হবিগঞ্জ ০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ জুলাই ২০২৪, ৬ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo সৎ প্রশাসকদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা কোথায়? Logo চুনারুঘাটে ৩৯ বছরের বর্ণাঢ্য শিক্ষকতা পেশার অরবিন্দ দত্তের সমাপ্তি Logo ব্যারিস্টার সুমন এমপিকে সংবর্ধনা দিল চুনারুঘাট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি Logo চুনারুঘাটে ১৭ কেজি গাঁজা সহ কারবারি গ্রেপ্তার Logo ৪র্থ বারের মতো জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন চুনারুঘাট থানার এসআই লিটন রায় Logo ব্যারিস্টার সুমনকে হত্যার পরিকল্পনাকারী সোহাগ গ্রেফতার Logo ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় হত্যা মামলার আসামি জালাল গ্রেপ্তার Logo ব্যারিস্টার সুমনকে হত্যার পরিকল্পনার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন Logo চুনারুঘাটে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হলেন তৌফিক মিয়া তালুকদার Logo ব্যারিস্টার সুমনের হত্যার পরিকল্পনারকারীদের গ্রেফতারে দাবীতে চুনারুঘাটে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ 

মফস্বল সাংবাদিকতার একাল সেকাল, সাংবাদিক রুকন উদ্দিন লস্কর

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০২:২০:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মার্চ ২০২২
  • ২২৭ বার পড়া হয়েছে

রুকন উদ্দিন লস্কন, মাধবপুরঃ 

আমার যখন সাংবাদিকতা শুরু, তখন হাতে গুনা কয়েক সংবাদকর্মী ছিল মাধবপুর।প্রতিয়োগিতা ছিল।পোস্ট  অফিসের মাধ্যমে এক টাকা দিয়ে বুক পোষ্টে নিউজ পাঠাতাম।৪/৫দিন পর নিউজ ছাপা হত। এক পত্রিকার প্রতিনিধির সাথে আরেক জনের দেখা হত মাসে দু’একদিন।নিজের মত করে সংবাদ লেখতেন।ধার কর্য ছিল না। সৃজনশীল নিউজ তৈরি করতেন। ঘটনা, দুর্ঘটনা, কারেন্ট নিউজ কম হত।সমস্যা সম্ভবনা, অনুসন্ধানী সংবাদ করে ঠিকে থাকতে হত।সংবাদ নিয়ে পাঠকের মধ্যে আলোচনা হত। অনেকে ধন্যবাদ দিয়ে চিঠি পাঠাতেন।খুব মনে পড়ছে শিক্ষক তফাজ্জল হোসেন খোকা স্যারকে। তিনি প্রায় সব পত্রিকার পাঠক ছিলেন ।তিনি মাধবপুরের কোন সংবাদ প্রকাশ হলে যত্ন সহকারে পড়তেন। আমরা যারা তখন সাংবাদিকতা করতাম দেখা হলেই প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে আলোচনা করতেন। গবেষণা করতেন। কোন ক্রটি লক্ষনীয় হলে উপদেশ দিতেন।ভাল জনকল্যাণমূলক সংবাদের প্রশংসা করে উৎসাহ ও সাহস দিতেন। এমন মানুষের এখন খুবই অভার। ছোট কর্মপরিধির মধ্যেও কাজ করে কয়েকবার আমাকে সিলেট বিভাগের সেরা প্রতিনিধির পুরস্কারে ভুষিত করে কর্তপক্ষ।আজকাল আধুনিক যুগে ডিজিটাল সাংবাদিকদের শেখার আগ্রহ নেই।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই এখন সিটিজেন সাংবাদিক।কোন ঘটনা ঘটলেই তারা ফেসইবুকে তা ছড়িয়ে দেয়।এ সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চায়নি কতিপয় সাংবাদিকরা। দিয়ে দেন অনলাইন নিউজ পোর্টালে। নিউজ পাওয়া যায় , নিউজটি সঠিক আছে কি না তা ও যাচাই বাচাই করার ও প্রযোজন মনে করেন না। যে কারণে অনেক সংবাদ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। বিশ্বাস যোগ্যতা হারান। আবার একটি নিউজ হলে কপি করার হিড়িক পড়ে। শিরোনামটা ও পাল্টে দেয় না। অনুসন্ধানী রিপোর্ট কি জানতে চায়না। খবরে পেছনে যে আরেকটা খবর থাকে তা শিখার জানার আগ্রহী না তারা।আমাদের সময় কৌশলে কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দেয়ার পূর্বে অফিসে বসিয়ে নিউজ লেখিয়ে যাচাই করে নিতেন এবং নীতি নৈতিকতা সম্পর্কে যাচাই বাচাই করে নিয়োগ কনফার্ম করতেন। এখন শত শত নিউজ পোর্টাল, যদিও সরকার কিছু পোর্টাল ছাড়া অন্য সব পোর্টালের রেজিষ্ট্রশন, অনুমোদন বিহীন। তাই তাদের প্রতিনিধি নিয়োগের কোন নীতিমালার দরকার নেই।সরকার বলছেন তাদের লাগাম টেনে ধরবেন। কিন্তুু এখন ও তা বাস্তবায় হয়নি।সরকারি নীতিমালার আওতায় না আসায় একটি কম্পিউটার, ও ল্যাপটপ নিয়ে পোর্টালের সম্পাদক ও মালিক বনে যায় রাতা রাতি। জেলা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে বসবাস করে কথিত নিউজ পোর্টালের জেলা প্রতিনিধি। এমনকি বিভাগীয় প্রতিনিধি হয়ে যান। কেউ কেউ ঘুড়েন গলায় একাধিক কার্ড ঝুলিয়ে। পথে ঘাটে হাটে বাজারে পাড়া মহল্লায় তাদের উৎপাত। সাংবাদিকতা এখন হাস্যরসে পরিনত হয়েছে।আর কেউ কেউ নিয়োগ দেয়ার নামে বেকার যুবকদের রাতারাতি সাংবাদিক বানিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে।আর তারা ও হয়ে যাচ্ছে কপি সাংবাদিক।এন্ডয়েট মোবাইল হাতে নিয়ে সারাদিন ডুবে থাকে ধান্দবাজিতে। নিউজ দেখলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে কপি পেস্ট করে নিউজ ছাপিয়ে নিজে সাংবাদিক বনে যান। একারনে ব্যাঙের ছাতার মত সম্বাদিকদের ছড়াছড়ি বাড়ছে।মফস্বল। অনেক ছেলেরা আছেন যারা আমার জানামতে উচ্চ শিক্ষিত, মেধাবী, তারা সাংবাদিকতায় আসুক আমি ব্যক্তিগত ভাবে চাই। আধুনিক এ ছেলেরা আমাদের শূন্যস্থান পূরণ করবে। এ পেশায় যারা পরিশ্রমিই, ত্যাগী ও বৃত্তশালী তাদেরই মানায়। দরিদ্র পরিবারের ছেলেদের আমাদের মফস্বল সাংবাদিকতায় আসা মানে নিজের ভবিষ্যতকে অন্ধকার ডেকে আনা। কারণ মফস্বল সাংবাদিকতা মানে নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানোর মত। দেশের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক ও কয়েকটি পোর্টাল প্রতিনিধিদের সম্মানী দেন। তাদিয়ে চা পানের খরচ হয়।সংসার চালানো যায় না। মফস্বল সাংবাদিকতা করতে হলে পারিবারিক আর্থিক সচ্ছলতার প্রয়োজন।

এ পেশায় ঠিকে থাকা আর যুদ্ধ করা সমান। নীতি নৈতিকতা মেনে পেশাগত দায়িত্ব পালন করলেও অনেক বদনামে কালিমা গায়ে লাগে।এপেশায় নিজেদের মধ্যেও স্নায়ুযুব্ধ চলে। তা হবেই।
এর মধ্যে মহান এপেশায় নিয়োজিত হতে পেরে জীবনে প্ররন্ত বিকেলে এসেও গর্ববোধ করি। আমি সাংবাদিকতা কে ভালবাসি।

লেখকঃ  সিনিয়র সাংবাদিক রুকন উদ্দিন লস্কর,

মাধবপুর, হবিগঞ্জ।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

খন্দকার আলাউদ্দিন

হ্যালো, আমি খন্দকার আলাউদ্দিন, আপনাদের চারিপাশের সংবাদ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।
জনপ্রিয় সংবাদ

সৎ প্রশাসকদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা কোথায়?

মফস্বল সাংবাদিকতার একাল সেকাল, সাংবাদিক রুকন উদ্দিন লস্কর

আপডেট সময় ০২:২০:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মার্চ ২০২২

রুকন উদ্দিন লস্কন, মাধবপুরঃ 

আমার যখন সাংবাদিকতা শুরু, তখন হাতে গুনা কয়েক সংবাদকর্মী ছিল মাধবপুর।প্রতিয়োগিতা ছিল।পোস্ট  অফিসের মাধ্যমে এক টাকা দিয়ে বুক পোষ্টে নিউজ পাঠাতাম।৪/৫দিন পর নিউজ ছাপা হত। এক পত্রিকার প্রতিনিধির সাথে আরেক জনের দেখা হত মাসে দু’একদিন।নিজের মত করে সংবাদ লেখতেন।ধার কর্য ছিল না। সৃজনশীল নিউজ তৈরি করতেন। ঘটনা, দুর্ঘটনা, কারেন্ট নিউজ কম হত।সমস্যা সম্ভবনা, অনুসন্ধানী সংবাদ করে ঠিকে থাকতে হত।সংবাদ নিয়ে পাঠকের মধ্যে আলোচনা হত। অনেকে ধন্যবাদ দিয়ে চিঠি পাঠাতেন।খুব মনে পড়ছে শিক্ষক তফাজ্জল হোসেন খোকা স্যারকে। তিনি প্রায় সব পত্রিকার পাঠক ছিলেন ।তিনি মাধবপুরের কোন সংবাদ প্রকাশ হলে যত্ন সহকারে পড়তেন। আমরা যারা তখন সাংবাদিকতা করতাম দেখা হলেই প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে আলোচনা করতেন। গবেষণা করতেন। কোন ক্রটি লক্ষনীয় হলে উপদেশ দিতেন।ভাল জনকল্যাণমূলক সংবাদের প্রশংসা করে উৎসাহ ও সাহস দিতেন। এমন মানুষের এখন খুবই অভার। ছোট কর্মপরিধির মধ্যেও কাজ করে কয়েকবার আমাকে সিলেট বিভাগের সেরা প্রতিনিধির পুরস্কারে ভুষিত করে কর্তপক্ষ।আজকাল আধুনিক যুগে ডিজিটাল সাংবাদিকদের শেখার আগ্রহ নেই।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই এখন সিটিজেন সাংবাদিক।কোন ঘটনা ঘটলেই তারা ফেসইবুকে তা ছড়িয়ে দেয়।এ সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চায়নি কতিপয় সাংবাদিকরা। দিয়ে দেন অনলাইন নিউজ পোর্টালে। নিউজ পাওয়া যায় , নিউজটি সঠিক আছে কি না তা ও যাচাই বাচাই করার ও প্রযোজন মনে করেন না। যে কারণে অনেক সংবাদ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। বিশ্বাস যোগ্যতা হারান। আবার একটি নিউজ হলে কপি করার হিড়িক পড়ে। শিরোনামটা ও পাল্টে দেয় না। অনুসন্ধানী রিপোর্ট কি জানতে চায়না। খবরে পেছনে যে আরেকটা খবর থাকে তা শিখার জানার আগ্রহী না তারা।আমাদের সময় কৌশলে কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দেয়ার পূর্বে অফিসে বসিয়ে নিউজ লেখিয়ে যাচাই করে নিতেন এবং নীতি নৈতিকতা সম্পর্কে যাচাই বাচাই করে নিয়োগ কনফার্ম করতেন। এখন শত শত নিউজ পোর্টাল, যদিও সরকার কিছু পোর্টাল ছাড়া অন্য সব পোর্টালের রেজিষ্ট্রশন, অনুমোদন বিহীন। তাই তাদের প্রতিনিধি নিয়োগের কোন নীতিমালার দরকার নেই।সরকার বলছেন তাদের লাগাম টেনে ধরবেন। কিন্তুু এখন ও তা বাস্তবায় হয়নি।সরকারি নীতিমালার আওতায় না আসায় একটি কম্পিউটার, ও ল্যাপটপ নিয়ে পোর্টালের সম্পাদক ও মালিক বনে যায় রাতা রাতি। জেলা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে বসবাস করে কথিত নিউজ পোর্টালের জেলা প্রতিনিধি। এমনকি বিভাগীয় প্রতিনিধি হয়ে যান। কেউ কেউ ঘুড়েন গলায় একাধিক কার্ড ঝুলিয়ে। পথে ঘাটে হাটে বাজারে পাড়া মহল্লায় তাদের উৎপাত। সাংবাদিকতা এখন হাস্যরসে পরিনত হয়েছে।আর কেউ কেউ নিয়োগ দেয়ার নামে বেকার যুবকদের রাতারাতি সাংবাদিক বানিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে।আর তারা ও হয়ে যাচ্ছে কপি সাংবাদিক।এন্ডয়েট মোবাইল হাতে নিয়ে সারাদিন ডুবে থাকে ধান্দবাজিতে। নিউজ দেখলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে কপি পেস্ট করে নিউজ ছাপিয়ে নিজে সাংবাদিক বনে যান। একারনে ব্যাঙের ছাতার মত সম্বাদিকদের ছড়াছড়ি বাড়ছে।মফস্বল। অনেক ছেলেরা আছেন যারা আমার জানামতে উচ্চ শিক্ষিত, মেধাবী, তারা সাংবাদিকতায় আসুক আমি ব্যক্তিগত ভাবে চাই। আধুনিক এ ছেলেরা আমাদের শূন্যস্থান পূরণ করবে। এ পেশায় যারা পরিশ্রমিই, ত্যাগী ও বৃত্তশালী তাদেরই মানায়। দরিদ্র পরিবারের ছেলেদের আমাদের মফস্বল সাংবাদিকতায় আসা মানে নিজের ভবিষ্যতকে অন্ধকার ডেকে আনা। কারণ মফস্বল সাংবাদিকতা মানে নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানোর মত। দেশের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক ও কয়েকটি পোর্টাল প্রতিনিধিদের সম্মানী দেন। তাদিয়ে চা পানের খরচ হয়।সংসার চালানো যায় না। মফস্বল সাংবাদিকতা করতে হলে পারিবারিক আর্থিক সচ্ছলতার প্রয়োজন।

এ পেশায় ঠিকে থাকা আর যুদ্ধ করা সমান। নীতি নৈতিকতা মেনে পেশাগত দায়িত্ব পালন করলেও অনেক বদনামে কালিমা গায়ে লাগে।এপেশায় নিজেদের মধ্যেও স্নায়ুযুব্ধ চলে। তা হবেই।
এর মধ্যে মহান এপেশায় নিয়োজিত হতে পেরে জীবনে প্ররন্ত বিকেলে এসেও গর্ববোধ করি। আমি সাংবাদিকতা কে ভালবাসি।

লেখকঃ  সিনিয়র সাংবাদিক রুকন উদ্দিন লস্কর,

মাধবপুর, হবিগঞ্জ।