আগামী এক বছরের মধ্যে ঢাকা এবং ঢাকার আশেপাশের নদীগুলোর পানির মান (রিভার স্ট্যান্ডার্ড) ঠিক করতে হবে বলে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আগামী জন্মদিনের মধ্যে নদীগুলোর পানির মান ঠিক না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারিও দেন । আজ বুধবার, ১৬ মার্চ কল্যাণপুর পাম্প হাউজে কল্যাণপুর খাল ও তুরাগ নদীর সংযোগস্থলের দূষণ ও দূষণের প্রকৃতি সরেজমিনে পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এছাড়াও সরেজমিন পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের অবৈতনিক সদস্য মালিক ফিদা আব্দুল্লা খান, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শফি তারেক, ওয়েস্ট কনসার্নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মাকসুদ সিনহা, এবং প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি জনাব খান হাবিবুর রহমান। সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন কমিশনের উপপ্রধান জনাব এম এম মহিউদ্দীন কবীর মাহিন।
ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে প্রধান প্রধান শহর এবং বন্দরগুলো নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। অথচ যেই পানির অপর নাম জীবন, সেই পানি এখন মরণ হয়ে দেখা দিয়েছে। রাজধানী ঢাকার আশেপাশে যেসব নদী এবং খাল আছে, সেগুলো বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে বিষাক্ত হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, এগুলোকে নদী বা খাল না বলে এখন বলা চলে ‘বিষাক্ত জলস্রোত’। যারা এই দূষণের পেছনে দায়ী তাদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালালেও শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়ে ওঠে না। তিনি বলেন, আগামীকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। তিনি সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। তাঁর সেই সোনার বাংলার নদীগুলোর আজ বেহাল দশা। আগামী এক বছরের মধ্যে অর্থাৎ জাতির জনকের আগামী জন্মদিনের আগের দিনের মধ্যে ঢাকার আশেপাশের নদীগুলোর পানির মান (রিভার স্ট্যান্ডার্ড) ঠিক করতে হবে। ওয়াসা, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি এই আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে যা যা করা প্রয়োজন তার সবই করা হবে। এক বছরের মধ্যে যদি নদীগুলোর অবস্থার কোনও পরিবর্তন না ঘটে তাহলে কমিশন দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে। তিনি আরও বলেন, আদালত নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণা করে তাকে বাঁচানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা কমিশনের পক্ষ থেকে সেই নির্দেশ বাস্তবায়নে কাজ করে যাবো।
কমিশনের উপপ্রধান এম এম মহিউদ্দিন কবীর মাহিন জানান, এই খালে ওয়াসার সুয়ারেজের লাইনগুলো সরাসরি এসে পড়ছে। এরপর এই হিউম্যান ওয়েস্ট খাল হয়ে সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে। এই ওয়েস্ট যদি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করে পানি শুদ্ধ করে খালে ফেলা হতো, তাহলে এই পরিমাণ দূষণ হতো না। শুধু ওয়াসা নয়, সব মিলিয়ে প্রায় ৭৭০টি পয়েন্ট আমরা পেয়েছি, যেখান থেকে এই খালে দূষিত পদার্থ পড়ছে।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের একজন প্রতিনিধি জানান, শুধু কথার কথা নয়, এখন দায়িত্ব নিতে হবে। একজন আরেকজনের ওপর দোষ চাপিয়ে লাভ নেই; বরং নির্দিষ্ট একটা সংস্থার নেতৃত্বে কাজটি সমন্বিতভাবে করতে হবে।
নদীর এই দূষণ নিয়ে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ হাবিবুর রহমান খান বলেন, সবাই স্বীকার করছে সমস্যা আছে। কিন্তু সমাধান কে করবে তার ঠিক নেই। কমিশন শুধু সুপারিশ করতে পারে। বাস্তবায়ন করবে কে? নদীর পাড়ের দায়িত্বে এক সংস্থা, নদীর পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আরেক সংস্থার। এত ভাগ থাকায় কাজটি দূরহ হয়ে পড়ছে। নদীকে বাঁচাতে হলে একটি নিদিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে সমন্বিত পরিকল্পনা করে এগোতে হবে।