হবিগঞ্জ ০২:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo আইএফআইসি ব্যাংক এবং শক্তি ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে “হার পাওয়ার” শীর্ষক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালা Logo চুনারুঘাটে দিনে-দুপুরে সাদাবালু চুরির সময় জনতার হাতে আটক-১ Logo বাহুবল নবীগঞ্জের পর এবার চুনারুঘাটে বিএনপির ঝাড়ু মিছিল Logo নির্মাণ শেষের আগেই ২ বার ধসে পড়লো মডেল মসজিদের ছাদ Logo চুনারুঘাটে চুরি হওয়া কাঠ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ Logo জেলার শ্রেষ্ঠ মাদক উদ্ধারকারী অফিসার এসআই রিপটন Logo জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নুর আলম Logo এডভোকেট নজরুল ইসলাম চুনারুঘাট উপজেলার শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত Logo চুনারুঘাটে জমি-জমা নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ১: গ্রেপ্তার ২ Logo চুনারুঘাটে সেপ্টেম্বরে ১ লাখ শিশু-কিশোরকে টাইফয়েড ভ্যাকসিন প্রদানের সিদ্ধান্ত

বাল্লা স্থলবন্দর আধুনিকায়নঃ মামলা জটিলতায় অধিগ্রহনের টাকা পাচ্ছেন না ভূমি মালিকরা

বাল্লা স্থলবন্দর স্থাপনের প্রায় পৌনেশতাব্দী পর আধুনিকায়ন হচ্ছে জেলার একমাত্র স্থলবন্দর (শুল্ক স্টেশন)। এরই মধ্যে ভুমি অধিগ্রহণসহ অবকাঠামো নির্মাণ কাজও এগিয়েছে অনেকদূর। কিন্তু মামলা জটিলতার কারণে এখনও ভুমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ভুমি মালিকরা। ফলে তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে কাগজপত্র ঠিক-ঠাক থাকলে অবশ্যই অধিগ্রহণের টাকা পাবেন প্রকৃত ভুমি মালিকরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৫১ সালে ৪.৩৭ একর
জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় জেলার চুনারুঘাট উপজেলাস্থ বাল্লা স্থলবন্দর। এরপর থেকে এ বন্দর দিয়ে খোয়াই নদীর পানিতে পায়ে হেঁটে ও নৌকাযোগে ভারতের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে আসছে। স্থাপনের প্রায় ৭০ বছর পর স্থলবন্দরটি আধুনিকায়নের (পূর্নাঙ্গ বন্দর) উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে পূর্বের স্থান থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার পশ্চিমে কেদারাকোট নামক স্থানে করা হয় ভুমি অধিগ্রহণ। পাশাপাশি পুরোদমে চলে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। যার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। সম্প্রতি কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনও করেছেন বিমান পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী ও বন্দর কর্মকর্তরা। কিন্তু এখনও ভূমি অধিগ্রহনের টাকা পাননি অনেক ভূমি মালিক।
জানা যায়, ২০১৮ সালে উপজেলার গাজিপুর ইউনিয়নের কেদারাকোট মৌজায় ১৩ একর ভুমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু প্রায় ৩ বছর যাবত অধিগ্রহণের মূল্য পাচ্ছেন না ভুমি মালিকরা। এলাকার কতিপয় ব্যক্তি ওই ভুমির স্বত্ব মালিকানা দাবি করে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা দায়ের করলে সৃষ্টি হয় জটিলতা। এ অবস্থায় ভিটে-মাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ভমি মালিকরা।


বন্দর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করে জানান, অধিগ্রহনে তার জমি পড়েছে। অথচ তিনি এখনও টাকা পাননি। জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে বছরের পর বছর ঘুরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তিনি। আব্দুল কাইয়ুম নামে অপর ব্যক্তি জানান, আমরা অসহায় দরিদ্র মানুষ। বন্দরের জন্য যে মূল্যে জমি বিক্রি করেছি এখন সেই মূল্য দিয়ে অন্যত্র জমি কিনতে পারছি না। তাছাড়া অধিগ্রহণের টাকাও বাকি রয়েছে। বন্দর দেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখলেও আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে।
জমিলা খাতুন ও আছিয়া খাতুন নামে দুই নারী জানান, তাদের ভিটে-মাটি ছেড়ে দিতে হয়েছে বন্দরের জন্য। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ সময়ে সেখানে গড়ে তোলা বিভিন্ন ফলের বাগানও ছাড়তে হয়েছে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলক ভাবে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার কারণে তারা এখনও টাকা পাচ্ছেন না। অতি মানবিক কারণে মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি করার জন্য প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘অধিগ্রহণকৃত ভূমির উপর ১৩/১৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা নিস্পত্তি কিংবা প্রত্যহার না হলে অধিগ্রহণের টাকা বুঝিয়ে দেয়া যাচ্ছেনা। যেকারণে জটিলতা তৈরি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘মানিক মিয়া নামে একজন মালিকের সোয়া ৯ শতক ভূমি নির্ভেজাল ছিল, ফলে তাকে ৫ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।’
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ‘স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ক্ষতিপূরণের সব টাকা জেলা প্রশাসন বরাবরে প্রদান করেছেন। মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে অনেকেই টাকা পাননি। বৈধ কাগজ নিয়ে আসলে সবাইকে টাকা বুঝিয়ে দেয়া হবে।’ বাংলাদেশ বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘বাল্লা স্থল বন্ধরের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে মামলা সংক্রান্ত জটিলতা থাকলেও বন্দরের নির্মাণ কাজ থেমে থাকবে না।’ তিনিও ২০২৩ সালের মধ্যে পুরোদেমে বন্দরটি চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ ও বিমান প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী বন্দর পরিদর্শন কালে ভুমি মালিকরা অভিযোগ করলে তিনি স্থানীয় গাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী কে বিষয়টি যার যায় প্রাপ্য অংশ মুলে মিমাংসা করার দায়ীত্ব প্রদান করেন।
বাল্লা স্থল বন্দর আমদানি-রপ্তানি সমিতির সভাপতি জালাল খান বলেন,বন্দরটি আগামী ২৩ সালের জুন মাসে চালু হলে হবিগঞ্জের সাথে সারাদেশের ব্যবসা বানিজ্য প্রসার গঠবে এবং কর্মসংস্থান হবে।।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

খন্দকার আলাউদ্দিন

হ্যালো, আমি খন্দকার আলাউদ্দিন, আপনাদের চার পাশের সংবাদ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।
জনপ্রিয় সংবাদ

আইএফআইসি ব্যাংক এবং শক্তি ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে “হার পাওয়ার” শীর্ষক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালা

বাল্লা স্থলবন্দর আধুনিকায়নঃ মামলা জটিলতায় অধিগ্রহনের টাকা পাচ্ছেন না ভূমি মালিকরা

আপডেট সময় ১০:১৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ মার্চ ২০২২

বাল্লা স্থলবন্দর স্থাপনের প্রায় পৌনেশতাব্দী পর আধুনিকায়ন হচ্ছে জেলার একমাত্র স্থলবন্দর (শুল্ক স্টেশন)। এরই মধ্যে ভুমি অধিগ্রহণসহ অবকাঠামো নির্মাণ কাজও এগিয়েছে অনেকদূর। কিন্তু মামলা জটিলতার কারণে এখনও ভুমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ভুমি মালিকরা। ফলে তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে কাগজপত্র ঠিক-ঠাক থাকলে অবশ্যই অধিগ্রহণের টাকা পাবেন প্রকৃত ভুমি মালিকরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৫১ সালে ৪.৩৭ একর
জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় জেলার চুনারুঘাট উপজেলাস্থ বাল্লা স্থলবন্দর। এরপর থেকে এ বন্দর দিয়ে খোয়াই নদীর পানিতে পায়ে হেঁটে ও নৌকাযোগে ভারতের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে আসছে। স্থাপনের প্রায় ৭০ বছর পর স্থলবন্দরটি আধুনিকায়নের (পূর্নাঙ্গ বন্দর) উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে পূর্বের স্থান থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার পশ্চিমে কেদারাকোট নামক স্থানে করা হয় ভুমি অধিগ্রহণ। পাশাপাশি পুরোদমে চলে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। যার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। সম্প্রতি কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনও করেছেন বিমান পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী ও বন্দর কর্মকর্তরা। কিন্তু এখনও ভূমি অধিগ্রহনের টাকা পাননি অনেক ভূমি মালিক।
জানা যায়, ২০১৮ সালে উপজেলার গাজিপুর ইউনিয়নের কেদারাকোট মৌজায় ১৩ একর ভুমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু প্রায় ৩ বছর যাবত অধিগ্রহণের মূল্য পাচ্ছেন না ভুমি মালিকরা। এলাকার কতিপয় ব্যক্তি ওই ভুমির স্বত্ব মালিকানা দাবি করে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা দায়ের করলে সৃষ্টি হয় জটিলতা। এ অবস্থায় ভিটে-মাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ভমি মালিকরা।


বন্দর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করে জানান, অধিগ্রহনে তার জমি পড়েছে। অথচ তিনি এখনও টাকা পাননি। জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে বছরের পর বছর ঘুরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তিনি। আব্দুল কাইয়ুম নামে অপর ব্যক্তি জানান, আমরা অসহায় দরিদ্র মানুষ। বন্দরের জন্য যে মূল্যে জমি বিক্রি করেছি এখন সেই মূল্য দিয়ে অন্যত্র জমি কিনতে পারছি না। তাছাড়া অধিগ্রহণের টাকাও বাকি রয়েছে। বন্দর দেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখলেও আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে।
জমিলা খাতুন ও আছিয়া খাতুন নামে দুই নারী জানান, তাদের ভিটে-মাটি ছেড়ে দিতে হয়েছে বন্দরের জন্য। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ সময়ে সেখানে গড়ে তোলা বিভিন্ন ফলের বাগানও ছাড়তে হয়েছে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলক ভাবে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার কারণে তারা এখনও টাকা পাচ্ছেন না। অতি মানবিক কারণে মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি করার জন্য প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘অধিগ্রহণকৃত ভূমির উপর ১৩/১৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা নিস্পত্তি কিংবা প্রত্যহার না হলে অধিগ্রহণের টাকা বুঝিয়ে দেয়া যাচ্ছেনা। যেকারণে জটিলতা তৈরি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘মানিক মিয়া নামে একজন মালিকের সোয়া ৯ শতক ভূমি নির্ভেজাল ছিল, ফলে তাকে ৫ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।’
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ‘স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ক্ষতিপূরণের সব টাকা জেলা প্রশাসন বরাবরে প্রদান করেছেন। মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে অনেকেই টাকা পাননি। বৈধ কাগজ নিয়ে আসলে সবাইকে টাকা বুঝিয়ে দেয়া হবে।’ বাংলাদেশ বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘বাল্লা স্থল বন্ধরের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে মামলা সংক্রান্ত জটিলতা থাকলেও বন্দরের নির্মাণ কাজ থেমে থাকবে না।’ তিনিও ২০২৩ সালের মধ্যে পুরোদেমে বন্দরটি চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ ও বিমান প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী বন্দর পরিদর্শন কালে ভুমি মালিকরা অভিযোগ করলে তিনি স্থানীয় গাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী কে বিষয়টি যার যায় প্রাপ্য অংশ মুলে মিমাংসা করার দায়ীত্ব প্রদান করেন।
বাল্লা স্থল বন্দর আমদানি-রপ্তানি সমিতির সভাপতি জালাল খান বলেন,বন্দরটি আগামী ২৩ সালের জুন মাসে চালু হলে হবিগঞ্জের সাথে সারাদেশের ব্যবসা বানিজ্য প্রসার গঠবে এবং কর্মসংস্থান হবে।।