স্বামী পরিত্যক্তা নাজমা খাতুন বাঁচতে চায়। অর্থের অভাবে জটিল একটি অপারেশন করতে না পারায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর পথে এগোচ্ছে সে। ৩ হাজার ৯০০ টাকা বেতনে একটি কেজি স্কুলের “আয়া” পদে কর্মরত এ ভূমিহীন নারী ভাড়া বাসায় বাস করেন। তার আয়েই ৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র কন্যার শিক্ষা ও প্যারালাইসিস রোগে শয্যাশায়ী মায়ের চিকিৎসা চলে। হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ডুবাঐ গ্রামের মৃত উমর আলীর কন্যা নাজমা খাতুন বর্তমানে উপজেলা সদরে বাস করছেন। কথা হয় সংগ্রামী এ নারীর সাথে। তিনি বলেন, “চাকরি করে যে বেতন পাই তা দিয়ে বাসা ভাড়া পরিশোধের পর এক সপ্তাহ সংসার খরচ চলে না। বাকী দিনগুলোর খরচ চালাতে গিয়ে অসুস্থ শরীরে আমাকে বাসা-বাড়িতে অভারটাইম কাজ করতে হয়। এ ভাবে অনাহারে-অর্ধাহারে আমার তিন সদস্যের পরিবার চলে। এ অবস্থায় আমার ও আমার মায়ের চিকিৎসা এবং মেয়ের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে চেনা-জানা দানশীল ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হই।” তিনি আরো বলেন, “আমার কোন ভাই নেই। এক বোন আছে- সেও দরিদ্র। ১৪/১৫ বছর আগে পারিবারিক কলহের জের ধরে একমাত্র শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে স্বামীর ঘর ছেড়েছিলাম। স্বামী বেচারা এরপর আর কোন দিন আমি ও আমার কন্যার খোঁজ-খবর রাখেনি। শুরুতে আমার মা বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ-কর্ম করে আমাকে ও আমার মেয়েকে লালন-পালন করতেন। গত ৬/৭ বছর আগে আমি কেজি স্কুলে চাকরি নেই। মা-মেয়ে দু’জন রোজগার করেও পরিবারের অভাব দূর করতে পারছিলাম না।” তিনি বলেন, “আমি একটু সহজ-সরল হওয়ায় শেষদিকে আমার মা আমি ও আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি বেশি চিন্তা করতেন। একদিন তিনি মাথাঘুরে ড্রেনে পড়ে যান। উপযুক্ত চিকিৎসা করতে না পারায় ক্রমেই তার পুরো শরীর প্যারালাইসড হয়ে যায়। তিনি শয্যাগত হয়ে পড়েন, এখন আর উঠে বসার ক্ষমতাও রাখেন না।” নাজমা খাতুন বলেন, “বিগত ২০১৯ইং সন থেকে আমি কয়েক দফা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। এক পর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে আমার পিত্তথলিতে পাথর রয়েছে। স্থানীয় লোকজনের আর্থিক সহায়তায় অপারেশনের জন্য সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। কয়েকদিন চিকিৎসার পর আমার শারীরিক গঠনগত কারণে চিকিৎসকগণ আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশনের জন্য রেফার্ড করেন। করোনা মহামারী লকডাউনের মাঝে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে কয়েকদিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেই। চিকিৎসকরা অপারেশনের জন্য পরবর্তীতে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু অর্থাভাবে আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া হয়নি।” তিনি বলেন, “এরপর কদিন অসুস্থ, কদিন সুস্থ এভাবেই চলছিলাম। এখন আর পারছি না। গত ২৬ জুলাই রাতে আমি অসুস্থ হলে আমার নাবালিকা কন্যা বহু কষ্টে আমাকে প্রথমে বাহুবল ও পরে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে আমাকে রেফার্ড করা হয় সিলেট। ৪ আগস্ট পর্যন্ত সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। চিকিৎসকরা অপারেশনের জন্য আগামী ১লা অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু আজ ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমার হাতে সিলেট যাবার গাড়ি ভাড়ার টাকা পর্যন্ত নাই। অপারেশন ও অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসা খরচ কি ভাবে জোগাড় করবো- এ চিন্তায় আমি আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছি।” অসহায় এ নারী বলেন, “আমার নাবালিকা কন্যা ও আমার প্যারালাইসড মায়ের আমি ছাড়া বাঁচার আর কোন অবলম্বন নাই। তাদের মুখে দু’মুটো অন্ন তোলে দেওয়ার জন্য হলেও আমি বাঁচতে চাই।” তিনি বলেন, “আপনারা সাংবাদিক ভাইদের লেখনির মাধ্যমে দানশীল, মানবিক লোকজন সামান্য সাহায্যের হাত বাড়ালে আমার চিকিৎসার পথ প্রসন্ন হবে। আমাকে সাহায্য পাঠাতে- নাজমা খাতুন, হিসাব নং- ০৩৩১১১০০২১৮৯১, ইউনিয়ন ব্যাংক লিঃ, বাহুবল শাখা (২৬৫৩৬০১৩০), হবিগঞ্জ অথবা বিকাশ (পার্সোনাল) ০১৭৪২৮৪৯০৩২।