হবিগঞ্জ ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo চুনারুঘাটে ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে মোটরসাইকেল আরোহী পর্যটকের মৃত্যু Logo অসুস্থ সাবেক কৃতি ফুটবলার আকছিরের পাশে চুনারুঘাট উপজেলা ফুটবল একাডেমি  Logo আহম্মদাবাদ ইউনিয়নে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন Logo শহীদ মিনারে আহম্মদাবাদ ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের শ্রদ্ধা নিবেদন Logo সীমান্তের ত্রাস গণধর্ষণ মামলার আসামী আবুল গ্রেপ্তার Logo চুনারুঘাটে  স্ত্রীর যৌতুক মামলায় বিয়ে পাগল স্বামী গ্রেপ্তার Logo নবাগত ইউএনওর সাথে চুনারুঘাট প্রেসক্লাবের পরিচিত সভা ও মতবিনিময় Logo মাধবপুরে বিএনপির কর্মী সভা Logo ইউএনও’র পরিচিতি সভা বর্জন করলেন চুনারুঘাটে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ Logo শায়েস্তাগঞ্জে অর্থনৈতিক শুমারির কাজে জনপ্রতিনিধি ও আ’লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মী!

একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ও হবিগঞ্জ-৪ এর রাজনৈতিক ঐতিহ্য

  • ডেস্ক রিপোর্ট:
  • আপডেট সময় ১১:৫১:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৪৩ বার পড়া হয়েছে

শেখ শফিকুল ইসলাম। ডাক নাম শামীম। বয়সে আমার দু’বছরের ছোট। স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভাটির গ্রামে জন্ম। পেশায় ছিলেন ঝাল মুড়ি ব্যবসায়ী। খেটে খাওয়া হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়, শাসকদের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে ঢাকার সাভারে প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি আমার ভালোবাসার মাটি, ছাতিয়ান ইউনিয়নের শিমুলঘর গ্রামের ধুলোবালিতে বড় হয়েছিলেন। এ মৃত্যু আমার এলাকার মানুষকে ভীষণ ভাবে শোকাচ্ছন্ন করেছে। অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি, নিষ্ঠুরতম ঘটনাটির পরেই বরাবরের মতো ঐতিহ্যবাহী সায়হাম পরিবার সহায়তা নিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে। এলাকাবাসী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে এই মৃত্যুর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবেন। যথাযথ ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াবেন। 

হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর ও চুনারুঘাট রাজনৈতিক ভাবে একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা। একদিকে আওয়ামী লীগ ও অন্যদিকে সম্ভ্রান্ত ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবার, সায়হাম পরিবারকে ঘিরে এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের ক্ষমতার রাজনীতি আবর্তিত হয়ে আসছে। এরশাদ আমলে জাতীয় পার্টি বনাম আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ আমলে, আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি, এভাবেই ক্ষমতার রাজনীতি বিকশিত হয়েছে। দীর্ঘদিন এরশাদ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন মরহুম সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন মরহুম সৈয়দ মহিবুল হাসান, আওয়ামী লীগ আমলে দীর্ঘদিন এমপি, এক মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন মরহুম এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, আর এক মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন এডভোকেট মাহবুব আলী এমপি। দীর্ঘদিন উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন, সায়হাম পরিবারের স্বজ্জন মানুষ বিএনপি নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান। 

নানা সময়ে ক্ষমতার পালাবদলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল তছনছ হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। দলাদলি মারামারি, খুন-খারাবি, মামলা, হামলায় জনজীবন অতিষ্ঠ ওঠে। এক্ষেত্রে সব সময়ই মাধবপুর-চুনারুঘাট ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি  রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর, মাধবপুরের প্রত্যন্ত  অঞ্চলের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায়  সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান সাহেবের নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার অবিরাম প্রচেষ্টা সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। 

আওয়ামীলীগ সরকারের নিষ্ঠুর বিদায় হলেও, মাধবপুর-চুনারুঘাটে কোন দলীয় লোককে শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে  প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। 

চুনারুঘাটে উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা সৈয়দ লিয়াকত হাসান ও সাবেক পৌর মেয়র নাজিমুদ্দিন শামসুর ভূমিকা দারুণ ভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে দু’টি উপজেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়নি। এমন দুঃসময়েও আওয়ামী লীগের কোন নেতাকে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াতে হয়নি। এর অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে, এ এলাকার তারকা রাজনীতিবিদদের মধ্যে সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সম্পর্ক, প্রতিহিংসা বিবর্জিত রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা। অত্যন্ত শক্তিশালী পারিবারিক প্রভাব, মন্ত্রী এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও অতীতে সায়হাম  পরিবারের কাউকে যেমন প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে দেখা যায়নি, মরহুম এনামুল হক মোস্তফা শহীদ এবং ব্যক্তি এডভোকেট মাহবুব আলীকেও মন্ত্রীত্বের ক্ষমতা ব্যবহার করে, ষড়যন্ত্রমূলক হয়রানি ও প্রতিহিংসা করে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির কোন প্রয়াস নিতে দেখা যায়নি। যার ফলশ্রুতিতে পরস্পর বিরোধী রাজনীতি করেও, এ এলাকার রাজনীতিবিদদের মধ্যে সামাজিক সৌহার্দের সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। 

আজ সারাদেশেই অস্থিরতা বিরাজমান, তবুও মাধবপুর চুনারুঘাটের জনপদ শান্ত। এলাকাবাসী চায় এ শান্তির বার্তা অব্যাহত থাকুক। সায়হাম পরিবার এবং এলাকার রাজনীতিবিদদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সামাজিক সম্পর্কের ধারাটি অটুট থাকুক। শোনা যাচ্ছে, শিমুলঘর গ্রামের অকালে নিহত হওয়া নির্ভেজাল নিষ্কলুষ শামীমের মৃত্যুতে মামলা দায়ের হচ্ছে। গণমুখে শোনা যায়, এ মামলায় মাধবপুরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অনেকে আসামী হচ্ছেন! অবশ্যই মামলা হোক, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক, কিন্তু এটিকে কেন্দ্র করে নিরপরাধ মানুষকে জড়িয়ে, কোন ভাবেই যেন মামলাটির মেরিট নষ্ট না হয়। আর যদি কোন ভাবে নির্দোষ মানুষেরা এই মামলায় জড়িয়ে যায়, একদিকে মামলাটির মেরিন নষ্ট হবে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি সঠিক বিচার না পেলে আরও অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এটি কোন ভাবেই কারও কাম্য নয়।

অতীতে মাধবপুর চুনারুঘাটে সায়হাম পরিবারসহ  বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদরা সামাজিক সৌহার্দ রক্ষায় যেভাবে ভূমিকা রেখেছেন, আজকের তরুণ নেতৃত্বরাও সেই ঐতিহ্যকে অনুসরণ করবেন বলে বিশ্বাস করি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান এই এলাকার কৃতি সন্তান। পরিবেশ আন্দোলনের পুরোধা এই মানুষটির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন, দল মত নির্বিশেষে এমন একজন মানুষ ও মাধবপুর-চুনারঘাটে খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা আমার সন্দেহ। সেই মানুষটিও সিপাহীসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রহ:) ও শাহ ফতেহগাজীর  (রহ:) পুণ্যভূমিতে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ও সামাজিক সহাবস্থানের সংস্কৃতিতে কালো মেঘের ছায়া দেখলে মনোকষ্টে বিব্রত হবেন বলেই বিশ্বাস করি। ক্ষমতা বলয়ে থেকে যাঁরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ এর মাধ্যমে দুর্নীতি, দুঃশাসনের নিমজ্জিত হয়েছিলেন তাদের শাস্তি হোক, কিন্তু      মাধবপুর-চুনারঘাটে সম্প্রীতির রাজনীতির ঐতিহ্যটি অব্যাহত থাকুক। হিংসা বিদ্বেষকে পরিহার করে, অতীতের ধারাবাহিকতা রক্ষার মধ্য দিয়ে, সারা দেশের রাজনীতির দৃষ্টান্ত হয়ে উঠুক। 

সবার জন্য শুভকামনা।। 

লেখক: কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক 

ইমেইল : mahssan8691@gmail.com

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

খন্দকার আলাউদ্দিন

হ্যালো, আমি খন্দকার আলাউদ্দিন, আপনাদের চারিপাশের সংবাদ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।
জনপ্রিয় সংবাদ

চুনারুঘাটে ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে মোটরসাইকেল আরোহী পর্যটকের মৃত্যু

একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ও হবিগঞ্জ-৪ এর রাজনৈতিক ঐতিহ্য

আপডেট সময় ১১:৫১:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শেখ শফিকুল ইসলাম। ডাক নাম শামীম। বয়সে আমার দু’বছরের ছোট। স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভাটির গ্রামে জন্ম। পেশায় ছিলেন ঝাল মুড়ি ব্যবসায়ী। খেটে খাওয়া হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়, শাসকদের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে ঢাকার সাভারে প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি আমার ভালোবাসার মাটি, ছাতিয়ান ইউনিয়নের শিমুলঘর গ্রামের ধুলোবালিতে বড় হয়েছিলেন। এ মৃত্যু আমার এলাকার মানুষকে ভীষণ ভাবে শোকাচ্ছন্ন করেছে। অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি, নিষ্ঠুরতম ঘটনাটির পরেই বরাবরের মতো ঐতিহ্যবাহী সায়হাম পরিবার সহায়তা নিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে। এলাকাবাসী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে এই মৃত্যুর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবেন। যথাযথ ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াবেন। 

হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর ও চুনারুঘাট রাজনৈতিক ভাবে একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা। একদিকে আওয়ামী লীগ ও অন্যদিকে সম্ভ্রান্ত ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবার, সায়হাম পরিবারকে ঘিরে এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের ক্ষমতার রাজনীতি আবর্তিত হয়ে আসছে। এরশাদ আমলে জাতীয় পার্টি বনাম আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ আমলে, আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি, এভাবেই ক্ষমতার রাজনীতি বিকশিত হয়েছে। দীর্ঘদিন এরশাদ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন মরহুম সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন মরহুম সৈয়দ মহিবুল হাসান, আওয়ামী লীগ আমলে দীর্ঘদিন এমপি, এক মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন মরহুম এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, আর এক মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন এডভোকেট মাহবুব আলী এমপি। দীর্ঘদিন উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন, সায়হাম পরিবারের স্বজ্জন মানুষ বিএনপি নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান। 

নানা সময়ে ক্ষমতার পালাবদলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল তছনছ হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। দলাদলি মারামারি, খুন-খারাবি, মামলা, হামলায় জনজীবন অতিষ্ঠ ওঠে। এক্ষেত্রে সব সময়ই মাধবপুর-চুনারুঘাট ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি  রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর, মাধবপুরের প্রত্যন্ত  অঞ্চলের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায়  সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান সাহেবের নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার অবিরাম প্রচেষ্টা সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। 

আওয়ামীলীগ সরকারের নিষ্ঠুর বিদায় হলেও, মাধবপুর-চুনারুঘাটে কোন দলীয় লোককে শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে  প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। 

চুনারুঘাটে উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা সৈয়দ লিয়াকত হাসান ও সাবেক পৌর মেয়র নাজিমুদ্দিন শামসুর ভূমিকা দারুণ ভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে দু’টি উপজেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়নি। এমন দুঃসময়েও আওয়ামী লীগের কোন নেতাকে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াতে হয়নি। এর অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে, এ এলাকার তারকা রাজনীতিবিদদের মধ্যে সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সম্পর্ক, প্রতিহিংসা বিবর্জিত রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা। অত্যন্ত শক্তিশালী পারিবারিক প্রভাব, মন্ত্রী এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও অতীতে সায়হাম  পরিবারের কাউকে যেমন প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে দেখা যায়নি, মরহুম এনামুল হক মোস্তফা শহীদ এবং ব্যক্তি এডভোকেট মাহবুব আলীকেও মন্ত্রীত্বের ক্ষমতা ব্যবহার করে, ষড়যন্ত্রমূলক হয়রানি ও প্রতিহিংসা করে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির কোন প্রয়াস নিতে দেখা যায়নি। যার ফলশ্রুতিতে পরস্পর বিরোধী রাজনীতি করেও, এ এলাকার রাজনীতিবিদদের মধ্যে সামাজিক সৌহার্দের সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। 

আজ সারাদেশেই অস্থিরতা বিরাজমান, তবুও মাধবপুর চুনারুঘাটের জনপদ শান্ত। এলাকাবাসী চায় এ শান্তির বার্তা অব্যাহত থাকুক। সায়হাম পরিবার এবং এলাকার রাজনীতিবিদদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সামাজিক সম্পর্কের ধারাটি অটুট থাকুক। শোনা যাচ্ছে, শিমুলঘর গ্রামের অকালে নিহত হওয়া নির্ভেজাল নিষ্কলুষ শামীমের মৃত্যুতে মামলা দায়ের হচ্ছে। গণমুখে শোনা যায়, এ মামলায় মাধবপুরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অনেকে আসামী হচ্ছেন! অবশ্যই মামলা হোক, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক, কিন্তু এটিকে কেন্দ্র করে নিরপরাধ মানুষকে জড়িয়ে, কোন ভাবেই যেন মামলাটির মেরিট নষ্ট না হয়। আর যদি কোন ভাবে নির্দোষ মানুষেরা এই মামলায় জড়িয়ে যায়, একদিকে মামলাটির মেরিন নষ্ট হবে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি সঠিক বিচার না পেলে আরও অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এটি কোন ভাবেই কারও কাম্য নয়।

অতীতে মাধবপুর চুনারুঘাটে সায়হাম পরিবারসহ  বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদরা সামাজিক সৌহার্দ রক্ষায় যেভাবে ভূমিকা রেখেছেন, আজকের তরুণ নেতৃত্বরাও সেই ঐতিহ্যকে অনুসরণ করবেন বলে বিশ্বাস করি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান এই এলাকার কৃতি সন্তান। পরিবেশ আন্দোলনের পুরোধা এই মানুষটির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন, দল মত নির্বিশেষে এমন একজন মানুষ ও মাধবপুর-চুনারঘাটে খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা আমার সন্দেহ। সেই মানুষটিও সিপাহীসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রহ:) ও শাহ ফতেহগাজীর  (রহ:) পুণ্যভূমিতে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ও সামাজিক সহাবস্থানের সংস্কৃতিতে কালো মেঘের ছায়া দেখলে মনোকষ্টে বিব্রত হবেন বলেই বিশ্বাস করি। ক্ষমতা বলয়ে থেকে যাঁরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ এর মাধ্যমে দুর্নীতি, দুঃশাসনের নিমজ্জিত হয়েছিলেন তাদের শাস্তি হোক, কিন্তু      মাধবপুর-চুনারঘাটে সম্প্রীতির রাজনীতির ঐতিহ্যটি অব্যাহত থাকুক। হিংসা বিদ্বেষকে পরিহার করে, অতীতের ধারাবাহিকতা রক্ষার মধ্য দিয়ে, সারা দেশের রাজনীতির দৃষ্টান্ত হয়ে উঠুক। 

সবার জন্য শুভকামনা।। 

লেখক: কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক 

ইমেইল : mahssan8691@gmail.com