠাঁই হয়নি।’
রজবুন্নেছা আরো বলেন, ‘প্লাস্টিকের মালামাল উদ্যানের প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতির কারণ হতে পারে সেই চিন্তা থেকে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি নিজের চলার পথ তৈরি করতে পেরে আমি আনন্দিত। সরকার যদি আমার জন্য একটি ঘর ও আর্থিক সহযোগিতা করে তাহলে আমি খুব উপকৃত হব।’
আলিফ সোবহান কলেজের প্রভাষক মো. ফয়সল আহমেদ বলেন, উদ্যানে আগত প্রায় পর্যটক ব্যবহারের পর প্লাস্টিকের বোতল ও খাবারের প্যাকেটগুলো ফেলে দেন। এটি পরিবেশের জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ হচ্ছে। রজবুন্নেছার মতো নারী উদ্যান থেকে পরিত্যক্ত এসব প্লাস্টিকের মালামাল কুড়িয়ে নিয়ে বিক্রির মাধ্যমে নিজে লাভবান হচ্ছেন তার সাথে রক্ষা পাচ্ছে উদ্যানের প্রাকৃতিক পরিবেশ।
একই কলেজের প্রভাষক আবুল খায়ের বলেন, প্লাস্টিকের বোতলের কারণে মাটির উবরতা নষ্ট হয়। এখানে রজবুন্নেছা উদ্যানের নানা স্থান ঘুরে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের মালামাল সংগ্রহ করছে। এতে তিনি নিজেও লাভবান হচ্ছে, সেইসঙ্গে উদ্যানের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা পাচ্ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জসিম উদ্দিন বলেন, এ উদ্যানে বন্যপ্রাণী আছে। আছে নানা প্রজাতির উদ্ভিত। এসব অবলোকন করে পর্যটকরা মুগ্ধ হচ্ছেন। কিন্তু অনেক পর্যটক খালি বোতল ও খাবারের প্যাকেট ফেলে উদ্যানের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিরাট ক্ষতি করছেন। এখানে উদ্যানের নিকটবর্তী গ্রাম থেকে এক নারী এসে এসব কুড়িয়ে নিয়ে বিক্রি করছেন। এতে তিনি কিছু টাকা পাচ্ছে। উদ্যানের বিরাট উপকার হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, রজবুন্নেছার কথা শুনে অত্যন্ত ভাল লেগেছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল উদ্যান থেকে কুড়িয়ে সংগ্রহ করে তিনি নিজের চলার পথ তৈরি করেছেন। এ নারী পরিবেশের জন্য বিরাট উপকার করছেন। তাকে সরকারিভাবে সহায়তা করা হোক।