চুনারুঘাট উপজেলায় প্রায় ৪ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস। এ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে চারটি ইউনিয়নের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ সদরের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করছে এই সেতুর (বেইলি ব্রিজ) মাধ্যম। আর উপজেলাকে পূর্ব-পশ্চিমে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে জেলার সবচেয়ে বড় নদ খোয়াই। বেইলি ব্রিজটি নদীর উপরে স্থাপিত অনেক দিন আগের । সেতুটি প্রশস্ত কম হওয়ায় প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়তে হয় সেতু পারাপার হওয়া মানুষদের। বর্তমানে সেতুটি অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পারাপারের জন্য যানবাহন উঠলেই কেঁপে ওঠে সেতুটি। সেতুর জীবনকাল শেষ হয়ে গেলেও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়, ভালোভাবে সংস্কার করলে আরও দীর্ঘদিন এই সেতু দিয়ে চলাচল করা যাবে। খোয়াই সেতু দিয়ে উপজেলার সাটিয়াজুড়ী, রাণীগাঁও, মিরাশী ও গাজীপুর ইউনিয়নের মানুষকে উপজেলা সদরে আসতে হয়।
এছাড়া মীরপুর নতুনবাজার-রেমা সড়ক দিয়ে সিলেট, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল থেকে চুনারুঘাট সদরে যাতায়াত করার ক্ষেত্রেও সেতুটি ব্যবহার করতে হয়। যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ সেতু হিসেবে বিবেচিত হয় এটি।
সরেজমিনে চুনারুঘাট খোয়াই সেতুতে দেখা যায়, উপজেলা সদরে প্রায় আধা কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত সেতুটি সময়ের ব্যবধানে বেশ নড়বড়ে অবস্থায়। কোনো ভারি যানবাহন খোয়াই সেতু দিয়ে চলাচল করলে সেতুটি কেঁপে ওঠে। সেতু উপরের অংশের স্টিলের পাটাতনগুলোর অনেক অংশ ভেঙে গেছে। সেগুলো জোড়াতালি ও ঝালাই দিয়ে কোনো রকমে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। প্রায়ই এ সেতুতে ঘটছে দুর্ঘটনা।
এদিকে প্রশস্ত কম হওয়ায় বড় যানবাহন সেতুতে উঠলে দুপাশে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। একদিকে ঝুঁকি, অপরদিকে যানজট। এ অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে আছেন উপজেলার খোয়াই নদের দুপারের লাখ লাখ মানুষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন ঠিকাদার বলেন, খোয়াই নদের উপর আশির দশকে এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। অনেক আগেই সেতুর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচলকারী অটোরিকশাচালক আকবর আলী বলেন, খোয়াই সেতু দিয়ে পারাপারের সময় যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়।
মাইক্রোবাসচালক রুমেল মিয়া বলেন, এ সেতুর উপর গাড়ি নিয়ে উঠলে সেতু কেঁপে ওঠে। আল্লাহ আল্লাহ বলে সেতু পার হই। কারণ কখন যে পাটাতন দেবে গাড়ি নদে পড়ে কে জানে।
চুনারুঘাট বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ইয়াকুত মিয়া বলেন, সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন চলে। সেতুটি অতি পুরনো হওয়ায় সেতুর অনেক স্থান দেবে গেছে। এছাড়া সেতুর প্রশস্ততা কম হওয়ায় একসঙ্গে দুই দিক দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। সৃষ্টি হয় যানজটের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকতে হয়। বিশেষ করে মুর্মূষু রোগী ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ কারণে এ সেতুর পাশে নতুন আরেকটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি করেন এ ব্যবসায়ী।
চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর বলেন, এ সেতুর পাশে নতুন আরেকটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে। সেতু নির্মাণের জরিপ কাজ চলছে। আশা করি পাকা সেতু নির্মাণ হলে মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।