হবিগঞ্জ ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ জুলাই ২০২৪, ৬ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo সৎ প্রশাসকদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা কোথায়? Logo চুনারুঘাটে ৩৯ বছরের বর্ণাঢ্য শিক্ষকতা পেশার অরবিন্দ দত্তের সমাপ্তি Logo ব্যারিস্টার সুমন এমপিকে সংবর্ধনা দিল চুনারুঘাট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি Logo চুনারুঘাটে ১৭ কেজি গাঁজা সহ কারবারি গ্রেপ্তার Logo ৪র্থ বারের মতো জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন চুনারুঘাট থানার এসআই লিটন রায় Logo ব্যারিস্টার সুমনকে হত্যার পরিকল্পনাকারী সোহাগ গ্রেফতার Logo ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় হত্যা মামলার আসামি জালাল গ্রেপ্তার Logo ব্যারিস্টার সুমনকে হত্যার পরিকল্পনার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন Logo চুনারুঘাটে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হলেন তৌফিক মিয়া তালুকদার Logo ব্যারিস্টার সুমনের হত্যার পরিকল্পনারকারীদের গ্রেফতারে দাবীতে চুনারুঘাটে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ 

ওসির সহানুভূতিতে অন্ধকার জীবন থেকে আলোর পথে এখন নাঈমা

ওসির সহানুভূতিতে অন্ধকার জীবন থেকে আলোর পথে এখন নাঈমা। জীবিকার তাগিদে চুনারুঘাট উপজেলা এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে বাধ্য হয়েছিলেন কালিশিরি গ্রামের জন্মান্ধ ভিক্ষুক আব্দুর রহিম।

জন্মের পরেই দুই চোখের আলো হারিয়ে ফেলেন এই হতভাগ্য বৃদ্ধ। সেখানে অন্ধ নানাকে সাহায্য করার জন্য কাছে থাকত আব্দুর রহিমের নাতনি নাঈমা।

যে সড়কের পাশে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে নাঈমার জীবন। এ বিষয়টি নজরে পড়ে চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাশেদুল হকের। তার উদ্যোগে সেখান থেকে শিশু নাঈমা ও তার নানা বেঁচে থাকায় মিলল নতুন অবলম্বন।

চোখের পলকে বদলে যায় নাঈমা এবং নানা আব্দুর রহিমের জীবন পথে গতি। এমন মানবিক পদক্ষেপে শিশু নাঈমার জীবনে শৈশব আর সম্ভাবনা দুটোই ফিরে এসেছে। সে এখন রাস্তায় নামে, তবে ভিক্ষা করতে নয়, স্কুলে যেতে।

এদিকে নাঈমার ভরনপোষণ এবং সংসার খরচ চালাতে মাসিক ৬ হাজার টাকা অনুদান নির্ধারণ করে নানা আব্দুর রহিমকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে ফিরিয়ে এনেছেন তিনি।

পেশাগত দায়িত্ব পালনের অবসরে সামর্থ্যের মধ্যে সমাজের বঞ্চিত আর উপেক্ষিত মানুষের জীবনকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করেন ওসি রাশেদুল।

এরই ধারাবাহিকতায় এবার ওসি রাশেদুল হকের মানবিক সহায়তায় বদলে গেল রাস্তার ধুলায় গড়ানো অসহায় নানা-নাতনির জীবন।

স্কুলে ভর্তির পর নতুন বই, খাতা, ব্যাগ পেয়ে আনন্দে নির্বাক নাঈমা। নতুন জামা গায়ে চাপিয়ে ওসি স্যারের গাড়িতে করে প্রথম দিন স্কুলে আসার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বারবার খেই হারিয়ে ফেলিছিল সে অতি উচ্ছ্বাসে।

এদিকে মাসিক অনুদানের পাশাপাশি নানা আব্দুর রহিমের জন্য সমাজসেবার মাধ্যমে একটি ছোট্ট দোকানের ব্যবস্থা করেছেন ওসি। কিছুদিনের মধ্যেই সেটি আব্দুর রহিমকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা বারেন্দ্র রায়।

ওসি রাশেদুলের এই পদক্ষেপ এখন চুনারুঘাটের মানুষের মুখে মুখে। অথচ এ নিয়ে কথা বলতে ইতস্তত তিনি নিজেই। এ বিষয়ে জানতে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে বারবার শুধু বলছিলেন– মানুষ হিসেবে দু’জন অসহায় মানুষের প্রতি নিজের দায়িত্ব পালন করেছি।

দেশের দু’জন মানুষের জীবনে যদি নিরাপত্তা দিতে না পারি দেশের নিরাপত্তার অঙ্গীকার নিয়ে গায়ে চাপানো এই ইউনিফর্মের সম্মান রক্ষা করব কী করে।

জন্মান্ধ আব্দুর রহমান জানান, তাঁর দুই ছেলে পাঁচ মেয়ের মধ্যে কেউ তার খবর রাখেনি। মেয়ে হালিমা বাবার কষ্ট বুঝে তাকে সাহায্য করতে নিজের মেয়ে নাঈমাকে পাঠিয়ে দেন। ওসি রাশেদুল তাদের জীবনে আসবেন– তা স্বপ্নেও ভাবেননি। নাঈমার জীবন শেষ হতে হতে নতুন করে শুরু হলো।

কালিশিড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, বছর শেষের দিকে ভর্তির কোনো নিয়ম নেই। ওসি রাশেদুলের অনুরোধে নাঈমাকে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতেই তার ভর্তি নিশ্চিত করা হবে।

সমাজসেবা কর্মকর্তা বারেন্দ্র রায় জানান, ওসির মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে এই উদ্যোগকে বাস্তবায়নে তৎপরতা শুরু হয়েছে।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

খন্দকার আলাউদ্দিন

হ্যালো, আমি খন্দকার আলাউদ্দিন, আপনাদের চারিপাশের সংবাদ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।
জনপ্রিয় সংবাদ

সৎ প্রশাসকদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা কোথায়?

ওসির সহানুভূতিতে অন্ধকার জীবন থেকে আলোর পথে এখন নাঈমা

আপডেট সময় ১২:১৩:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৩

ওসির সহানুভূতিতে অন্ধকার জীবন থেকে আলোর পথে এখন নাঈমা। জীবিকার তাগিদে চুনারুঘাট উপজেলা এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে বাধ্য হয়েছিলেন কালিশিরি গ্রামের জন্মান্ধ ভিক্ষুক আব্দুর রহিম।

জন্মের পরেই দুই চোখের আলো হারিয়ে ফেলেন এই হতভাগ্য বৃদ্ধ। সেখানে অন্ধ নানাকে সাহায্য করার জন্য কাছে থাকত আব্দুর রহিমের নাতনি নাঈমা।

যে সড়কের পাশে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে নাঈমার জীবন। এ বিষয়টি নজরে পড়ে চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাশেদুল হকের। তার উদ্যোগে সেখান থেকে শিশু নাঈমা ও তার নানা বেঁচে থাকায় মিলল নতুন অবলম্বন।

চোখের পলকে বদলে যায় নাঈমা এবং নানা আব্দুর রহিমের জীবন পথে গতি। এমন মানবিক পদক্ষেপে শিশু নাঈমার জীবনে শৈশব আর সম্ভাবনা দুটোই ফিরে এসেছে। সে এখন রাস্তায় নামে, তবে ভিক্ষা করতে নয়, স্কুলে যেতে।

এদিকে নাঈমার ভরনপোষণ এবং সংসার খরচ চালাতে মাসিক ৬ হাজার টাকা অনুদান নির্ধারণ করে নানা আব্দুর রহিমকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে ফিরিয়ে এনেছেন তিনি।

পেশাগত দায়িত্ব পালনের অবসরে সামর্থ্যের মধ্যে সমাজের বঞ্চিত আর উপেক্ষিত মানুষের জীবনকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করেন ওসি রাশেদুল।

এরই ধারাবাহিকতায় এবার ওসি রাশেদুল হকের মানবিক সহায়তায় বদলে গেল রাস্তার ধুলায় গড়ানো অসহায় নানা-নাতনির জীবন।

স্কুলে ভর্তির পর নতুন বই, খাতা, ব্যাগ পেয়ে আনন্দে নির্বাক নাঈমা। নতুন জামা গায়ে চাপিয়ে ওসি স্যারের গাড়িতে করে প্রথম দিন স্কুলে আসার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বারবার খেই হারিয়ে ফেলিছিল সে অতি উচ্ছ্বাসে।

এদিকে মাসিক অনুদানের পাশাপাশি নানা আব্দুর রহিমের জন্য সমাজসেবার মাধ্যমে একটি ছোট্ট দোকানের ব্যবস্থা করেছেন ওসি। কিছুদিনের মধ্যেই সেটি আব্দুর রহিমকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা বারেন্দ্র রায়।

ওসি রাশেদুলের এই পদক্ষেপ এখন চুনারুঘাটের মানুষের মুখে মুখে। অথচ এ নিয়ে কথা বলতে ইতস্তত তিনি নিজেই। এ বিষয়ে জানতে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে বারবার শুধু বলছিলেন– মানুষ হিসেবে দু’জন অসহায় মানুষের প্রতি নিজের দায়িত্ব পালন করেছি।

দেশের দু’জন মানুষের জীবনে যদি নিরাপত্তা দিতে না পারি দেশের নিরাপত্তার অঙ্গীকার নিয়ে গায়ে চাপানো এই ইউনিফর্মের সম্মান রক্ষা করব কী করে।

জন্মান্ধ আব্দুর রহমান জানান, তাঁর দুই ছেলে পাঁচ মেয়ের মধ্যে কেউ তার খবর রাখেনি। মেয়ে হালিমা বাবার কষ্ট বুঝে তাকে সাহায্য করতে নিজের মেয়ে নাঈমাকে পাঠিয়ে দেন। ওসি রাশেদুল তাদের জীবনে আসবেন– তা স্বপ্নেও ভাবেননি। নাঈমার জীবন শেষ হতে হতে নতুন করে শুরু হলো।

কালিশিড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, বছর শেষের দিকে ভর্তির কোনো নিয়ম নেই। ওসি রাশেদুলের অনুরোধে নাঈমাকে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতেই তার ভর্তি নিশ্চিত করা হবে।

সমাজসেবা কর্মকর্তা বারেন্দ্র রায় জানান, ওসির মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে এই উদ্যোগকে বাস্তবায়নে তৎপরতা শুরু হয়েছে।