চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশি ইউনিয়নের পরাঝাড় গ্রামের বাসিন্দা ও বর্তমান ইউপি সদস্য জামাল মিয়া মানব পাচার কাজে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সে দীর্ঘদিন ধরে এলাকার কয়েকজনের সহযোগিতা ও এজেন্সির মাধ্যমে এলাকার নারী-পুরুষদের ভুল বুঝিয়ে ও মোটা অংকের বেতনের লোভ দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে নারী পাচার করে আসছে।
এ বিষয়ে জামাল মিয়াসহ তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ বিজ্ঞ মানব পাচার দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে একটি মামলাও রয়েছে। অন্যদিকে এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বারও তার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ রয়েছেন।
অভিযোগ সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার লেঞ্জাপাড়া গ্রামের নানু মিয়াকে ভুল বুঝিয়ে এবং মোটা অংকের বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে তার স্ত্রী রাহেলা খাতুনকে সৌদি আরব পাঠায় জামাল মিয়াসহ তার সহযোগিরা। সেখানে পৌছার পর রাহেল খাতুনের তার স্বামী ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এ ঘটনায় নানু মিয়া বাদী হয়ে মানব পাচারের অভিযোগ এনে গেল বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারী হবিগঞ্জ বিজ্ঞ মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় চুনারুঘাট উপজেলার পরচঝাড় গ্রামের আব্দুছ ছামাদের ছেলে বর্তমান ইউপি মেম্বার জামাল মিয়া ও তার সহযোগি একই উপজেলার ময়নাবাদ গ্রামের সুন্দর আলী মেম্বারের ছেলে মোঃ মদ্রিছ মিয়া মুছদধর ও ঢাকার শান্তিনগর এলাকার সলভিয়া ট্যুরস এন্ড ট্রাভেল্স এর স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ শামীম শেখকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, তার বাড়িতে আসা যাওয়ার সুবাধে আসামী জামাল মিয়া ও তার সহযোগি মোঃ মদ্রিছ মিয়া মুছদধরের সাথে পরিচয় হয়।
এক পর্যায়ে ২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে বিভিন্নভাবে তার আর্থিক অসচ্ছলতার সুযোগে মাত্র ৭০ হাজার টাকা খরচে তার স্ত্রী রাহেলা খাতুনকে বাচ্চা দেখাশুনার কাজের জন্য ঢাকার শান্তিনগর এলাকার সলভিয়া ট্যুরস এন্ড ট্রাভেল্স এর স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ শামীম শেখের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠানোর প্রস্তাব দেয়।
এতে নানু মিয়া ও তার স্ত্রী সরল বিশ্বাসে রাজী হয়ে যান।পরে তারা সেপ্টেম্বর মাসে ওই ট্রাভেল্স এর মাধ্যমে ওয়াকপারমিটের ভিসা এবং টিকেট দেখাইলে নানু মিয়া তাদেরকে ৭০ হাজার টাকা প্রদান করেন। পরে তারা তার স্ত্রী রাহেলা খাতুনকে সৌদি আরবে পাঠায়।
পরে রাহেলা খাতুন সেখানে পৌছার পর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে ২০২৩ সালের ৭ জুলাই রাহেলা খাতুন তার স্বামীকে ফোন করে জানায় দালাল তাকে অন্য দালানের নিকট বিক্রি করেছে এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজে লিপ্ত করাইতে বাধ্য করছে। পরে
নানু মিয়াকে তার স্ত্রীকে দেশে জামাল মিয়াকে চাপ দিলে সে ১ লাখ টাকা দাবী করে। এতে তার ধারণা হয় আসামীরা তার স্ত্রীকে দালালের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এতে তিনি তার স্ত্রী দ্রুত উদ্ধার ও আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবী জানিয়ে মানব পাচার দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এছাড়া চুনারুঘাট পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিজ চালক শফিক মিয়ার ছেলেকে প্রলোভন দিয়ে বিদেশ পাঠিয়ে বিভিন্ন সময় শফিক মিয়ার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে শফিক মিয়ার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছে পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার সালিশ বৈঠক হলেও জামাল মিয়া টাকা ফেরত না দিয়ে টালবাহানা করছে। এতে চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরসহ অনেকেই তার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ রয়েছেন।
আব্দুল মালেক হাফিজ জানান, জামাল মিয়া নারী-পুরুষদের বাহিরে পাঠায়। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের শফিক মিয়ার ছেলেকে বাহিরে পাঠিয়ে অনেক টাকা নিয়েছে।
বর্তমানে শফিক মিয়া পথে বসেছেন। কয়েকবার সালিশ- বিচারে রায় হলেও সে টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এ বিষয়টি চেয়ারম্যান- কাউন্সিলরসহ অনেকই অবগত’।
অভিযুক্ত ইউপি মেম্বার জামাল মিয়া জানান, ‘অভিযোগ গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। শফিক মিয়ার ছেলের বিষয়টি সমাধান হয়েছে। আর শায়েস্তাগঞ্জের নানু মিয়ার স্ত্রীর বিষয়টি আদালতে যে রায় দিবে আমি মেনে নেব।