শারীরিক শিক্ষার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে-Physical education is the education which seeks to provide opportunity for the people to be Physically, Mentally, Emotionally, Socially and Spiritually adjusted individual in a democratic socity.
অর্থ্যাৎ শারীরিক শিক্ষা হল সেই শিক্ষা যা মানুষকে শারীরিক, মানসিক, আবেগিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিকভাবে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় খাপ খেয়ে নেয়ার সুযোগ দান করে। আরো সহজভাবে বললে বলা যায়- যে শিক্ষা মানুষকে পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় মানিয়ে নেয়ার সুযোগ দান করে তাকে শারীরিক শিক্ষা বলে।
প্রকৃতপক্ষে শারীরিক শিক্ষা হচ্ছে মানুষের বাস্তব জীবনের সামগ্রিক শিক্ষা।
শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাঃ
শারীরিক শিক্ষার ইতিহাস মানব জন্মের মতো পুরাতন। জন্ম গ্রহণের পর থেকে মানুষ শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ় ও বার্ধক্যের প্রতিটি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকার শারীরিক কার্যকলাপের উপর নির্ভরশীল। শারীরিক কার্যকলাপের বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রয়োগ চর্চা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষ সুস্থ থাকার সার্বিক নিয়মকানুন আয়ত্ব করতে পারে।
তাই, মানবজীবনে শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। জন্ম গ্রহণের পর শৈশব পেরিয়ে একটি শিশু যখন বিদ্যালয়ে
পদার্পন করে তখন থেকেই সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি শারীরিক শিক্ষাতেও অবতীর্ণ হয়। কেননা, তাকে বিদ্যালয়ে যেতে হয়, শ্রেণীকক্ষে কাজ করতে হয়, তাকে বাড়ি ফিরতে হয় এবং অবসরে খেলাধুলা করতে হয়। তাই শিশুকে যদি সঠিক শারীরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা যায় তাহলে বাস্তব জীবনে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম হিসেবে নিজেকে বিকশিত করতে পারবে।
শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী তাদের সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বয়সোপযোগী শারীরিক শিক্ষা ছাত্র-ছাত্রীর দেহ ও মনকে সঠিকভাবে বিকশিত হতে সহায়তা করতে পারে। এতে তারা সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে ব্যক্তিগত জীবনকে সুন্দর করার পাশাপাশি পারিবারিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
শারীরিক শিক্ষার মূল্যায়ন:-
যে জাতি যত বেশী শিক্ষিত সে জাতি ততবেশী উন্নত- এটা সকলেরই জানা কথা। কিন্তু, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে যে, যে জাতি শারীরিকভাবে যত বেশী সক্ষম এবং যে জাতির মধ্যে সুশিক্ষা বিদ্যমান তারাই আজ উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে। বর্তমান বিশ্বের উন্নত দেশ সমূহের প্রতিটি নাগরিক শিক্ষার ব্যপারে যতটুকু সচেতন শারীরিকভাবে কর্মক্ষম, সুস্থ ও সবল থাকার ব্যপারে ও সমান মনযোগী। চীন, জাপান, কোরিয়া প্রভৃতি দেশের যে কোন চাকুরীতে নিয়োগের পূর্বে একজন প্রার্থী শারীরিকভাবে কতটুকু সক্ষম তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। ফলে, দেখা গেছে, হিরোশিমা নাগাসাকি ট্র্যাজেডীর মাত্র চৌদ্দ বছরের ভেতরেই জাপান একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
ইউরোপ-আমেরিকার উন্নতির মূলেও রয়েছে শারীরিক শিক্ষার এবং শারীরিক সক্ষমতার চর্চা ও বাস্তব প্রয়োগ।
কিন্তু, আমাদের এ বাংলাদেশে দেখা যায় এর উল্টো চিত্র। একজন ব্যক্তি যখন দেখেন তার সন্তান খেলাধুলায় ভাল করছে তখন তিনি তাঁর সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায় শংকিত হয়ে সন্তানটিকে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখায় সচেষ্ট হয়ে উঠেন। ফলে মৃত্যু ঘটে একটি অপার সম্ভাবনার।
শিক্ষা ক্ষেত্রেও সমান অবস্থা। শারীরিক শিক্ষককে অনেকেই মনে করেন পিটি স্যার কিংবা শরীর চর্চা শিক্ষক। অথচ প্রকৃত পক্ষে একজন শারীরিক শিক্ষক হলেন সহকারী শিক্ষক। তার বিষয় হল শারীরিক শিক্ষা। এহেন অবমূল্যায়নের কারণে শারীরিক শিক্ষা গ্রহণের ব্যপারে প্রতিনিয়ত অনীহা জন্ম নিচ্ছে। কিন্তু, সঠিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায়, শারীরিক অক্ষমতার কারণেই এদেশের মানুষ কর্মের প্রতি উদাসীন। মানুষের মাঝে বিরাজ করছে আলসেমী এবং অবহেলা। ফলে অমিত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশ বারবার দুর্নীতিতে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে। ক্ষুন্ন হচ্ছে মানবতাবোধ।
এসকল অনীহা, আলসেমী আর কর্মের প্রতি উদাসীনতা দূর করার বাস্তব সম্মত উপায় হচ্ছে মানুষকে সঠিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা প্রদান। যাতে করে মানুষ পরিশ্রমী ও ত্যাগী হয়ে গড়ে উঠতে পারে।
এজন্যে প্রয়োজন শারীরিক শিক্ষাকে আরো বেশী প্রাধান্য দেয়া, শারীরিক শিক্ষকের যথার্থ মূল্যায়ন এবং তার কাজের ক্ষেত্রকে
সহজ করে গড়ে তোলা।
সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি যদি শারীরিক শিক্ষার বিষয়টাকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করা যায় তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা কর্মক্ষম, সুস্থ ও সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত শারীরিক শিক্ষাকে অন্যান্য শিক্ষার মত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করলে- আশা করা যায় আমাদের অনাগত দিনগুলি দুর্নীতির মরণ ছোবলে নিষ্পেষিত হবে না। মানুষ হবে সুস্থ, সবল, কর্মঠ ও আত্মত্যাগী।
আর, তখনি, স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবিক হয়ে ধরা দেবে। আশা করতে তো আর দোষ নেই।
সাইফুর রহমান
সিনিয়র শিক্ষক
ডিসিপি হাইস্কুল চুনারুঘাট।