হবিগঞ্জ ০২:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo পাল্টে গেলো চুনারুঘাট গোল চত্বরের নাম Logo জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে আমি আবারো আপনাদের মুখে হাসি ফুটাতে চাই-বিএনপি নেতা সৈয়দ মোঃ ফয়সল Logo হবিগজ্ঞ সমিতি সিলেটের চুনারুঘাটের ৩ ইউনিয়নের দরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ Logo চুনারুঘাটে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযানের সময় এসিল্যান্ডের উপর হামলার ঘটনায় কথিত সমন্বয়ক ফরহাদ গ্রেফতার Logo চুনারুঘাটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নয়া কমিটি Logo যৌথ বাহিনীর অভিযান; গাঁজাসহ আটক-৩ Logo চুনারুঘাটে রাতের আধাঁরে সড়কের ১৪টি গাছ কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা Logo মাধবপুরে এস এম ফয়সল মেধাবৃত্তি প্রদান ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা Logo জাহানারা চৌধুরী ইউমেন্স কলেজের নারী শিক্ষা শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo চুনারুঘাট প্রেসক্লাবে ২ সমাজসেবক প্রবাসীর সাথে মতবিনিময় ও সংবর্ধনা

চুনারুঘাটের সফল নারীর গল্প “অপরাজিতার” অপরাজিত পপি

খায়রুন্নাহার পপি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। প্রতিবন্ধি হয়েও ধমে থাকেননি। নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে আর্থিক ও সামাজিক ভাবে স্বাবলম্বী পপি আজ দেশের নারীদের অনুকরণীয়। শত বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পেয়েছেন সরকারি বেসরকারি নানা স্বীকৃতি। প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশের বড় পরিসরের সংগঠনে।
হকিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গাজিগঞ্জ গ্রামের মৃত তাহির মিয়া মহালদারের মেয়ে এবং গাভীগাও গ্রামের সাবেক ব্যাংকার এইচ এম মাসুক এর সহধর্মিনী পপি। বিয়ের পুর্বেই ২০০৩ সালে তিনি এলাকার দরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে, তাদের মূখে হাসি ফুটাতে গড়ে তুলেন “অপরাজিতা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা” নামে একটি এনজিও। প্রথমে তিনি নিজ গ্রামে ও পরে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে দরিদ্রদের নিয়ে কাজ করেন। বর্তমানে জেলার বাইরেও তিনি তার কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। বিয়ের পর স্বামীর সহযোগিতা ও অনুপ্রেরনায় খায়রুন্নাহার পপির কার্যক্রম আরো বিস্তৃতি লাভ করে। তিনি দেশী বিদেশী বিভিন্ন ডোনারের অর্থায়নে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্র মানুষের বিশুদ্ধ পানির যোগান দিতে তাদের জন্য ৭১টি গভীর নলকুপ এবং স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিস্কাসনে ২ হাজার পরিবারে স্যানিটারি ল্যান্ট্রিন এবং ৩০টি দরিদ্র ও প্রতিবন্ধি পরিবারে বিনামুল্যে গাভী প্রদান করেছেন। ২০০৭ সালে কুটির শিল্পের মাধ্যমে প্রথমে ব্লক বাটিকের কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার পরিধি বাড়তে থাকে। বর্তমানে চুনারুঘাট উত্তর বাজারে তার নিজস্ব ভবনে একটি মিনি গার্মেন্টস গড়ে তুলেছেন। সেখানে অর্ধশত দক্ষ ও অদক্ষ নারী শ্রমিক কাজ করছে। তার প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পন্য যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে। শহরের প্রাণকেন্দ্র জাহির সুপার মার্কেটে গড়ে তুলেছেন অপরাজিতা ফ্যাশন নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তিনি নিজেই এটি পরিচালনা করেন। সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হয়েছে।
তিনি ২০০৭ সালে প্রথম বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন থেকে আর্থ সামাজিক অনন্য অবদানের জন্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০১৭ সালে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী কার্যক্রম নারী ক্যাটাগরিতে এবং ২০১৯ সালে সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয় এসএমই মেলাসহ বিভিন্ন মেলায় অংশ নিয়ে পেয়েছেন সম্মাননা। ৬ষ্ঠ জাতীয় এসএমই পন্য মেলায় নতুন উদ্ভাবন ক্যাটাগরিতে পেয়েছেন এমএসই পুরস্কার। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন এর গভর্নিং বড়ির সদস্য ও বাংলাদেশ ওম্যান চেম্বার অব কমার্স এর হবিগঞ্জের সদস্য। সমাজ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সম্মাননা। কাজ করছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাথে।
খায়রুন্নাহার পপি বলেন, স্বামীর অনুপ্রেরনায় এনজিওর পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালায় যুক্ত হন এবং নিজেই তার ব্যবসা পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, প্রথমে মানুষ বিষয়টি ভাল ভাবে না নিলেও এখন মানুষের ভালবাসা ও সহযোগিতা পান। তিনি বলেন, নারীদের সংসারের কাজের পাশাপাশি সকল কাজে সম্পৃক্ত করা গেলে পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আসবে এবং সমাজ পরিবর্তন হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে স্বাবলম্বী না হলে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, আমি চাই, নারীদের গড়ে বসে থাকলে হবে না, তাদেরকে লেখাপড়া করে চাকুরির পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হয়ে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করুক। তবেই সমাজ পরিবর্তন হবে, হবে নারীর ক্ষমতায়ন। সফল এই নারী ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

খন্দকার আলাউদ্দিন

হ্যালো, আমি খন্দকার আলাউদ্দিন, আপনাদের চারিপাশের সংবাদ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।
জনপ্রিয় সংবাদ

পাল্টে গেলো চুনারুঘাট গোল চত্বরের নাম

চুনারুঘাটের সফল নারীর গল্প “অপরাজিতার” অপরাজিত পপি

আপডেট সময় ১১:০২:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ মার্চ ২০২২

খায়রুন্নাহার পপি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। প্রতিবন্ধি হয়েও ধমে থাকেননি। নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে আর্থিক ও সামাজিক ভাবে স্বাবলম্বী পপি আজ দেশের নারীদের অনুকরণীয়। শত বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পেয়েছেন সরকারি বেসরকারি নানা স্বীকৃতি। প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশের বড় পরিসরের সংগঠনে।
হকিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গাজিগঞ্জ গ্রামের মৃত তাহির মিয়া মহালদারের মেয়ে এবং গাভীগাও গ্রামের সাবেক ব্যাংকার এইচ এম মাসুক এর সহধর্মিনী পপি। বিয়ের পুর্বেই ২০০৩ সালে তিনি এলাকার দরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে, তাদের মূখে হাসি ফুটাতে গড়ে তুলেন “অপরাজিতা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা” নামে একটি এনজিও। প্রথমে তিনি নিজ গ্রামে ও পরে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে দরিদ্রদের নিয়ে কাজ করেন। বর্তমানে জেলার বাইরেও তিনি তার কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। বিয়ের পর স্বামীর সহযোগিতা ও অনুপ্রেরনায় খায়রুন্নাহার পপির কার্যক্রম আরো বিস্তৃতি লাভ করে। তিনি দেশী বিদেশী বিভিন্ন ডোনারের অর্থায়নে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্র মানুষের বিশুদ্ধ পানির যোগান দিতে তাদের জন্য ৭১টি গভীর নলকুপ এবং স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিস্কাসনে ২ হাজার পরিবারে স্যানিটারি ল্যান্ট্রিন এবং ৩০টি দরিদ্র ও প্রতিবন্ধি পরিবারে বিনামুল্যে গাভী প্রদান করেছেন। ২০০৭ সালে কুটির শিল্পের মাধ্যমে প্রথমে ব্লক বাটিকের কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার পরিধি বাড়তে থাকে। বর্তমানে চুনারুঘাট উত্তর বাজারে তার নিজস্ব ভবনে একটি মিনি গার্মেন্টস গড়ে তুলেছেন। সেখানে অর্ধশত দক্ষ ও অদক্ষ নারী শ্রমিক কাজ করছে। তার প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পন্য যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে। শহরের প্রাণকেন্দ্র জাহির সুপার মার্কেটে গড়ে তুলেছেন অপরাজিতা ফ্যাশন নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তিনি নিজেই এটি পরিচালনা করেন। সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হয়েছে।
তিনি ২০০৭ সালে প্রথম বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন থেকে আর্থ সামাজিক অনন্য অবদানের জন্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০১৭ সালে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী কার্যক্রম নারী ক্যাটাগরিতে এবং ২০১৯ সালে সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয় এসএমই মেলাসহ বিভিন্ন মেলায় অংশ নিয়ে পেয়েছেন সম্মাননা। ৬ষ্ঠ জাতীয় এসএমই পন্য মেলায় নতুন উদ্ভাবন ক্যাটাগরিতে পেয়েছেন এমএসই পুরস্কার। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন এর গভর্নিং বড়ির সদস্য ও বাংলাদেশ ওম্যান চেম্বার অব কমার্স এর হবিগঞ্জের সদস্য। সমাজ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সম্মাননা। কাজ করছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাথে।
খায়রুন্নাহার পপি বলেন, স্বামীর অনুপ্রেরনায় এনজিওর পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালায় যুক্ত হন এবং নিজেই তার ব্যবসা পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, প্রথমে মানুষ বিষয়টি ভাল ভাবে না নিলেও এখন মানুষের ভালবাসা ও সহযোগিতা পান। তিনি বলেন, নারীদের সংসারের কাজের পাশাপাশি সকল কাজে সম্পৃক্ত করা গেলে পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আসবে এবং সমাজ পরিবর্তন হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে স্বাবলম্বী না হলে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, আমি চাই, নারীদের গড়ে বসে থাকলে হবে না, তাদেরকে লেখাপড়া করে চাকুরির পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হয়ে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করুক। তবেই সমাজ পরিবর্তন হবে, হবে নারীর ক্ষমতায়ন। সফল এই নারী ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক।