এসব জমির উৎপাদিত ধানের ওপর নির্ভরশীল কৃষকরা।কিন্তু ভেজাল বীজের কারণে এ বছর ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা দাবি করছেন, মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে জমি বর্গা চাষ করেছিলেন।
বানিয়াচং উপজেলার হাওরে কয়েক হাজার একর জমির ফসল বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দাবি করছেন, ভেজাল বীজের কারণে তাদের জমির অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
জানা গেছে, জেলার বানিয়াচং উপজেলার ইকরাম সুজাতপুর হাওরের বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে বোরো ফসল আবাদ করেছেন হাজারো কৃষক। প্রতি বছর ফলন ভালো হলেও এ বছর অধিকাংশ জমিতে অর্ধেক চারায় ধান গজিয়েছে আর অর্ধেক চারায় গজায়নি। এসব চারায় আর ধান গজানোর কোনো সম্ভাবনাও নেই। তাছাড়া হাওরে বছরে একবারই ধানের চাষ হয়। এসব জমির উৎপাদিত ধানের ওপর নির্ভরশীল কৃষকরা।কিন্তু ভেজাল বীজের কারণে এ বছর ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা দাবি করছেন, মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে জমি বর্গা চাষ করেছিলেন। কিন্তু ধান নষ্ট হওয়ায় এখন পথে বসছেন তারা।কৃষক সায়েদ আলী বলেন, আমি একজন মধ্যবিত্ত কৃষক। নিজের জমির পাশাপাশি মানুষের জমি বর্গা চাষ করি। আমি স্থানীয় ডিলারের মাধ্যমে বীজ সংগ্রহ করে চারা রোপণ করেছিলাম। অন্যান্য এলাকায় জমিতে এখন ধান বের হয়ে পাকার উপক্রম হয়েছে কিন্তু আমাদের জমির ৬০ ভাগ ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
একই গ্রামের কৃষক রহিম মিয়া বলেন, প্রতি বছর কার্তিক মাসে আমরা বাজার থেকে বিভিন্ন জাতের ধানের বীজ ক্রয় করি। পরে চারা করে মাঘ মাসের দিকে জমিতে রোপণ করি। জমিতে সার, পানিসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ দেওয়া হয়েছে। ধান বের হওয়ার সময় দেখা গেছে, জমির অধিকাংশ ধানই বের হয়নি, আবার কিছুটা বের হয়ে ভেঙে গেছে। এ অবস্থা দেখে আমাদের মাথায় হাত। অনেক কৃষক খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
কৃষক সোনা মিয়া বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও আমি মানুষের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছিলাম। কিন্তু এখন ধান নষ্ট হওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছি। যে জমিতে ধান হতো ২২-২৫ মণ, এখন হবে ৮-১০ মণ। এ অবস্থা দেখে কোথায় যাব ভেবে পাচ্ছি না।
স্থানীয় সাব-ডিলার শাহীন মিয়া বলেন, আমি প্রতি বছর স্থানীয়ভাবে বীজ সরবরাহ করে থাকি। কোনো বছর সমস্যা হয়নি। কিন্তু এ বছর সমস্যা হয়েছে। ফলে আমরা কৃষক হারাব। কী কারণে এ ধরনের সমস্যা হয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার ও সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, দুটি এলাকার প্রায় এক হাজার কৃষক জমি চাষ করে ভেজাল বীজের কারণে এখন পথে বসবে। আমরা সাধ্যমতো জমিতে পানির ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু ভেজাল বীজের কারণে জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ডিলারের বিরুদ্ধ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ কৃষকদের ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা কৃষকদের রক্ষা করা কঠিন হবে।
হবিগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের সহকারী উপ-পরিচালক নয়ন মনি সূত্রধর বলেন, বিষয়টি শোনার পর উপজেলা কৃষি অফিসার সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। হাইব্রিড বীজ প্রতি বছরই নতুন করে সংগ্রহ করে চারা রোপণ করতে হয়। কোনো কারণে পুরোনো বীজ রোপণ করলে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। আবার অনেক সময় পানির সমস্যার কারণে এমন হয়।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা লিখিত অভিযোগ করলে সাধ্য অনুযায়ী ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।