হবিগঞ্জ ০৮:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo চুনারুঘাটে পানিতে ডুবে ভাইবোনের এক সাথে মৃত্যু Logo চুনারুঘাটে তহশিলদার মইনুল ইসলামে সততার ঈর্ষান্বিত হয়ে সংবাদ প্রকাশ Logo চুনারুঘাটে ফের ২২ বাংলাদেশীকে পুশইন করেছে বিএসএফ Logo মাধবপুরে ৪টি লাইসেন্স বিহীন করাতকল উচ্ছেদ অভিযান” Logo চুনারুঘাটের কালেঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের পুশ-ইন: নারী শিশুসহ ১৯ বাংলাদেশী Logo মাধবপুরে রমীজ খাঁন আলিয়া দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষার মান ও মাদ্রাসার উন্নয়নে আলোচনা ‎ Logo চুনারুঘাটে খেলাফত মজলিসের কর্মী ও সুধী সমাবেশ Logo মাধবপুরের হাট বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার, আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই Logo মাধবপুরে ৪৭টি অবৈধ স’মিল, বৈধ মাত্র ১১টি, হুমকিতে বন ও পরিবেশ Logo হবিগঞ্জে নিউ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যৌথ অভিযানে মালিক ও কর্মচারীর কারাদণ্ড

দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতায় ২৫ দিন পর ভারতীয় সেনারা ত্যাগ করে

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:৪৯:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ মার্চ ২০২২
  • ২৫৫ বার পড়া হয়েছে

পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তির পর, লন্ডন হয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। তার ঠিক ঘণ্টাখানেক আগে দিল্লিতে যাত্রবিরতি করে বঙ্গবন্ধুকে বহন করা ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানটি। তাই ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে লন্ডন থেকে ওই বিমানে উঠেছিলেন দেশটির কূটনীতিক শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি। বিমানেই বঙ্গবন্ধু তাকে বলেন, ‘দিল্লিতে ইন্দিরার সঙ্গে বৈঠকের আগেই তার কাছে একটি খবর পৌঁছানো দরকার। বাংলাদেশ থেকে মিত্রবাহিনী সদস্যদের ৩১ মার্চের মধ্যে ভারতে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে।’

দিল্লির বিমানবন্দরে এই মহামানবকে নিজে উপস্থিত হয়ে অর্ভ্যথনা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। প্রথম সাক্ষাতের বৈঠকেই বঙ্গবন্ধু তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং জানতে চান, পাকিস্তানি হানাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বুক মিলিয়ে একত্রে যুদ্ধ করা ভারতীয় সৈন্যরা বাংলাদেশ ত্যাগ করবে কবে? বঙ্গবন্ধুর অদম্য নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই সেদিন ভারতীয় সেনাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ইন্দিরা গান্ধী।

এরপর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুই দিনের সফরে ভারতে যান বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কলকাতায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি আবারো ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ তোলেন এবং তাদের প্রত্যাহারের নির্দিষ্ট তারিখ জানতে চান। বঙ্গবন্ধুর মতো একজন আপাদমস্তক গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী নেতার কথার গুরুত্ব অনুধাবন করতে আর সময় সময় নেননি শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। কিছুক্ষণ ভেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে জানান- ইয়োর এক্সেলেন্সি, ১৭ মার্চের আগেই সর্বশেষ ভারতীয় সেনাটিও বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসবে। এরপর, ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ, ভারতীয় সৈন্যরা বাংলাদেশ থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

বাংলাদেশ স্বাধীনের পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে এবং বঙ্গবন্ধু তাদের প্রত্যাহারের নির্দিষ্ট তারিখ জানতে চাওয়ার মাত্র ২৫ দিনের মাথায় ভারতীয় সেনারা বাংলাদেশ ত্যাগ করে। ঢাকা স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধুকে বিদায়ী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে স্যালুট জানিয়ে ভারতে ফিরে যায় মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা।

শুধু বঙ্গবন্ধুর মতো একজন বিশ্বনেতার পর্বতপ্রমাণ ব্যক্তিত্বের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। এর আগে এবং পরে, বিশ্বের কোনো দেশই তাদের মিত্রবাহিনীর বিদেশি সেনাদের এতো দ্রুত ফেরত পাঠাতে পারেনি।

উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইরাকের বিরুদ্ধে কুয়েতকে সাহায্য করতে সেখানে সৈন্য পাঠায় আমেরিকা, ৩০ বছর পার হলেও তারা কুয়েত ছাড়েনি এখনো। তেমনি আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া সহ সবদেশেই সাহায্য করতে ঢুকেছিল ইঙ্গ-মার্কিন ও রুশ সেনারা। কিন্তু পরবর্তীতে তারা নিজেরাই ঘাঁটি গেড়ে বসে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে মিত্র হিসেবে যোগ দিয়ে, মাত্র তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় সেনাদের বাংলাদেশ ত্যাগ করার ঘটনা ইতিহাসের এক নজিরবিহীন অধ্যায়। শুধু অনন্য কূটনৈতিক দক্ষতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রাখার আগেই তিনি তার দূরদৃষ্টি দিয়ে অনুধাবন করেছিলেন যে, দেশের মাটিতে কোনো বিদেশি সৈন্য থাকবে না। দেশকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হলে নিজেদের মানুষের সাহায্যেই তা করতে হবে এবং তিনি দুর্বার গতিতে সেই কাজ সম্পাদন করেছেন।

তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য দফতরের মহাপরিচালক ও বঙ্গবন্ধুর ভারত সফরের সাক্ষী এম আর আখতার মুকুলের ‘চল্লিশ থেকে একাত্তর’ ও ‘মুজিবের রক্ত লাল’ গ্রন্থে এ বিষয়ে বিষদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

#বঙ্গবন্ধু #ইন্দিরাগান্ধী #মুক্তিযুদ্ধ

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

খন্দকার আলাউদ্দিন

হ্যালো, আমি খন্দকার আলাউদ্দিন, আপনাদের চার পাশের সংবাদ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।
জনপ্রিয় সংবাদ

চুনারুঘাটে পানিতে ডুবে ভাইবোনের এক সাথে মৃত্যু

দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতায় ২৫ দিন পর ভারতীয় সেনারা ত্যাগ করে

আপডেট সময় ০৪:৪৯:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ মার্চ ২০২২

পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তির পর, লন্ডন হয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। তার ঠিক ঘণ্টাখানেক আগে দিল্লিতে যাত্রবিরতি করে বঙ্গবন্ধুকে বহন করা ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানটি। তাই ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে লন্ডন থেকে ওই বিমানে উঠেছিলেন দেশটির কূটনীতিক শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি। বিমানেই বঙ্গবন্ধু তাকে বলেন, ‘দিল্লিতে ইন্দিরার সঙ্গে বৈঠকের আগেই তার কাছে একটি খবর পৌঁছানো দরকার। বাংলাদেশ থেকে মিত্রবাহিনী সদস্যদের ৩১ মার্চের মধ্যে ভারতে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে।’

দিল্লির বিমানবন্দরে এই মহামানবকে নিজে উপস্থিত হয়ে অর্ভ্যথনা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। প্রথম সাক্ষাতের বৈঠকেই বঙ্গবন্ধু তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং জানতে চান, পাকিস্তানি হানাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বুক মিলিয়ে একত্রে যুদ্ধ করা ভারতীয় সৈন্যরা বাংলাদেশ ত্যাগ করবে কবে? বঙ্গবন্ধুর অদম্য নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই সেদিন ভারতীয় সেনাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ইন্দিরা গান্ধী।

এরপর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুই দিনের সফরে ভারতে যান বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কলকাতায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি আবারো ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ তোলেন এবং তাদের প্রত্যাহারের নির্দিষ্ট তারিখ জানতে চান। বঙ্গবন্ধুর মতো একজন আপাদমস্তক গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী নেতার কথার গুরুত্ব অনুধাবন করতে আর সময় সময় নেননি শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। কিছুক্ষণ ভেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে জানান- ইয়োর এক্সেলেন্সি, ১৭ মার্চের আগেই সর্বশেষ ভারতীয় সেনাটিও বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসবে। এরপর, ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ, ভারতীয় সৈন্যরা বাংলাদেশ থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

বাংলাদেশ স্বাধীনের পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে এবং বঙ্গবন্ধু তাদের প্রত্যাহারের নির্দিষ্ট তারিখ জানতে চাওয়ার মাত্র ২৫ দিনের মাথায় ভারতীয় সেনারা বাংলাদেশ ত্যাগ করে। ঢাকা স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধুকে বিদায়ী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে স্যালুট জানিয়ে ভারতে ফিরে যায় মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা।

শুধু বঙ্গবন্ধুর মতো একজন বিশ্বনেতার পর্বতপ্রমাণ ব্যক্তিত্বের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। এর আগে এবং পরে, বিশ্বের কোনো দেশই তাদের মিত্রবাহিনীর বিদেশি সেনাদের এতো দ্রুত ফেরত পাঠাতে পারেনি।

উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইরাকের বিরুদ্ধে কুয়েতকে সাহায্য করতে সেখানে সৈন্য পাঠায় আমেরিকা, ৩০ বছর পার হলেও তারা কুয়েত ছাড়েনি এখনো। তেমনি আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া সহ সবদেশেই সাহায্য করতে ঢুকেছিল ইঙ্গ-মার্কিন ও রুশ সেনারা। কিন্তু পরবর্তীতে তারা নিজেরাই ঘাঁটি গেড়ে বসে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে মিত্র হিসেবে যোগ দিয়ে, মাত্র তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় সেনাদের বাংলাদেশ ত্যাগ করার ঘটনা ইতিহাসের এক নজিরবিহীন অধ্যায়। শুধু অনন্য কূটনৈতিক দক্ষতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রাখার আগেই তিনি তার দূরদৃষ্টি দিয়ে অনুধাবন করেছিলেন যে, দেশের মাটিতে কোনো বিদেশি সৈন্য থাকবে না। দেশকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হলে নিজেদের মানুষের সাহায্যেই তা করতে হবে এবং তিনি দুর্বার গতিতে সেই কাজ সম্পাদন করেছেন।

তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য দফতরের মহাপরিচালক ও বঙ্গবন্ধুর ভারত সফরের সাক্ষী এম আর আখতার মুকুলের ‘চল্লিশ থেকে একাত্তর’ ও ‘মুজিবের রক্ত লাল’ গ্রন্থে এ বিষয়ে বিষদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

#বঙ্গবন্ধু #ইন্দিরাগান্ধী #মুক্তিযুদ্ধ