সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। আর এই দেড় যুগেও আলোচিত এ হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি।
দফায় দফায় তদন্ত পেছানো, সাক্ষী না আসা, একাধিক মামলা থাকায় আসামিরা ঠিকমতো আদালতে হাজির না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বিচারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এ নিয়ে নিহতের স্বজনদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ওই ঘটনায় নিহত আব্দুর রহিমের মেয়ে ফাতেমা আক্তার চম্পা বলেন, ১৮ বছর ধরে বিচার চাচ্ছি। আর কত বিচার চাইবো। এখন আমরা আর বিচার চাই না। আল্লাহর কাছেই এখন বিচার দেই। এ বিচার আল্লাহই করবেন।
সিদ্দিক আলীর ছেলে কদ্দুছ মিয়া বলেন, আমরা শুধু বিচার চাই। কিন্তু এত বছরেও পাইনি। আর কী বিচার পাব। এখন আমরা আল্লাহর কাছেই বিচার চাই।
শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ১৪ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেও কেন আমার বাবার হত্যার বিচার করেনি তা দেশের মানুষ বুঝতে পারছে। আমরা সব সময়ই বলে আসছি গ্রেনেডের উৎস এবং আসল মদদদাতারা কে তা বের করতে হবে। কিন্তু আমরা বার বার চাইলেও তদন্তে তাদের এ ব্যাপারে কোনো আগ্রহ ছিল না।
তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের বিচার একদিন ঠিকই বাংলাদেশে হবে। তবে সে দিন এখনও আসেনি।
মামলার আইনজীবী সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সরওয়ার আহমেদ আবদাল বলেন, ১৭১ সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হয়েছে। সবার সাক্ষী নেওয়া সম্ভব নয়। অনেকে মারা গেছেন, অনেকের ঠিকানা বদল হয়েছে। তবে আগামী দেড় থেকে ২ বছরের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করা সম্ভব।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। সভা শেষে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় তিনি ও তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুর হুদাসহ পাঁচজন নিহত হন। এতে আহত হন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরসহ ৪৩ জন। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। তিন দফা তদন্ত শেষে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরমধ্যে তিনজনের নাম, ঠিকানা সঠিক না পাওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেন আদালত। বিভিন্ন মামলায় তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হয়। অপর একজন হারিছ চৌধুরী পলাতক থেকে মারা যান। বর্তমানে মামলাটির ২৮ জন আসামি রয়েছেন। এরমধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছ উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অন্য আসামিরা দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছেন।
২০১৫ সালে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। কিন্তু বিভিন্ন সময় আসামি হাজির হলেও সাক্ষী হাজির করা সম্ভব হয়নি। কখনও আবার সাক্ষী হাজির হলেও আসামি আদালতে হাজির না থাকায় সাক্ষী নেওয়া সম্ভব হয়নি।