বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮০ বছরের রিজার্ভের মুদ্রা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একচেটিয়া রাজত্ব হারাতে যাচ্ছে মার্কিন ডলার। ইউক্রেন যুদ্ধ ওলটপালট করে দিয়েছে ডলারের একচ্ছত্র আধিপত্যকে।
ডলারের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতার বিপদ টের পেয়ে শুধু রাশিয়া, চীন, ব্রাজিল, ভারত, সৌদি আরবই নয়, পশ্চিমা দেশগুলোও এখন ডলারের বিকল্প খুঁজছে। ডলারের এই কর্তৃত্ব হারানোর বিষয়ে শঙ্কিত খোদ মার্কিন নীতি নির্ধারকরাও।
বিশ্বব্যাপী ৮০ বছরের কর্তৃত্ব হারাচ্ছে মার্কিন ডলার!
বিশ্বে রিজার্ভ হিসেবে ব্যবহৃত মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলারের অবস্থান বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫৯ শতাংশে। অথচ দুই দশক আগেও তা ছিলো ৭১ শতাংশ। এই হার দ্রুত কমবে বলেই ধারণা অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে থাকা দেশগুলোর।
মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আবির্ভূত হয় যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে তেলের দাম নির্ধারণ ডলারে হওয়ায় একক মুদ্রা হিসেবে বিশ্বে কর্তৃত্ব স্থাপনে সমর্থ হয় মার্কিন মূদ্রা।
আর তেলের দাম ডলারে নির্ধারণ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কিংবা শত্রু মোটামুটি সব দেশকেই তেল আমদানি কিংবা রফতানির খাতিরে ডলারকে নিজেদের রিজার্ভে জমা রাখতে হতো। এভাবেই প্রায় ৮০ বছর ধরে রিজার্ভের মুদ্রা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যম হিসেবে একচেটিয়া রাজত্ব করছে মার্কিন ডলার।
তবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে হুমকির মুখে বিশ্বব্যাপী ডলারের রাজত্ব। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মস্কোর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অর্থনৈতিক লড়াই শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় দেশগুলো।
জব্দ করা হয় পশ্চিমা দেশগুলোতে থাকা রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শত শত বিলিয়ন ডলারের সম্পদ। এ সময়ই মূলত ডলারের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতার বিপদ অনুধাবন করতে শুরু করে বিশ্বের অনেক দেশ।
রাজনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মতের মিল না হলে ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধেও ডলারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার শুরু করবে ওয়াশিংটন। এমনটাই উপলদ্ধি এখন অনেক দেশের।
এদিকে ডলারের সাম্রাজ্য টলে যাওয়ার পেছনে ফেডারেল রিজার্ভ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তও কম দায়ী নয়। অর্থনৈতিক মন্দা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে আক্রান্ত অর্থনীতিকে উদ্ধারের উপায় হিসেবে হঠাৎ করেই সুদের হার বাড়িয়ে দেয় ফেডারেল রিজার্ভ।
এতে ধাক্কা খায় রিজার্ভ হিসেবে ডলারের ওপর নির্ভরশীল বিশ্বের অধিকাংশ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নিজেদের দেশ থেকে নগদ ডলার বের হয়ে যাওয়া ঠেকাতে এবং বিনিয়োগ ধরে রাখতে পাল্টা সুদের হার বৃদ্ধিসহ ডলারের বিপরীতে নিজেদের মুদ্রার অবমূল্যায়নে বাধ্য হয় তারা।
এ সময় মূলত রিজার্ভের মজুত হিসেবে ডলারের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতার বিপদ টের পায় এই দেশগুলো।
এ অবস্থায় ডলার বাদে অন্য মুদ্রায় রিজার্ভের মজুত রাখার প্রবণতা তৈরি হয়। তবে এই প্রবণতায় গতি যোগাচ্ছে অর্থনৈতিক শক্তি চীনের বিস্ময়কর উত্থান ও তাদের মুদ্রা ইউয়ানের বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে চীন ছিলো বিশ্বের ৬১টি দেশের প্রধান বাণিজ্য সহযোগী। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী ছিলো মাত্র ৩০টি দেশ।